সফলতা লাভে ত্যাগের বিকল্প নেই
দুনিয়াতে উত্তম জিনিস প্রাপ্তিতে, সুখ-শান্তি, সুযোগ-সুবিধা ও ভালো ফলাফল লাভ করতে হলে যেমন ত্যাগ, তিতিক্ষা ও পরিশ্রম করতে হয়। ঠিক তেমনি পরকালের মুক্তিতেও দুনিয়া অনেক ত্যাগ, পরিশ্রম আবশ্যক।
আর ইসলাম মানুষের মাঝে শান্তি ও মুক্তির বারতা নিয়েই উপস্থিত হয়েছে। যদিও আজকের দিনে ইসলামকে এ অবস্থায় পেতে আল্লাহর অনেক বান্দা তাদের জীবন কুরবান করেছেন। দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিয়ে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগ ও পরকালের মুক্তির কথা আসলে ইসলামের প্রথম যুগের নির্যাতিত সাহাবায়ে কেরামদের কথা মনে পড়ে যায়। যারা নিজেদের জীবনের বিনিময় ইসলামকে বিজয়ী করতে কখনো পিছপা হননি। তাদেরই একজন হজরত খাব্বাব রাদিয়াল্লাহু আনহু। ইসলামের জন্য তাঁর ওপর বয়ে গেছে চরম জুলুম ও অত্যাচার।
খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহ আনহু ও হজরত খাব্বাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর মধ্যে কথা-বার্তা চলছিল। পরকালের মুক্তির বিষয়ে তাদের দুনিয়ার জীবনের কর্মকাণ্ড যথেষ্ট ছিল কিনা। এ বিষয়ে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু অনেক ভীত ছিলেন।
হজরত খাব্বাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলামের জন্য তাঁর ত্যাগের কিছু বিষয় তুলে ধরে বলেন, ‘খলিফাতুল মুসলিমিন, হে ওমর! আমি জানি না আমি আল্লাহ তাআলার নিকট নাজাত পাব কিনা তবে, ইসলামের জন্য আমার কিছু ত্যাগের বিষয় আপনার সামনে পেশ করছি-
তিনি তাঁর জিহ্বাটা বের করলেন। জিহ্বার মধ্যে টিউমার আকৃতির একটা গোশতের টুকরা দেখা গেল। তিনি বললেন, হে আমিরুল মুমিনিন! এটা কোনো অসুস্থতা নয়। বরং এটা হলো ইসলাম গ্রহণের কারণে নির্যাতনের চিহ্ন।
ইসলাম গ্রহণ করার পর মুশরিকরা আমার জিহ্বায় খেজুর গাছের কাটা দিয়ে জিহ্বার মধ্যে বার বার আঘাত করেছিল। যার ফলে জিহ্বার এ অবস্থা হয়েছে। তারা আমাকে নির্যাতন করেছিল আর বলেছিল, হে খাব্বাব! ইসলাম ত্যাগ করো; তাদের নির্যাতনের জবাবে আমি বলেছিলাম, তোমাদের নির্যাতনে আমার জীবন চলে গেলেও আমি ইসলাম ত্যাগ করব না।
শুধু তাই নয়- হজরত খাব্বাব তাঁর দেহ থেকে জামা খুলে পিঠ দেখালেন। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পিঠে কোনো মাংশ দেখতে পাননি বরং দেখেছিলেন কালো দাগ পড়া হাড়।
হজরত খাব্বাব রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফাতুল মুসলিমিনকে জানালেন, ‘এটা কোনো কুষ্ঠু রোগের চিহ্ন নয়, বরং ইসলাম গ্রহণ করার কারণে মুশরিকরা আমাকে জলন্ত কয়লার ওপর চিৎ করে শুয়ালেন এবং বুকের ওপর ভারি পাথর দিয়ে চাপ দিয়ে রাখলেন; আর বললেন, হে খাব্বাব! ইসলাম ত্যাগ করো।
এ কঠিন অত্যাচারের সময়ও আমি বলেছিলাম, আহাদ; আহাদ অর্থাৎ আল্লাহ এক, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য রাসুল। ইসলাম গ্রহণের ফলে এ ছিল হজরত খাব্বাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওপর নির্যাতনের অবস্থা।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে বিশ্বনবীর আহ্বানে যারা সাড়া দিয়ে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তাদেরকে অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। এ কষ্টের সময়েও সাহাবায়ে কেরামের মনোবল ও ঈমানকে চাঙ্গা রাখতে রাসুলুল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফলতা লাভে ত্যাগের যে উপদেশ দিয়েছেন; সে বিষয়ে হজরত খাব্বাব ইবনে আরত রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণিত একটি হাদিস তুলে ধরা হলো-
হজরত খাব্বাব ইবনে আরত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এমন মুহূর্তে অভিযোগ করলাম, যখন তিনি কাবা ঘরের ছায়ায় চাদর দিয়ে বালিশ বানিয়ে বিশ্রাম করছিলেন। আমরা বললাম, আপনি আমাদের জন্য কি সাহায্য কামনা করবেন না? আমাদের জন্য কি দোয়া করবেন না?
তিনি (বিশ্বনবি) বলেন, দেখ! তোমাদের পূর্বের যারা ঈমানদার ছিল (তাদের প্রতি এমন নির্যাতন হতো যে) তাদের কাউকে ধরে জমিনে গর্ত করে পুঁতে দেয়া হতো। অতঃপর তাদের মাথায় করাত চালিয়ে তাদেরকে দ্বিখণ্ডিত করা হত। আর লোহার চিরুনি দ্বারা শরীরের গোশত ও হাড় পৃথক করা হত।
কিন্তু এমন নির্মম অত্যাচারও তাদেরকে দ্বীন থেকে বিরত করতে পারেনি। আল্লাহর শপথ! এই দ্বীন পূর্ণতা লাভ করবে, এমনকি (একজন) ভ্রমণকারী সানআ (ইয়েমেন) থেকে হাজরা মাউত পর্যন্ত নির্বিঘ্নে ভ্রমন করবে; তারপরও আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় পাবে না। এমনকি মেষপালের জন্য একমাত্র বাঘের ভয় বাকি থাকবে; কিন্তু ‘তোমরা আসলে তাড়াহুড়া করছ।”(বুখারি)
পরিশেষে...
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ার বুকে ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে রেখেগেছেন। এখন প্রয়োজন ধৈর্য, ত্যাগ, উত্তম কথা ও কাজের বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইসলামকে মানুষের সামনে তুলে ধরা।
সফলতা লাভে ত্যাগ-তিতিক্ষার বিকল্প নেই। যারা ইসলামের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন তারাই সফলকাম হয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈমানের ওপর অটল ও অবিচল থেকে বর্তমান সময়ের সব ফেতনা –ফাসাদ ও নির্যাতন উপেক্ষা করে সুন্দর ও উত্তম কথা ও কাজ দ্বারা তা মোকাবেলা করার তাওফিক দান করুন।
কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী জীবনের সব কার্যক্রম পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি