গোনাহমুক্ত জীবন লাভের ৩ কৌশল
আল্লাহ তাআলা মানুষকে অনেক ভালবেসে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। দুনিয়াতে মানুষকে খেলাফতের মহান দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। এ সবই বান্দার জন্য আল্লাহ তাআলা অফুরন্ত রহমত।
মানুষ যাতে পরকালেও সফলতা লাভ করেন, সে লক্ষ্যে দুনিয়ার সব কর্মকাণ্ডে তাঁকে ভয় করার বিষয়েও কুরআন বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। তাই দুনিয়াতে ৩টি কৌশল গ্রহণ পরকালের কল্যাণময় জীবন লাভ মানুষের জন্য সহজ হবে।
যখন মানুষ কোনো গোনাহের কাজের দিকে ধাবিত হবে। তখন ৩টি কথার স্মরণই মানুষকে গোনাহ থেকে ফিরিয়ে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। আর তা হলো-
>> আল্লাহ তাআলা সব কিছু দেখেন
কুরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি সবকিছু দেখেন এবং শুনেন। কোনো মানুষের মাঝে যখন এ মানসিকতার তৈরি হবে যে, আল্লাহ তাআলা বান্দার সব কৃতকর্ম দেখতে পান; তবে ওই বান্দার দ্বারা কখনো গোনাহের কাজ করা সম্ভব নয়।
>> ফেরেশতারা সব কিছু লেখেন
মানুষ দুনিয়াতে যে কাজই করে, তা লিখে রাখার জন্য আল্লাহ তাআলা তত্ত্ববধায়ক নিযুক্ত করে রেখেছেন। কর্ম অনুযায়ী মানুষকে প্রতিদান দেয়া হবে। আর দুনিয়ার সব কর্মকাণ্ডের হিসাব গ্রহণের কথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। গোনাহমুক্ত জীবন-যাপনে মানুষকে তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন-
হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল? যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন। যিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামত আকৃতিতে গঠন করেছেন। কখনও বিভ্রান্ত হয়ো না; বরং তোমরা দান-প্রতিদানকে মিথ্যা মনে কর। অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা কর। (সুরা আল-ইনফিতার : আয়াত ৬-১২)
>> হাশরের ময়দানে দুনিয়ার সব কর্মকাণ্ডের হিসাব দিতে হবে
দুনিয়ার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে প্রত্যেক মানুষকেই হাশরের ময়দানে হিসাব দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা বান্দার সব কাজের হিসাব গ্রহণ করবেন। হিসাব গ্রহণের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন-
‘আমি প্রত্যেক মানুষের কর্মকে তার গ্রীবলগ্ন করে রেখেছি। কেয়ামতের দিন বের করে দেখাব তাকে একটি কিতাব, যা সে খোলা অবস্থায় পাবে। (সে দিন বলা হবে) তুমি পাঠ কর, তোমার কিতাব। আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্যে তুমিই যথেষ্ট। (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ১৩-১৪)
হিসাব গ্রহণের ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আবু বারযা আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দার দুটি পা ততক্ষণ পর্যন্ত নড়াতে পারবে না; যতক্ষণ না তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তোমার জিন্দিগি কোথায় ব্যয় করেছ? জ্ঞানানুসারে কি আমল করেছ? সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছ আর কিসে খরচ করেছ এবং তোমার শরীরকে কী কাজে নিঃশেষ করেছ?’ (তিরমিজি, দারেমি)
পরিশেষে...
গোনাহমুক্ত জীবন লাভে উল্লেখিত তিনটি কৌশল পরিপূর্ণ হক আদায় করে তা পালন করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ আল্লাহ তাআলা বান্দার কর্ম সম্পাদন দেখেন, ফেরেশতারা তা কিতাব আকারে লিখে রাখেন এবং পরকালে ফেরেশতাদের লিখিত বিষয়াবলী ওই ব্যক্তিকেই পাঠ করতে হবে।
সে দিন যারা তাদের কর্মকাণ্ডকে অস্বীকার করবে, তাদের মুখ সিলগালা করে দেয়া হবে। সে দিন যে অঙ্গ দিয়ে যে সব কর্ম সম্পাদন করা হয়েছে। সে সব অঙ্গ তার সাক্ষী দিবে। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টিও মানুষকে জানিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব; তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।’ (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ৬৫)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গোনাহ মুক্ত জীবন যাপনে কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশ পালন করার তাওফিক দান করুন। উল্লেখিত তিন কৌশল গ্রহণ করে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস