সুস্থ জীবন লাভে যে বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরি
সুস্থতা আল্লাহ তাআলা অশেষ নিয়ামত। দুনিয়ার প্রতিটি কাজই আল্লাহ তাআলার ইবাদত। যদি তা যথাযথ নিয়মে পালন করা হয়। আর দৈনন্দিন জীবনে সুন্দরভাবে প্রতিটি কাজ সম্পাদনের জন্য সুস্থ থাকা জরুরি। তাই সুস্থ থাকতে কুরআন ও হাদিসের অনেক নির্দেশনা রয়েছে।
সুস্থ ও সুন্দর জীবন লাভে ইসলাম কর্তৃক নির্দেশিত বিষয়গুলো মেনে চলা একান্ত কর্তব্য। সংক্ষেপে তার কিছু তুলে ধরা হলো-
>> মানুষের অসুস্থ হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে খাদ্য-পানীয় গ্রহণে বেপরোয়া হওয়া। এ জন্য অতিভোজন ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য থেকে বিরত থাকা জরুরি। হাদিসের এসেছে, ‘পেট সব রোগের কেন্দ্রস্থল।’ তাই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা খাও এবং পান কর; আর অপচয় কর না।’ (সুরা আরাফ)
>> খাবার গ্রহণের সময় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা উত্তম। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্য দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে।’ (ইবনে মাজাহ)
>> খাদ্যদ্রব্য সর্বদা ঢেকে রাখা ও কোনো কিছু পান করার সময় তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। কারণ এতে রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। হাদিসে এসেছে- ‘সাবধান! তোমরা পানিতে ফুঁ দিবে না।’ (তিরমিজি)
>> ইবাদত-বন্দেগি, নামাজ-রোজা ও জিকির-আজকারের দ্বারাও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায়। যাতে মানুষ রোগমুক্ত জীবন লাভ করতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘জেনে রাখ! আল্লাহ তাআলার জিকির দ্বারা অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ)
>> সুস্থ জীবন-যাপনে অলসতা ত্যাগের বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি উৎকণ্ঠা থেকে, মনোকষ্ট থেকে, অলসতা থেকে, কাপুরুষতা থেকে, কৃপণতা থেকে, ঋণগ্রস্ততা থেকে এবং মানুষের কর্তৃত্বাধীন হয়ে যাওয়া থেকে।’ (বুখারি)
>> মানসিক উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতার পরিবর্তে মানসিক ও দৈহিক সুস্থতা রোগমুক্ত থাকার পূর্বশর্ত। কারণ মানসিক প্রশান্তি ও উৎফল্লতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই ইসলাম মনোদৈহিক সুস্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে বৈবাহিক জীবন ব্যবস্থার প্রতি খুব গুরুত্ব দিয়েছে।
>> সুস্থ থাকার জন্য সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ আবশ্যক। পরিবেশ দুষণের মাধ্যমে রোগ-ব্যধি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। তাই পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা জরুরি। হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা বাড়ির আঙ্গিনা সব দিকে থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে। ইহুদিদের অনুকরণ করবে না। তারা বাড়িতে আবর্জনা জমা করে রাখে। (তিরমিজি)
>> সুস্থ জীবন লাভে স্যানেটারি ব্যবস্থার উন্নয়ন করা জরুরি। কারণ যত্রতত্র মল-মূত্র ত্যাগের কারণে রোগ-ব্যাধি অসম্ভবভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আর প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবেশ দূষণকারীদের অভিশপ্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা তিন অভিশপ্ত ব্যক্তি থেকে বেঁচে থাক; যে পানির ঘাটে, রাস্তার ওপর ও গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করে।’ (আবু দাউদ)
এ কারণেই ইসলামের নির্দেশ হলো-
>> খাওয়ার আগে ও পরে উত্তমরূপে উভয় হাত ধৌত করা। কারণ হাতে বিষাক্ত জীবাণু থাকার কারণে রোগ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
>> শরীরকে সুস্থ্য, সবল ও সতেজ রাখার জন্য শারীরিক পরিশ্রম, হাটাহাটি, ব্যায়াম ও সাঁতারের প্রতি উৎসাহিত করা। নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম ও বিশ্রাম সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
>> পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সুন্দর পরিবেশ সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনের অন্যতম উপায়। হাদিসে এসেছে, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।’ পাশাপাশি আল্লাহ তাআলা যেসব জিনিস পানাহার করা বা খাওয়াকে হারাম ঘোষণা করেছেন, তা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক কর্তব্য।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুস্থ জীবন লাভে কুরআন-সুন্নাহর বিধি-নিষেধগুলো যথাযথ পালনের তাওফিক দান করুন। সুস্থ দেহ, সুন্দর মন ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতিটি কাজকে ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস