যে কাজে অতীত জীবনের সকল গোনাহ ক্ষমা হয়
আল্লাহ তাআলা মানুষের দুনিয়ার কল্যাণ, হিদায়াত এবং আখিরাতের সফলতার জন্য কুরআন এবং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন অনুযায়ী মানুষের জীবনে সকল সমাধান তুলে ধরেছেন। এ কুরআনের বর্ণনা ও উপদেশগুলোই হচ্ছে বিশ্বনবির হাদিস।
এ উপদেশগুলোর মধ্য থেকে অতীত জীবনের সকল গোনাহ থেকে মুক্তি লাভে বিশ্বনবির একটি হাদিস তুলে ধরা হলো। যে হাদিসে নন্দিত সাহাবি হজরত আমর ইবনুল আ’স তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন-
হজরত ইবনে শিমাসাহ আলমাহরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত আমর ইবনুল আ’স রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন মৃত্যু শয্যায় ছিলেন, আমরা তাঁর কাছে উপস্থিত হলাম। তিনি দীর্ঘক্ষণ ধরে কাঁদলেন এবং দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে ভাবছিলেন।
তাঁর ছেলে বলতে লাগলো হে আব্বা! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আপনাকে এ সুসংবাদ দেননি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আপনাকে এ সুসংবাদ দেননি?
বর্ণনাকারী বলেন, তখন তিনি মুখ ফিরিয়ে বললেন, অবশ্যই আমার যা কিছু পুঁজি সঞ্চয় করেছি তন্মধ্যে ‘আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল’- উত্তম সঞ্চয়। আমি আমার জীবনে তিনটি পর্যায় অতিক্রম করে এসেছি-
প্রথম পর্যায়
আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আমার চেয়ে অধিক বিদ্বেষ পোষণ করতে আর কাউকে দেখিনি। তখন আমার ইচ্ছা ছিল যে, যদি আমি সুযোগ পাই; তাহলে তাঁকে হত্যা করে মনের ঝাল মিটাব।
দ্বিতীয় পর্যায়
অতঃপর যখন আল্লাহ আমার অন্তরে ইসলামের প্রেরণা ঢেলে দিলেন; আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললাম- আপনার ডান হাত প্রসারিত করুন। আমি আপনার কাছে বাইআত নিবো। তিনি ডান হাত প্রসারিত করলে আমি আমার হাতখানা টেনে নিলাম।
তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন-
তখন থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেয়ে অন্য কোনো ব্যক্তি আমার কাছে অধিক প্রিয় ছিল না। বস্তু আমার দৃষ্টিতে তাঁর চেয়ে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন কোনো সৃষ্টি ছিলো না। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদার এমনি এক প্রভাব ছিলো যে, আমি কখনো তাঁর পবিত্র চেহারার দিকে তাকিয়ে স্থির থাকতে পারতাম না।
যদি কেউ আমাকে তাঁর (বিশ্বনবির) দৈহিক সৌষ্ঠবের বর্ণনা করার জন্য অনুরোধ করতো তাও আমার দ্বারা সম্ভব হতো না। যদি এ অবস্থায় আমার মৃত্যু হতো তাহলে আমি আশা করতে পারতাম যে, আমি জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভূক্ত।
তৃতীয় পর্যায়
অতঃপর আমার ওপর বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব ন্যস্ত হলো। আমি অবগত নই যে, এগুলো মধ্যে আমার অবস্থা কেমন? (মুসলিম)
পরিশেষে...
উল্লেখিত হাদিসই হতে পারে মানুষের জন্য জীবনে সফলতা লাভের একমাত্র উপায়। শিরকমুক্ত পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী হয়ে কুরআন-সুন্নাহর বিধান পালনে সর্বোচ্চ ত্যাগেই যা সম্ভব।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজরত আমর ইবনুল আ’সের বর্ণিত ঘটনার আলোকে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন-যাপন করে বিশ্বনবির ভালোবাসায় নিজেকে গড়ে পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি