যেভাবে নামাজের কাজা আদায় করেছেন বিশ্বনবি
নামাজ পড়ার হুকুম হলো নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা। নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করতে না পারলে তা পরবর্তী সময়ে আদায় করে নেয়া জরুরি। এ প্রসঙ্গে ইতিপূর্বে নামাজের কাজা আদায় সম্পর্কিত হুকুম এবং করণীয় আলোচনা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাগণকে নিয়ে নামাজের কাজা আদায় করেছেন। এ সম্পর্কিত কয়েকটি হাদিস তুলে ধরা হলো-
৫ম হিজরিতে খন্দকের যুদ্ধের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম চার ওয়াক্ত নামাজ যথা সময়ে আদায় করতে পারেননি। যা ওয়াক্ত অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি জামাআতের সঙ্গে আদায় করেছিলেন।
হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলাম। জোহর, আসর, মাগরিব এবং ইশা এ চার ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হতে আমরা বাঁধাপ্রাপ্ত হলাম। এটা আমার নিকট কষ্টদায়ক হলো। মনে মনে ভাবলাম আমরা তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে থেকে আল্লাহর পথে জিহাদ করছি (এরপরও কি আমাদের এরূপ দুর্ভাগ্য?)
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হজরত) বিলাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে ইকামাত দিতে আদেশ করলেন। ইকামাত বললে আমাদের নিয়ে জোহরের নামাজ আদায় করলেন। আবার ইকামাত বললে আসরের নামাজ আদায় করলেন। আবার ইকামাত বললে মাগরিবের নামাজ আদায় করলেন। পুনরায় ইকামাত বললে ইশার নামাজ আদায় করলেন। তারপর আমাদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেনঃ ভূ-পৃষ্ঠে তোমাদের ছাড়া এমন কোনো জামাআত নেই, যারা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে। (নাসাঈ)
অন্য হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু সাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধে মুশরিকরা আমাদের জোহরের নামাজ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিরত রেখেছিল। সেটা যুদ্ধের সময় সালাতুল খওফ সম্পর্কিত আয়াত অবতীর্ণ হবার আগের ঘটনা। তারপর আল্লাহ তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করেন, ‘যুদ্ধে মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ২৫)
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইকামাত দেয়ার আদেশ করেন। তিনি জোহরের নামাজের ইকামাত দেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের আসল ওয়াক্তে আদায় করার মতো জোহরের নামাজের কাজা আদায় করেন।
পরে আসরের জন্য ইকামাত বলা হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন নামাজের আসল ওয়াক্তের মতো আসরের নামাজের কাজা আদায় করেন।
তারপর মাগরিবের আজান দেয়া হয় এবং তা নির্ধারিত সময়ে আদায় করার মত আদায় করেন। (নাসাঈ)
>> মনে ভুলে বা ঘুমের কারণে যদি কেউ নির্ধারিত ওয়াক্তে নামাজ আদায় করতে না পারে; তবে স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আদায় করে নেয়া।
হাদিসে আরো বর্ণিত হয়েছে-
হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাজের কথা ভুলে যায় বা ঘুমিয়ে থাকে, তার কাফফারা হল যখন তার নামাজের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করা। (বুখারি, মুসলিম)
অন্য এক হাদিসে এসেছে-
হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ নামাজ ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ে বা নামাজ থেকে গাফেল হয়ে যায়; তো যখন তার বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, أقم الصلاة لذكري আমাকে স্মরণ হলে নামাজ আদায় কর (সুরা ত্বহা : আয়াত ১৪)।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)
পরিশেষে...
নামাজের কাজা অল্প হোক আর বেশি হোক; তার কাজা আদায় করতে হবে। সে ক্ষেত্রে পূর্বে উল্লেখিত নিয়মে কম-বেশি নামাজের কাজা আদায় করবে। হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, নামাজের কাজা আদায় করতে হবে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাজ আদায়ের নিয়মে। তিনি নির্ধারিত ওয়াক্তে যেভাবে নামাজ আদায় করতেন; সেভাবেই তিনি নামাজের কাজা আদায় করেছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বনবির দেখানো নিয়মে নামাজের কাজা আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস