ওমরা পালন করবেন যেভাবে
ওমরা আদায়ে নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। বছরে ৫টি দিন ব্যতীত সারা বছর ওমরা পালন করা যায়। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হজের কয়েকটি মাস আছে সুবিধিত।’ হজের নির্ধারিত তিনটি মাস হলো শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ।
যারা হজে তামাত্তু এবং হজরে কিরান আদায়ের নিয়তে পবিত্র নগরী মক্কায় গমন করে তাদের জন্য হজের আগে একটি ওমরার নির্দেশ রয়েছে। যা পালন করেছেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর এটিকে হজের প্রশিক্ষণও বলা চলে।
ওমরা করবেন যেভাবে
ওমরা আদায়ে রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু করণীয়। ওমরার জন্য রয়েছে ২টি ফরজ এবং ২টি ওয়াজিব কাজ। ধারাবাহিক ভাবে ওমরার ৪টি কাজ তুলে ধরা হলো-
>> ইহরাম বাঁধা (ফরজ)
মিকাত (ইহরাম বাঁধার স্থান) থেকে হজের মতো ইহরাম বাঁধা। ওমরার জন্য হজের ন্যায় পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে গোসল করা। সুযোগ না থাকলে অজু করা। অতঃপর সেলাইবিহীন দুই কাপড় পরিধান করে ইহরাম বাঁধা এবং ২ রাকাআত নফল নামাজ আদায় করা। অতঃপর ওমরার নিয়ত ‘লাব্বাইক ওমরাতান’ উচ্চারণ করা। অতঃপর তিনবার তালবিয়া পাঠ করা।
বিশেষ করে
যারা বাংলাদেশ থেকে হজের উদ্দেশে মক্কায় যাবেন, তারা বিমানে ওঠার আগেই গোসল/অজু করে ইহরামের পোশাক পরিধান করে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করে বিমানে আরোহন করবেন। বাংলাদেশীদের জন্য ইহরামের নির্ধারিত স্থান অতিক্রম করার সময় বিমান কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে ওমরার নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করতে হবে।
সম্ভব হলে বাংলাদেশ হজক্যাম্প আশকোনা থেকেই ইহরামের নিয়ত এবং তালবিয়া আদায় করে রওয়ানা হতে পারেন। আর বাড়ি থেকে ইহরামের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে রওয়ানা হওয়াই সর্বোত্তম।
অতঃপর তালবিয়া পড়তে পড়তে মসজিদে হারামের বাবুস সালাম দরজা দিয়ে অথবা বাবুল ওমরা ধরে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করা।
আর আগে মদিনায় গেলে ইহরাম বাঁধার কোনো প্রয়োজন নাই। যখন মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশে রওয়ানা হবেন তখন নির্ধারিত মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধতে হবে।
>> তাওয়াফ করা (ফরজ)
ওমরার দ্বিতীয় ফরজ কাজ হলো বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা। হাজরে আসওয়াদের কোনা থেকে শুরু করে ৭ প্রদক্ষিণ ও ৮ ইস্তিলামে এক তাওয়াফ সম্পন্ন করা। তাওয়াফের সময় রমল ও ইজতিবা করা। আর বাকি চক্করগুলো সাধারণভাবে হেঁটে হেঁটে সম্পন্ন করা।
রমল
তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করের সময় পুরুষদের জন্য রমল করা। রমল হলো মুজাহিদের মতো বীর দর্পে দুই কাঁধ ও শরীর দুলিয়ে দুলিয়ে বাইতুল্লাহ প্রদক্ষিণ করা। তবে মহিলাদের জন্য রমল করার বিধান নেই।
ইজতিবা
৭ চক্করেই ইজতিবা করা। ইজতিবা হলো- ইহরামের কাপড় এক মাথা বুকের ওপর থেকে বাম কাঁধের ওপর দিয়ে পেছনে নিয়ে ডান বগলের নিচ দিয়ে ঘুরিয়ে বুকের ওপর দিয়ে অপর মাথাটি বাম কাঁধের ওপর দিয়ে পেছনে ফেলা।
ইস্তিলাম
বাইতুল্লাহ তাওয়াফের সময় প্রত্যেক প্রদক্ষিণের শুরুতে সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন অথবা স্পর্শ করে তাওয়াফ শুরু করা। আর তা সম্ভব না হলে হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে প্রদক্ষিণ শুরু করা। অতঃপর শেষ চক্কর সমাপ্ত করতে হাজরে আসওয়াদে পৌঁছলে পুনরায় হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করা।
মাকামে ইবরাহিমে নামাজ
তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহিমে দু’রাকাআত নফল নামাজ আদায় করা। মহিলারা মসজিদে হারামের নির্ধারিত স্থানে নামাজ আদায় করবে।
ঝমঝমের পানি পান
মাকামে ইবরাহিমে নামাজ আদায় করে মাতআ’ফের শেষ প্রান্তে মসজিদে হারামের সাথে সংরক্ষিত স্থানে স্থাপিত পানির পাম্প থেকে ঝমঝমের পানি পান করা।
>> সাফা-মারওয়ায় সাঈ করা (ওয়াজিব)
সাফা এবং মারওয়া নামক পাহাড়দ্বয়ের মাঝে ৭ বার সাঈ (আসা-যাওয়া) করা। যেহেতু কুরআনে সাফা পাহাড়ের কথা আগে এসেছে তাই সাফা পাহাড় থেকে সাঈ শুরু করতে হবে।
উল্লেখ থাকে যে, ‘উভয় পাহাড়ের মর্ধবর্তী স্থানে সবুজ বাতি দ্বারা চিহ্নিত স্থানে পুরুষরা একটু দ্রুত পায়ে দৌড়ের ভঙ্গিতে অতিক্রম করবে। কারণ এ স্থানে হজরত হাজেরা রাদিয়াল্লাহু আনহা দৌড়ে অতিক্রম করেছিলেন। তবে মহিলারা এ স্থানে দৌড়াবে না।
>> মাথা মুণ্ডন করা (ওয়াজিব)
সাফা এবং মারওয়া পাহাড়দ্বয় সাঈ করার পর মাথার চুল মুণ্ডন করা ফরজ। মাথার চুল মুণ্ডার মাধ্যমেই ওমরা পালনকারীরা ইহরাম থেকে নিজেদেরকে হালাল করবেন।
মনে রাখতে হবে
হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা চলে মাত্র ৫দিন। আর তাহলো জিলহজ মাসের ৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত। এ পাঁচ দিন ব্যতীত সারা বছরই ওমরা আদায় করা যায়। এ পাঁচ দিন ওমরা করা মাকরূহ তাহরিমি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ নিয়মে ওমরা আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর