কুরআনের রঙে জীবন রাঙানোর মাস রমজান
রমজান পবিত্র কুরআনুল কারিম নাজিলের মাস। এ মাসের প্রথম দশকে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার প্রতি অবিরাম ধারায় রহমত বর্ষণ করেন; দ্বিতীয় দশকে বান্দার গোনাহ ক্ষমা করে দেন। আর শেষ দশকে বান্দাকে জাহান্নামের আগুণ থেকে নাজাত দান করেন।
রমজান মাস মুমিন মুসলমানের জন্য হৃদয়ে কুরআনকে লালন পালন করার মাস। কুরআনের অমীয় সুধা পান করে মুমিন তার হৃদয়কে তরতাজা করে তোলে। কুরআনের আহরিত জ্ঞানেই চলে মুমিন মুসলমানের বছরের বাকি ১১ মাস।
রমজান মাস হলো মুমিন মুসলমানের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাস। সর্বশ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণ গ্রন্থ আল-কুরআনুল কারিমের যথাযথ আমল করা সহজ এ রমজান মাসে। কারণ রমজান মাসে মানুষের আত্মা থাকে বিশুদ্ধ।
এ কুরআনে রয়েছে সমগ্র ইনসানিয়াতের মুক্তির কলা-কৌশল। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কী প্রয়োজন? ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্ব তথা মহাবিশ্ব পরিচালনায় কি চাই? সবকিছুর সমাধান রয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে। এই কুরআনের মর্মভেদ বুঝার একমাত্র মোক্ষম সময় হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস।
রমজানের রহমত মাগফেরাত এবং নাজাত কামনায় আল্লাহর নির্দেশ পালন করা জরুরি। রবকতময় মাস রমজানে আল্লাহ তাআলা এ কুরআন নাজিল করে তা বুঝে বুঝে পড়ার তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ উপদেশ গ্রহণ করে। (সুরা সোয়াদ : আয়াত ২৯)
রমজান মাস কুরআনুল কারিমের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর মাস। এ মাসের প্রধান অধিকার হলো মানুষ কুরআনের স্মৃতিচারণ করবে। আর কুরআনের স্মৃতিচারণ মানে হলো কুরআনের গবেষণা।
কুরআনের মর্ম উপলব্ধি করতে, কুরআনি জিন্দেগি গঠন করতে, কুরআলো রঙে নিজেদের জীবন সাজাতে কুরআনের গবেষণার বিকল্প নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস; যে মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে। যা মানবজাতির হেদায়েত ও সুস্পষ্ট পথনির্দেশকারী এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়কারী। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৮৫)
কুরআনকে হৃদয়ে লালন করতে, কুরআনের মর্ম অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে আল্লাহ তাআলা জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেন। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেন। কুমন্ত্রণাদানকারী বিতাড়িত শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখেন। কারণ, মানুষ যাতে জান্নাতি আবহে শয়তানের বেড়াজালমুক্ত হয়ে কুরআনের মর্ম উপলব্ধি করে তা হৃদয়ে লালন করতে পারে।
হাদিসে এসেছে, ‘রমজান মাস এলে জান্নাতের দরজা সমূহ উন্মুক্ত রাখা হয়; জাহান্নামের দ্বারসমূহ রুদ্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের শৃংখলিত করা হয়। (বুখারি ও মুসলিম)
রমজান মাসজুড়ে তারাবিহ নামাজে সম্পূর্ণ কুরআন তেলাওয়াত মুমিন মুসলমানকে কুরআনের মর্ম উপলব্ধির কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম রমজানের প্রতি রাতে এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁকে নিয়ে কুরআন পাঠ করতেন। (বুখারি)
এ পবিত্র গ্রন্থ কুরআনের মর্মার্থ উপলব্ধির জন্যই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদিষ্ট হয়েছিলেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং সে অনুযায়ী আমল করে তার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, সে দুনিয়াতে পথভ্রষ্ট হবে না এবং আখিরাতে দুর্ভাগা-হতভাগাদের অন্তর্ভুক্ত হবে না।’
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুতরাং যে আমার দেয়া হেদায়েতের (কুরআন) অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং দুঃখ কষ্টে পতিত হবে না। (সুরা ত্বাহা : আয়াত ১২৩)
এ কারণেই ইসলামের খলিফাগণ সদা সর্বদা কুরআন অধ্যয়ন করতেন এবং সে অনুযায়ী জীবন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। কুরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা কারণেই খোলাফায়ে রাশেদার যুগ ছিল ইসলামের সোনালী যুগ।
পরিশেষে…
রমজানের রহমত মাগফেরাত ও নাজাত তখনই মানুষের জন্য পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হবে; যখন মানুষ কুরআনকে তাঁর হক অনুযায়ী বুঝে অধ্যয়ন করবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের মর্মার্থ উপলদ্ধির মাধ্যমে রহমত মাগফেরাত ও নাজাত লাভ করার তাওফিক দান করুন। মানবতার সব পর্যায়ে আল-কুরআনের বাস্তব শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি