নামাজ বেহেশতের চাবি
ঈমান লাভের পর ইসলামি শরিয়তের আবশ্যিক ইবাদত ও দ্বীনের মূল ভিত্তি হলো নামাজ। আর বেহেশতে প্রবেশের চাবি হলো নামাজ। এ কারণেই ঈমান লাভের পর মুসলমানের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো নামাজ।
কুরআনুল কারিমের সুরা বাকারার ৪৩নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা নামাজের নির্দেশ দিয়ে ঘোষণা করেন, ‘আর তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা কর; জাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু কর।’ কুরআনের অনেক স্থানেই এ ঘোষণা রয়েছে।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দেন, ‘নামাজ বেহেশতের চাবি।’ তারপরও মানুষ দুনিয়ার ক্ষনস্থায়ী জীবনে চলার পথে অহরহ গোনাহে জড়িয়ে পড়ে; দুনিয়ার সাময়িক মোহ মায়ায়, লোভ লালসা পড়ে একান্ত আপনজন আল্লাহ তাআলাকে এবং তার নির্দেশসমূহে ভুলে থাকে।
মানুষকে দুনিয়ার সব গাফলতি থেকে মুক্ত রাখতেই প্রিয়নবি নামাজকে বেহেশতের চাবি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে রুটিন করে বিধান হিসেবে জারি করেছেন। যারা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো আদায় করবে; ওই ব্যক্তির দ্বারা কোনোভাবেই অন্যায়ের ওপর অটল ও অবিচল থাকার সুযোগ নেই।
কেননা নামাজের সময় কোনো অন্যায়ের কথা স্মরণ হওয়া মাত্রই মানুষ আল্লাহ তাআলার নিকট গাফলতির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আর দৈনন্দিন জীবনে এভাবেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মানুষকে গোনাহ মুক্ত জীবন গড়ার শিক্ষা দেয়।
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের দ্বারা গোনাহমুক্ত জীবন লাভের একটি অনন্য উদাহরণ পেশ করেছেন-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কারও বাড়ির সামনে যদি একটি নদী থাকে; আর ওই নদীতে যদি সে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে; তবে তার শরীরে কী কোনো ময়লা থাকবে?
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ‘না’, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্ত হলো এমন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, ‘দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে মুমিন ব্যক্তি গোনাহ থেকে পাক সাফ হয়ে পাপমুক্ত জীবন লাভ করবে।
মুমিন ব্যক্তির গোনাহ ঝড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে অন্য হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
>> কোনো মুমিন যখন অজুর জন্য মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে চোখের গোনাহ বের হয়ে যায়;
>> যখন দুই হাত ধৌত করে তখন হাত ধোয়ার পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে হাতের গোনাহ বের হয়ে যায়;
>> যখন দুই পা ধৌত করে তখন পা দ্বারাকৃত গোনাহসমূহ পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে বের হয়ে যায়; এমনিভাবে নামাজি ব্যক্তির গোনাহসমূহ অজুর সঙ্গে বের হওয়ার মাধ্যমে সে পবিত্র হয়ে যায়। (মুসলিম, তিরমিজি)
নামাজের মাধ্যমেই বান্দা আল্লাহ তাআলা একান্ত নিকটবর্তী হয়ে যায়। কারণ নামাজই একমাত্র ইবাদত, যে ইবাদতের সময় মানুষ মস্তক দিয়ে আল্লাহ তাআলার কুদরতি পায়ে সিজদা করে এবং আল্লাহ তাআলার একান্ত নিকটবর্তী হয়ে যায়। আর সিজদার মাধ্যমে তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার নির্দেশও আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সিজদা কর আর আল্লাহর নিকটবর্তী হয়ে যাও।’ (সুরা আলাক : আয়াত ১৯)
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দা সিজদার মাধ্যমেই তার মহান প্রতিপালকের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়।’ (মুসলিম ও মুসনাদে আহমদ); কেননা আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য লাভে নামাজই মুমিনের মেরাজ।
সর্বোপরি দুনিয়ার জীবন শেষে পরকালের চিরস্থায়ী জীবন লাভে কিয়মতের দিন আল্লাহ তাআলা বান্দার নিকট থেকে সর্ব প্রথম নামাজের হিসাব গ্রহণ করবেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেয়া হবে। যদি নামাজের হিসাব ভালো হয় তবে তার সব আমলই ভালো হবে। আর যদি নামাজের হিসাব খারাপ হয় তবে তার সব আমলই বরবাদ হয়ে যাবে।’ (তাবরানি ও তারগিব)
পরিশেষে…
নামাজই হলো মানুষের জন্য একমাত্র কল্যাণমূলক ইবাদত। যা মানুষকে দুনিয়া ও পরকালের সব কল্যাণ দান করে। নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা মুমিন ব্যক্তির হৃদয়ের আবেগ অনুভূতি পরীক্ষা করেন। যারা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে; তাদের জন্যই জান্নাত সুনিশ্চিত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যথাযথভাবে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। নামাজের মাধ্যমেই দুনিয়া ও পরকালের সব কল্যাণ দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি