তালাকপ্রাপ্ত নারীর শিশু সন্তানকে দুধ পান করানোর বিধান
শিশু সন্তানের প্রতি বাবা-মা উভয়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। ইসলাম তা সুস্পষ্ট করে দিয়েছে। স্ত্রীকে তালাক দিলে অথবা স্ত্রী তালাক নিলেই তাদের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় না; বরং যদি তাদের দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তান থাকে তবে সে ক্ষেত্রে তাদের উভয়ের নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হয়।
শিশু সন্তানের প্রতি আল্লাহ তাআলা পিতামাতার চেয়েও বেশি দয়াবান ও কল্যাণকামী। এ কারণেই তিনি নজবাজতককে দুবছর মায়ের বুকের দুধ পান করানো মাতার ওপর ফরজ করে দিয়েছেন। এ দুধ পান করাতে হবে পূর্ণ দু’বছর। কারণ মহান আল্লাহ তাআলা জানেন যে, শিশুর শারীরিক ও মানসিক সব দিক থেকে বিকাশ সাধনে এ সময়টি শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তালাকপ্রাপ্তা নারীর দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে দুধ পান করানো প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ করেন-
আয়াতের অনুবাদ
আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ
সুরা বাকারার ২৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা তালাকপ্রাপ্ত নারীদের শিশু সন্তানের দুধ পান করানো বিষয়ে করণীয় তুলে ধরেছেন। পিতা-মাতা উভয়ের কারো আক্রোশের শিকার যেন না হয় শিশু সন্তান। কেউ যেন কাউকে এ দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তান দিয়ে জিম্মি না করে। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধান বর্ণনা করা হয়েছে এ আয়াতে।
আয়াতের শুরুতেই শিশু সন্তানদেরকে পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করানোকে ফরজ করার বিধান জারি করা হয়েছে। তবে মা যদি অসুস্থ হয় তবে সেক্ষেত্রে এ বিধান রহিত হবে।
অতঃপর আয়াতে বলা হয়েছে, দুধদানকারিনী স্ত্রী যদি তালাকপ্রাপ্ত হয় এবং ইদ্দতকালও পূর্ণ হয় তবে সেক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী সন্তানের পিতাকেই স্ত্রীর খোরাক ও পোশাকসহ যাবতীয় খরচাদি বহন করতে হবে।
একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে-
স্বামীকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে যেমন সন্তানের প্রতি মায়ের অবহেলা উচিত হবে না। তেমনি স্ত্রীকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যেও স্বামীর দ্বারা সন্তানের প্রতি অবহেলা করা সমিচীন নয়। সন্তানের কারণে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি জুলুমের আশ্রয় নেয় অবৈধ ও গোনাহের কাজ। তা উভয়কেই পরিহার করতে হবে। সন্তানকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের কাউকে তার সাধ্যের অতীত কষ্ট দেয়া যাবে না। পিতামাতার কোনো একজন সন্তানের অজুহাতে অপরকে কষ্ট দিতে পারবে না।
যে সন্তানের পিতা দুধ ছাড়ানোর সময়ের পূর্বেই ইন্তেকাল করবে; তখন সন্তানের ও মায়ের যাবতীয় বিষয়াবলী দেখাশুনা করবে সন্তানের উত্তরাধিকারী ব্যক্তি।
স্বামী-স্ত্রী-ওয়ারিশ সবাই যদি একমত হয় যে, সন্তানকে অন্য মহিলার দ্বারা দুধ পান করাবে; বিনিময়ে তাকে পারিশ্রমিক প্রদান করা হবে তাতেও কোনো গোনাহ নেই।
সর্বোপরি এ সব বিষয়ে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে চলার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আয়াতে বলা হয়েছে, জেনে রাখবে- আল্লাহ তাআলা সব খবর রাখেন।
পড়ুন- সুরা বাকারার ২৩২ নং আয়াত
পরিষেশে...
তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর যেমন উচিত সন্তানকে মায়ামমতায় পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করানো তেমনি পিতারও উচিত সন্তানের দায়িত্ব পালনে কুরআনের বিধান অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এমনটি যেন না হয়, সন্তানের কারণে মাতাকে কষ্ট দেয়া আবার তার পিতাকে কষ্ট দেয়া। সন্তানের প্রতি স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা রক্ষায় পরস্পরের প্রতি সুন্দর ও সৌজন্যবোধ সম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। যাতে নবজাতকের কোনো সমস্যা না হয় আবার পিতা-মাতা উভয়ের ব্যক্তিগত কোনো অধিকারও হরণ না হয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব স্বামী-স্ত্রী ও ওয়ারিশদেরকে সন্তানের দুধ পানের ইস্যুতে তাঁর বিধান মেনে নেয়ার তাওফিক দান করুন। এ সব বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করা অত্যন্ত জরুরি। আল্লাহ তাআলা সবাইকে তার বিধান যথাযথ মেনে নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে কুরআনের বিধান বাস্তবায়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর