দোয়া কবুলের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত
আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন পাক-পবিত্র, হালাল এবং উত্তম বস্তু খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে আর আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করে। কারণ দোয়া ও ইবাদাত-বন্দেগি কবুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শর্তও হলো হালাল খাদ্য গ্রহণ করা। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা মানুষের দোয়া ও ইবাদাত-বন্দেগি কবুলের লক্ষ্যে কুরআনে হালাল খাদ্য গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং শুকরিয়া আদায়ের তাকিদ দিয়েছেন।
হালাল খাদ্য গ্রহণ করে দোয়া এবং ইবাদাত-বন্দেগি করলে আল্লাহ তাআলা মানুষের দোয়া এবং ইবাদাত-বন্দেগিসহ দুনিয়া ও পরকালের সকল নেক আবেদন কবুল করে থাকেন। আর যারা হারাম খাদ্য ভক্ষণ করে তাদের দোয়া ও ইবাদাত-বন্দেগিসহ কোনো চাওয়া-পাওয়াই কবুল হয় না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে হালাল খাদ্য গ্রহণ করে নেক কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘হে লোক সকল! আল্লাহ তাআলা নিজেই পবিত্র সত্ত্বা। তাই তিনি পবিত্র বস্তু কবুল করে থাকেন। তিনি আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং মুমিনদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন পবিত্র জিনিস খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং নেক আমল করে। (মুসনাদে আহমাদ)
আল্লাহ তাআলা হালাল খাদ্য ভক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে যুগে যুগে তাঁর রাসুলগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে রাসুলগণ! আপনারা উত্তম বস্তুকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করুন এবং নেক কাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত। (সুরা মুমিনুন : আয়াত ৫১)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর ইবাদাতকারীদেরকে হালাল খাদ্য গ্রহণ করে শুকরিয়া আদায়ের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা তাঁরই (আল্লাহর) বন্দেগি কর তবে তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে জীবিকা হিসেবে দান করেছি এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৭২)
উল্লেখিত আয়াত এবং হাদিসের নির্দেশ অনযায়ী বুঝা যায় যে, দোয়া কবুলের জন্য বৈধ জীবিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হালাল জীবিকা গ্রহণের জন্য প্রথমেই হালাল উপার্জন আবশ্যক। হালাল উপার্জিত অর্থ দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার দুনিয়া ও পরকালের কামিয়াবি দান করবেন। যার নির্দেশনা তিনি কুরআনে পাকে এবং হাদিসের মাধ্যমে বান্দাকে জানিয়ে দিয়েছেন।
পরিশেষে...
দোয়া কবুলের জন্য হালাল খাদ্য গ্রহণ এবং হারাম খাদ্য বর্জনের ওপর গুরুত্ব উপলব্দি করতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রিয় উম্মতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদিস বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি দূরের সফরে রয়েছে। দূর পাল্লার মুসাফির হওয়ার কারণে তার চুল অবিন্যস্ত এবং সে ধূলা-বালি মিশ্রিত (সংকটাপন্ন) হয়ে পড়েছে; সে তখন দু`হাত তুলে দোয়া করতে থাকে এবং কাকুতি-মিনতি করে আল্লাহ তাআলাকে ডাকতে থাকে। কিন্তু তার খাদ্য, পোশাক এবং পথ্য হারাম হওয়ার কারণে এ সংকটাপন্ন মুসাফির অবস্থার বিনীত দোয়া (আল্লাহর দরবারে) কবুল হয় না।
আল্লাহ তাআলা যাদের দোয়া কবুল করেন তাদের মধ্যে মুসাফিরও অন্যতম। কোনো মানুষ সফর অবস্থায় দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দোয়া কবুল করেন। বিশ্বনবির এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, হারাম ভক্ষণের কারণে সংকটাপন্ন মুসাফিরের দোয়াও কবুল হয় না।
সুতরাং আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হালাল উপার্জন, হালাল খাদ্য গ্রহণ, হালাল অর্থে পোশাক ক্রয় এবং হালাল ও পবিত্র পথ্য গ্রহণ করে তাঁর নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার শান্তি এবং পরকালের মুক্তি সাধনে হালাল ও হারাম মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি