মোহর নির্ধারণের পর তালাক দিলে করণীয়
নারীদের তালাক প্রদান করলে স্বামীরা তাদেরকে কি ক্ষতিপূরণ দিবে তা কুরআনে নির্ধারণ করা হয়েছে। এমন অনেক নারী রয়েছে যাদের বিয়ে হয়েছে এবং বিয়ের মোহরও নির্ধারিত করা হয়েছে। কিন্তু তারা স্বামীর সঙ্গে সংসার করেনি বা স্বামী তাদের স্পর্শ করেনি।
এমতাবস্থায় স্বামী যদি ওই সব নারীকে তালাক প্রদান করে তবে এসব ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী করণীয় কী। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে সুস্পষ্ট বর্ণনা তুলে ধরেছেন-
আয়াতের অনুবাদ
আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ
সুরা বাকারার ২৩৭ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ওই সব নারীদের সম্পর্কে বিধান জারি করেছেন, ‘যাদের বিয়ে হয়েছে এবং মোহরও নির্ধারণ করা হয়েছে কিন্তু স্বামী তাকে স্পর্শ করেনি। এ সব ক্ষেত্রে মোহরের ফয়সালা কি হবে আলোচ্য আয়াতে তা স্পষ্ট করা হয়েছে।
আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে
যদি বিয়ের সময় স্ত্রীর মোহর নির্ধারিত হয় কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মিলনের আগেই স্ত্রীকে তালাক প্রদান করা হয় তবে স্বামীকে নির্ধারিত মোহরের অর্ধেক আদায় করতে হবে। কিন্তু যদি স্ত্রী মাফ করে দেয় তবে স্বামীকে কিছুই দিতে হবে না।
মোহর মাফ করে দেয়া প্রসঙ্গ
কুরআনে এসেছে- যদি স্বামী-স্ত্রী বা বিয়ে বন্ধনের ভাঙ্গা গড়ার দায়িত্ব যাদের প্রতি অর্পিত তারা যদি মাফ করে দেয়; তবে এ দাবি মাফ হতে পারে।
স্ত্রীদের মাফ করার অর্থ হলো তার প্রাপ্য অর্ধেক মোহরও মাফ করে দেয়া। আর পুরুষদের মাফ করার তাৎপর্য হলো স্বামী নির্ধারিত মোহরের অর্ধেক না কেটে পূর্ণ মোহর আদায় করে দেয়া। অথবা স্বামী যদি বিয়ের পর মোহর আদায় করে থাকে তবে তালাকের পর অর্ধেক ফেরত না নেয়া।
আল্লামা ওসমানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘পুরুষের পক্ষেই এমন উন্নত আদর্শ পেশ করা অধিকতর শ্রেয়। আল্লাহ তাআলা নারী জাতির ওপর পুরুষদের ফজিলত ও মর্যাদা দান করেছেন, অতএব পুরুষেরই কর্তব্য হলো মোহর ফেরৎ দেয়ার মতো মহৎ কাজ করা।
পক্ষান্তরে স্ত্রীর তরফ থেকে কোনো দোষ হয়নি, সে তার দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত। স্বামী ইচ্ছানুযায়ী স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে, এক্ষেত্রে স্বামীর জন্য প্রদত্ত মোহরের অর্ধেক ফেরৎ না নেয়া তাকওয়া পরহেজগারীর অধিকতর নিকটবর্তী।
পড়ুন- সুরা বাকারার ২৩৬ নং আয়াত-
আয়াতের শেষের দিকে বলা হয়েছে, ‘যদি তোমরা মাফ কর তবে তা হবে পরহেজগারীর নিকটবর্তী। এখানে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে সম্বোধন করা হয়েছে। স্ত্রী যদি তার পাওনা অর্ধেক মোহর স্বামীকে মাফ করে দেয় তা হবে তার জন্য পরহেজগারী।
ঠিক তেমনি স্বামী যদি অর্ধেকের পরিবর্তে স্ত্রীকে পূর্ণ মোহরই আদায় করে দেয়, তাও তার জন্য পরহেজগারীর নিকটবর্তী।
সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে নিজের হক বা অধিকার ছেড়ে দেবে তথা নিজের হক ত্যাগ করে অন্যের হক বা অধিকারকে প্রাধান্য দেবে; সে-ই উত্তম ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণিত হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহ কুরআনের সোনালী বিধানগুলো জানা এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রে জীবনের প্রয়োজনে এ বিধানগুলোর প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম