কুরআনে মানুষের পরিচয়
আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে মানুষের পরিচয় তুলে ধরেছেন। কিছু মানুষ আছে যারা আল্লাহ তাআলাকে অত্যধিক ভালোবাসে। আবার এ সব মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ আছে যারা অন্যকে আল্লাহ তাআলার সমকক্ষ মনে করে এবং ভালোবাসে। অথচ সমগ্র মাখলুকাতের সৃষ্টি কর্তা হলেন মহান আল্লাহ তাআলা। তিনি তুলনার উর্ধ্বে। তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা এবং সম্মান করা উচিত। কারণ তিনি সত্যিকারের ইবাদাতের একমাত্র উপযুক্ত উপাস্য, তাঁর কোনো শরিক নাই । আল্লাহ তাআলা তাঁর সম্পর্কে মানুষের আচরণের নমুনা তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘এবং মানুষের মধ্যে এমনও লোক আছে, যারা আল্লাহ তাআলা ব্যতিত অন্যকে তাঁর অংশীদার মনে করে। যেভাবে আল্লাহ তাআলাকে ভালোবাসা দরকার, ঠিক সেভাবেই তাদেরকে ভালোবাসে। আর যারা ঈমানদার; আল্লাহ তাআলার প্রতি তাদের ভালোবাসা দৃঢ়তর (এবং) তার চেয়েও বেশি। আর অত্যাচারীরা যদি আল্লাহ তাআলার শাস্তির সময়টিকে দেখতো, তখনই বুঝতো যে সমস্ত শক্তি একমাত্র আল্লাহ তাআলার এবং নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কঠোর শাস্তি দাতা।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৬৫)
পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার তাওহিদ তথা একত্ববাদের পরিচয় প্রদানে ৮টি দলিল উপস্থাপন করেছেন। সুতরাং এ সকল উপমা তুলে ধরার পরেও যারা মহান রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে অংশীবাদী সাব্যস্ত করে, তাদের ব্যাপারে তিনি কঠোর হুশিয়ারি প্রদান করেছেন।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে ইবনে কাসিরে এসেছে, ‘এ আয়াতে মুশরিকদের দুনিয়া ও পরকালের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। এরা আল্লাহ তাআলার সঙ্গে অংশীদার গ্রহণের মাধ্যমে জঘন্য অপরাধ করে থাকে এবং অন্যকে আল্লাহর ন্যায় সম্মান করে থাকে।
শুধু তাই নয়, এ সব উপাস্যদের সঙ্গে এত বেশি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করে থাকে যেরূপ ভালোবাসা আল্লাহ তাআলার সঙ্গে করা উচিত ছিল। কেননা আল্লাহ তাআলাই সত্যিকারের ইবাদাতের উপযুক্ত একমাত্র উপাস্য। তিনি অতুলনীয়। তাঁর কোনো শরীক নেই।
আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন মারাত্মক অপরাধ। এ প্রসঙ্গে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বর্ণনা করেন, আমি জানতে চাইলাম, হে আল্লাহর রাসুল!(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বশ্রেষ্ঠ গোনাহ কোনটি? তিনি ইরশাদ করলেন, ‘আল্লাহ তাআলা সঙ্গে শিরক করা অথচ তিনিই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা।
অতঃপর ইরশাদ করেন, ঈমানদারগণ আল্লাহ তাআলার প্রেমে অত্যন্ত সুদৃঢ় এবং মুগ্ধ থাকে। তাদের অন্তরে আল্লাহ তাআলার মাহাত্ম্য এবং তাওহিদ দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে। তারা আল্লাহ ব্যতিত অপরের প্রতি মহব্বত স্থাপন করে না, করো নিকট কোনো কিছুর জন্যে প্রার্থী হয় না, কারো কাছে নত হয় না এবং সেই পবিত্র সত্তার সাথে কোনো কিছুকে শরিক সাব্যস্ত করে না।
তাফসিরে ওসমানিতে এসেছে, ‘যদিও মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে বিবেক-বুদ্ধির দিক থেকে সমগ্র সৃষ্টি জগতের মধ্যে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। তা সত্ত্বেও মানব সমাজে এমন নির্বোধ লোকের অভাব নেই, যারা আল্লাহ তাআলার তাওহিদ বা একত্ববাদেরর এ সমস্ত সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণ এবং উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ দেখা সত্ত্বেও হীন বস্তুকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করে।
অথচ আল্লাহ তাআলা সর্ব-শক্তিমান, সর্ব-গুণাকর, সর্বজ্ঞানী এবং করুণাময়, মহিমাময়, তাঁর অবাধ্য হয়ে তারা জড় পদার্থকে তাঁর সমতুল্য মনে করার ন্যায় নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেয়। আর তাদের এ নির্বুদ্ধিতা এত চরম পর্যায়ে পৌছেছে যে শুধু আচার-আচরণেই নয় বরং প্রেম-প্রীতিতেও তারা আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে। অর্থাৎ যেভাবে মুমিনগণ আল্লাহকে ভালোবাসে, তেমনি পৌত্তলিকরা তাদের স্ব-হস্তে নির্মিত মূর্তিগুলোকে ভালোবাসে। (নাউজুবিল্লাহ)
আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর তাওহিদ ও বিশ্বনবির সিরালাতের অনুগত বান্দা হিসেবে কবুল করুন। আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলকে সর্বাধিক ভালোবাসার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এবিএস