স্বর্ণ-রূপা ও প্রচলিত মুদ্রার জাকাতের বিধান
জাকাত নামাজের মতোই ফরজ ইবাদত। চার ধরনের সম্পদের ওপর জাকাত প্রযোজ্য। এগুলোর মধ্য থেকে স্বর্ণ-রুপা ও যেগুলো অর্থনৈতিক লেনদেনের মূলভিত্তি; সেসব সম্পদের জাকাতের বিধান ও পরিমাণ কি হবে; তা তুলে ধরা হলো-
জাকাতের বিধান
স্বর্ণ ও রুপায় জাকাত ফরজ হবে যদি নেসাব পরিমাণ স্বর্ণ ও রুপা এক চন্দ্র বছর অতিবাহিত হয়। তা মুদ্রা হোক বা গহনা হোক।
জাকাতের পরিমাণ
স্বর্ণ-রুপা ও প্রচলিত মুদ্রা টাকার জাকাতের পরিমাণ হলো- রুবুউ’ল উ’শুর (এক চল্লিমাংশ) অর্থাৎ শতকরা আড়াই ভাগ। এগুলো নিসাব পরিমাণ ও এক চন্দ্র বছর অতিবাহিত হতে হবে; তবেই জাকাত ফরজ হবে, নতুবা নয়।
স্বর্ণের নিসাব
স্বর্ণ নির্দিষ্ট নিসাব হলো ২০ দিনার বা ২০ মিছকাল। আর এক মিছকালের ওজন হলো ৪.২৫ গ্রাম। অতএব স্বর্ণের নিসাব হলো ৮৫ গ্রাম। সুতরাং কারো নিকট যদি ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ বা তার বেশি থাকে তবে এ পরিমাণ স্বর্ণের আড়াই ভাগ হারে জাকাত আদায় করতে হবে।
রুপার নিসাব
রুপার নির্দিষ্ট নিসাব হলো ২০০ দিরহাম। আর এক দিরহামের ওজন হলো ২.৯৭৫ গ্রাম। তাই রুপার নির্ধারিত নিসাব হলো ৫৯৫ গ্রাম। সুতরাং ৫৯৫ গ্রাম রুপার মালিকের নিকট যদি এ রুপা পূর্ণ এক চন্দ্র বছর থাকে তবে তাকে শতকরা আড়াই ভাগ হারে জাকাত আদায় করতে হবে।
মুদ্রার জাকাত
বর্তমান সময়ের মুদ্রাসমূহ যেমন- ডলার, রিয়াল, টাকা ইত্যাদির জাকাতের বিধান উপরোল্লেখিত স্বর্ণ-রুপার বিধানের মতোই। তাই নগদ অর্থ যখন স্বর্ণ বা রুপার পরিমাণে পৌঁছবে এবং এক চন্দ্র বছর জমা থাকবে; তখন তাতে জাকাত ফরজ হবে। তখন এ নগদ অর্থের জাকাতের পরিশোধযোগ্য পরিমাণ হবে ২.৫ (আড়াই) ভাগ। স্বর্ণ-রুপার মূল্য বা ক্বিমাত তথা বর্তমান বাজার মূল্যের ভিত্তিতেই নির্ধারণ করতে হবে।
পরিশেষে...
স্বর্ণ-রুপা ও অর্থের নিসাব নির্ধারণে বিশ্বনবির একটি হাদিস তুলে ধরছি- ‘হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তুমি যদি দুইশ দিরহামের মালিক হও; আর তাতে যদি এক বছর অতিবাহিত হয়; তবে তা জাকাতের নির্ধারিত পরিমাণ হবে (শতকরা আড়াই ভাগ হারে) পাঁচ দিরহাম।
যদি তোমার নিকট ২০ দিনার থাকে; আর তা এক বছর অতিবাহিত হয় তবে (শতকরা আড়াই ভাগ হারে) তাতে অর্ধ দিনার জাকাত দিতে হবে। আর এর চেয়ে কম (২০ দিনারের কম) মালে জাকাত ওয়াজিব হবে না।
সুতরাং এ পরিমাণের বেশি হলে এ অনুপাতেই জাকাত আদায় করতে হবে। আর কোনো মালেই জাকাত ওয়াজিব হবে না এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। (আবু দাউদ)
মুসলিম উম্মাহ সকল নিসাব পরিমাণ সম্পদশালীর ওপর জাকাত আদায়কে ফরজ করে দিয়েছেন। তাই আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ-রুপা ও অর্থের মালিকদের নির্ধারিত হারে জাকাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস