হালাল উপার্জন মানুষের প্রশংসনীয় গুণ
দুনিয়াতে মানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাপনে অর্থ-সম্পদের প্রয়োজন অত্যাধিক। কিন্তু জীবন ধারণের প্রয়োজনে অবৈধভাবে উপার্জন ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। বৈধভাবে জীবিকা উপার্জন কষ্টকর হলেও তা আল্লাহর কাছে অতিপ্রিয়।
অন্যায় ও অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়তে হবে। সম্পদ পুঞ্জিভুত করতে যাচ্ছেতাই অন্যায় অপকর্ম করে বেড়াতে হবে। এ সব বিষয়ে আল্লাহ তাআলা খুব কঠোরভাবে হুশিয়ারি দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে জীবিকা অর্জনের জন্য হালাল উপার্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। কারণ হালাল সম্পদ উপার্জন এবং জীবিকা ইবাদাত কবুলের পূর্বশর্ত।
দুনিয়াতে যেহেতু জীবন-যাপনে সম্পদের প্রয়োজন রয়েছে, তাই আল্লাহর বিধান মেনে বৈধভাবে আয়-উপার্জন করতে হবে। সম্পদ অর্জনের ভালোবাসা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট ভাষায় ইরশাদ করেন, ‘এবং তোমরা ধন-সম্পদকে প্রাণভরে ভালোবাস।’ (সুরা ফজর : আয়াত ২০)
এ কথা মনে রাখতে হবে যে, বৈধভাবে সম্পদ উপার্জন মুমিন-মুসলমানের একটি প্রশংসনীয় কাজ। হালাল উপায়ে সম্পদ অর্জনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তুসামগ্রী ভক্ষণ করো। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না, নিঃসন্দেহে শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৬৮)
পৃথিবীতে যত নবি-রাসুলগণের আগমন ঘটেছে, তাদের সবাই নিজ হাতে উপার্জন করেই জীবিকা নির্বাহ করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিজ হাতে উপার্জিত খাবারই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট। আল্লাহর নবি হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে উপার্জিত রিজিকই গ্রহণ করতেন।’ (বুখারি)
অন্যায় ও অবৈধ পন্থায় উপার্জনকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কেননা অন্যায় পন্থা অবলম্বন করে উপার্জনে মানুষের সারা জীবনের ভালো কাজগুলো বরবাদ হয়ে যায়।
অন্যায় পথে অবৈধভাবে উপার্জনকারীকে আল্লাহ তাআলা তাঁর রহমত, রবকত ও মাগফিরাত থেকে বঞ্চিত করেন। তাদের আখিরাতের জীবন ধ্বংশে পর্যবশিত হয়। এমনকি হারাম উপার্জন ভক্ষণে মানুষের কোনো আমল-ইবাদাতও কবুল হয় না।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে সাদ! পবিত্র খাবার গ্রহণ করো, তবে তোমার দোয়া কবুল হবে। সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ। বান্দা যখন তার মুখে হারাম উপায়ে উপার্জিত কোনো খাবার গ্রহণ করে, আল্লাহ ৪০ দিন তার কোনো আমল কবুল করেন না। আর যে ব্যক্তি অবৈধ সম্পদ আর হারাম উপার্জিত অর্থে বেড়ে ওঠে, তার জন্য জাহান্নামের আগুনই উত্তম।’
শুধু তাই নয়! অবৈধ জীবিকা দ্বারা যেমন ইবাদাত কবুল হবে না; তেমনি অবৈধ সম্পদ তথা সুদ, ঘুষ, চুরি, হারাম ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যাবতীয় অন্যায় পথে উপার্জিত সম্পদের দান-অনুদানও আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।
কেননা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পবিত্রতা ছাড়া নামাজ আর চুরি ও আত্মসাতের সম্পদের সদকা কবুল হয় না।’ (মুসলিম)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, ‘একজন মানুষ লম্বা পথ সফর করে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। এরপর সে না ঘুমিয়ে রাত জেগে নামাজ পড়ে এবং আল্লাহর জিকির করে দোয়া করে-
‘হে আল্লাহ! তুমি আমার গোনাহ মাফ করে দাও। কিন্তু তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, কাপড়-চোপড় হারামসহ তার সবকিছুই হারাম। সুতরাং ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত শরীরে, না ঘুমিয়ে সে যত মনোযোগ সহকারেই দোয়া করুক না কেন, আল্লাহর দরবারে তা কবুল হবে না।’ (মিশকাত)
পরিশেষে...
মুসলিম উম্মাহর উচিত- আয়-উপার্জনের ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া। আল্লাহ তাআলার ওপর অগাধ আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে উপার্জনে নেমে পড়া। তবেই আল্লাহ তাআলা উত্তম জীবিকা দান করবেন।
সর্বোপরি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই অমর কালজয়ী হাদিসটি সব সময় স্মরণ রাখা উচিত। আর তা হলো-
‘পৃথিবীর কোনো প্রাণীই তার রিজিক শেষ হওয়ার পূর্বে মারা যাবে না। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং উপার্জনের ক্ষেত্রে সৎ পথ অবলম্বন করো। তাকদিরে লেখা রিজিক আসতে বিলম্ব হলেও অসৎ পথে উপার্জন করো না। আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই আল্লাহর কাছ থেকে হালাল জীবিকা পাওয়া সম্ভব।’ (মিশকাত)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর বিধান পালনের পাশাপাশি হালাল রিজিক উপার্জনের প্রশংসনীয় গুণের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআই