জেনে নিন আরাফাহ ময়দানের বর্ণনা
আগামী ২৪ জুলাই থেকে হজ ও ওমরাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব মুসলিম পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় যাওয়া শুরু করার কথা। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত তাৎপর্যপূর্ণ স্থান আরাফাতের ময়দানে। হজের আনুষ্ঠানিকতার আগেই জেনে নেই আরাফা ময়দানের খুঁটিনাটি বিষয়-
পবিত্র নগরী মক্কা থেকে ১৩-১৪ কিলোমিটার পূর্বে জাবালে রহমতের পাদদেশে ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত আরাফাতের ময়দান অবস্থিত। এর দৈর্ঘ এবং প্রস্থ যথাক্রমে দুই কিলোমিটার।
ঐতিহাসিক এ ময়দানটি তিন দিকে পাহাড়বেষ্টিত। এ ময়দানের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে রয়েছে মক্কা-হাদাহ-তায়েফ রিং রোড। এ রোডের দক্ষিণ পাশেই আবেদি উপত্যকায় মক্কার ঐতিহাসিক ‘উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়’ অবস্থিত।
উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাতের ময়দানের সীমানাও প্রায় ১ কিলোমিটার। সেখান থেকে দক্ষিণে গিয়ে মসজিদে নামিরায় আরাফাতের ময়দানের সীমানা শেষ হয়েছে।
ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত আরাফাত ময়দান জুড়ে রয়েছে চোখে পড়ার মতো অনেক নিম গাছ। কথিত আছে যে, এ নিম গাছগুলো বাংলাদেশ থেকে নিয়ে রোপন করা হয়েছে। যার তত্ত্ববধানেও রয়েছে বাংলাদেশী শ্রমিক।
এ ঐতিহাসিক ময়দানেই বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলন ও ঐক্যের স্মৃতিস্তম্ভ অবস্থিত। হাজিগণ এ ময়দানে উপস্থিত হয়ে এ স্মৃতিস্তম্ভে চুম্বন করেন এবং মোনাজাত করেন। ইহরামের কাপড়ের শুভ্র বসনে হাজিগণ আল্লাহর দরবারে জীবনের গোনাহ মাফে আত্মনিবেদন করে থাকেন।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আরাফাতের দিনের চেয়ে বেশি আর অন্য কোনো দিনে আল্লাহ তাআলা মানুষকে (জাহান্নামের) আগুন হতে মুক্তি দেন না। এদিন তিনি (বান্দার) নিকটবর্তী হন এবং তাঁর ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করতে থাকেন, এই মানুষগুলো কি চায়? (মুসলিম)
হজরত আদম আলাইহিস সালাম ও হওয়া আলাইহিস সালাম জান্নাত থেকে পৃথিবীতে আসার পর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে তারা একে অপরকে খুঁজতে থাকেন। অবশেষে আল্লাহর রহমতে তাঁরা আরাফাতের এ স্মৃতিবিজড়িত ময়দানেই পরস্পর মিলিত হন।
আল্লাহর কাছে তাদের কৃতকর্মের ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তা আল্লাহর কাছে অত্যধিক পছন্দীয় ছিল বিধায় আল্লাহ তাআলা বিশ্ব মুসলিমের জন্য আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়াকে হজের মূল রুকন হিসেবে কবুল করেন।
তারই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ দুনিয়ার সকল আদম সন্তান সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর হজের উদ্দেশে পবিত্র নগরী মক্কায় ছুটে আসেন।
বাইতুল্লাহ তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া সাঈ’র পর নির্ধারিত তারিখেই আরাফাতের ময়দানে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ করতে একত্রিত হন। সেখানে বিশ্ব মুসলিমের হেদায়েতের মূলমন্ত্র হজের খুতবা পড়া হয়। সে খুতবার দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বের প্রতিটি অঙ্গনে অঙ্গনে।
সমগ্র মুসলিম উম্মাহ পাপমুক্ত জীবন লাভে এ ঐতিহাসিক সম্মিলন প্রান্তরে কান্নাকাটি করেন। চোখের অশ্রুতে বুক ভাসান হজে আগত সব হাজিগণ। তাদের হৃদয় ও মন দিয়ে আল্লাহ তাআলাকে উপলব্দি করার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করেন।
উদ্দেশ্য একটাই-
আল্লাহ তাআলা তাদের সবাইকে নিষ্পাপ মা’ছুম হিসেবে কবুল করবেন। কারণ এ স্থানেই ক্ষমা লাভ করেছিলেন আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম।
আল্লাহ তাআলা হজ ও ওমরায় যাওয়ার নিয়তকারী মুসলিম উম্মাহকে সুস্থ ও সুন্দরভাবে আরাফাতের ময়দানের আনুষ্ঠানিকতা, ইবাদাত-বন্দেগি যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন।
সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার জন্য কবুল করুন।
আরাফাতের ময়দান হয়ে ওঠুক হজ-ওমরা ও জিয়ারতকারীদের জন্য গোনাহ মাফ ও সঠিক পথে দিশা লাভের শেষ ঠিকানা...
এমএমএস/জেআইএম