বিশ্বনবি যেভাবে হজ পালন করেছিলেন
হজ শারীরিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবানদের ওপর আল্লাহ তাআলা কর্তৃক ফরজ ইবাদাত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে একবার হজ আদায় করেছেন। ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ মুসলিমে বিশ্বনবির হজের সম্পূর্ণ কার্যক্রমগুলো একটি দীর্ঘ হাদিসে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন। যা সকল হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় নয় বছর (যাবত) হজ না করেই অতিবাহিত করেন। অতপর দশম বছরে লোকদের মধ্যে ঘোষণা করে দিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বছর হজে যাবেন। কাজেই মদিনার অনেক লোক একত্রিত হলো। প্রত্যেকেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ করার জন্য উদ্বিগ্ন ছিল।
তিনি যেরূপ করেন তারাও সেরূপ করবেন। এবার রওয়ানা হয়ে আমরা যুলহুলাইফা (মিকাত বা ইহরাম বাঁধার স্থান) নামক স্থানে আসলে আসমা বিন্তে উমায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহুা মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরকে প্রসব করেন।
তাই তিনি (আসমা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে জিজ্ঞেস করে পাঠালেন, ‘এখন আমি কি করব?’ তিনি (বিশ্বনবি)বললেন, ‘তুমি গোসল কর, কাপড় দিয়ে গোপন অংগ বেঁধে নাও এবং ইহরাম বাঁধ।’
অতপর বিশ্বনবি মসজিদে (ইহরাম পরবর্তী) নামাজ আদায় করে তাঁর কাসওয়া নামক উষ্ট্রীর পিঠে আরোহণ করলেন এবং তা বায়দা নামক স্থানে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। আমি (জাবির) আমার দৃষ্টি প্রসারিত করলাম এর সর্বশেষ সীমা পর্যন্ত। আমি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম- আমার দৃষ্টি যতদূর যায় ততদূর আরোহী ও পদাতিক লোকের সারি। আমার ডানে, বামে ও পিছনেও অনুরূপ লোকের ভিড় দেখলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে ছিলেন। তাঁর ওপর কুরআন নাজিল হচ্ছিল। তিনি তাঁর অন্তর্নিহিত ভাবধারা ভালোভাবেই জানতেন। তিনি যা করতেন আমরাও তা-ই করতাম।
এবার তিনি এই বলে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দিলেন- ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ লোকেরাও তাঁর তালবিয়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তালবিয়া পাঠ করল। তিনি এর কোনো অংশ প্রত্যাখ্যান করেননি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর তালবিয়া পাঠ করতেই থাকলেন।
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা হজ ছাড়া অন্য কোনো নিয়ত করিনি; কারণ হজ্বের সাথে উমরাও করা যেতে পারে তা আমাদের মধ্যে কারোর জানা ছিল না।
অবশেষে আমরা যখন তাঁর সাথে বাইতুল্লাহ পৌঁছলাম, তিনি হাজরে আসওয়াদ চুমো খেলেন। অতপর তিনবার দ্রুত (রমল) পদক্ষেপ এবং চারবার ধীর পদক্ষেপে কা‘বা ঘর প্রদক্ষিণ করলেন।
এরপর মাকামে ইবরাহিমের দিকে অগ্রসর হলেন (তাওয়াফ পরবর্তী নামাজের জন্য) এবং কুরআনের এ আয়াত- ‘তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থানে পরিণত কর।’ পাঠ করলেন। এ সময় মাকামে ইবরাহিম তাঁর বাইতুল্লাহর মাঝখানে ছিল।
বর্ণনাকারী বলেন, আমার পিতা বলতেন, সম্ভবত আমার জানা মতে তিনি বিশ্বনবি সম্পর্কেই বলেছেন- এখানে তিনি যে দু’ রাকাআত নামাজ আদায় করেছেন- তাতে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ ও কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরূন’ সুরাদ্বয় পড়েছেন। তারপর হাজরে আসওয়াদের কাছে ফিরে তাকে চুম্বন করলেন।
তারপর (সাঈ’র জন্য) দরজা দিয়ে সাফা পর্বতের দিকে বের হলেন এবং যখন সাফা পর্বতের কাছাকাছি পৌঁছলেন, তখন কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন- ‘ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআ’ইরিল্লাহ।’ আর বললেন, ‘আল্লাহ যা দিয়ে আরম্ভ করেছেন আমিও তা দিয়ে আরম্ভ করব।’
কাজেই তিনি সাফা থেকে আরম্ভ করলেন এবং তার ওপর আরোহন করলেন এবং আল্লাহর ঘর দেখতে পেলেন। তখন তিনি কেবলার দিকে ফিরে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা করলেন এবং তাঁর মহিমা বর্ণনা করে বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকা লাহু; লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু; ওয়া হুয়া আ’লা কুল্লি শাইয়িং ক্বাদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু; আংঝাযা ওয়া’দাহু; ওয়া নাসারা আ’বদাহু; ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহ্দাহু।’ অতপর এর মাঝে দোয়া করলেন এবং তিনবার এরূপ করলেন।
তারপর মারওয়ার দিকে অবতরণ করলেন এবং উপত্যকার সমতলে গিয়ে তাঁর পাঁ ঠেকলো; তারপর উপরের দিকে ওঠার সময় দৌড়িয়ে ওঠলেন এবং উপত্যকা অতিক্রম করলেন, তারপর মারওয়া পৌঁছা পর্যন্ত হেঁটে গেলেন আর সেখানে তিনি সাফা পাহাড়ে যেরূপ করেছিলেন অনুরূপ করলেন। এমনকি মারওয়ার ওপর শেষবারের প্রদক্ষিণ সমাপ্ত হলে (লোকদের উদ্দেশ্যে) বললেন, ‘আমি আমার ব্যাপারে পরে যা বুঝতে পেরেছি তা যদি আগে বুঝতে পারতাম তাহলে আমি আমার সাথে হাদির পশু আনতাম না এবং তাকে (হজের ইহরামকে) উমরায় পরিণত করতাম। কাজেই যাদের সাথে হাদির পশু নেই তারা যেন ইহরাম খুলে ফেলে এবং তাকে উমরায় পরিণত করে।
তখন সুরাকা ইবনে মালেক ইবনে জু’শুম রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ বিধান কি শুধু আমাদের এ বছরের জন্য, না চিরকালের জন্য? জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের আঙ্গুলগুলো পরস্পরের মধ্যে ঢুকিয়ে দু’বার বললেন, ওমরা হজের মধ্যে প্রবেশ করল। না, বরং চিরকালের জন্য।
এ সময় আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু ইয়ামেন থেকে বিশ্বনবির কুরবানির পশু নিয়ে আসলেন এবং ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইহরাম খোলা, রঙ্গিন কাপড় পরিধান করা ও সুরমা লাগানো অবস্থায় দেখতে পেলেন। তিনি এটা অপছন্দনীয় কাজ মনে করলে ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমার পিতা এ কাজ করার জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বর্ণনাকারী বলেন, আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু ই’রাকে বলতেন, ‘ফাতিমার এ কাজে আমি বিরক্ত হয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে ফতোয়া জানার জন্য গেলাম। সে (ফাতিমা) যা কিছু আমার সাথে আলাপ করেছে আর আমি যে অপছন্দ করেছি এটাও তাঁকে জানালাম।
তিনি (বিশ্বনবি) বললেন, ফাতিমা সত্যি বলেছে, সঠিক বলেছে, তুমি যখন হজের নিয়ত করেছিলে তখন কী বলেছিলে? তিনি (হজরত আলি) বললেন- আমি বলেছি, ‘হে আল্লাহ! তোমার রাসুল যার ইহরাম বেঁধেছে আমিও তার-ই ইহরাম বাঁধছি। তিনি (বিশ্বনবি) বললেন, “তাহলে তুমি ইহরাম ভঙ্গ করবে না; কারণ আমার সাথে হাদির পশু রয়েছে।
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু ইয়ামেন থেকে যেসব কুরবানির পশু সাথে এনেছিলেন আর বিশ্বনবি নিজের সাথে যা এনেছিলেন সব মিলে সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল একশ’। বর্ণনাকারী বলেন, বিশ্বনবি এবং আরো যাদের সাথে হাদির পশু ছিল তারা ছাড়া সকলেই ইহরাম খুলে ফেলল এবং মাথার চুল কাটালো।
তারপর তারবিয়ার দিন (৮ই জিলহজ) আসলে, তারা মিনার অভিমুখে রওয়ানা হলেন এবং (যারা উমরার পর ইহরাম খুলে ফেলেছিল তারা) হজের জন্য (পুনরায়) ইহরাম বাঁধলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাহনে আরোহণ করলেন এবং মিনায় পৌঁছে সেখানে তিনি জোহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও (পরদিন) ফজরের নামাজ আদায় করলেন।
তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত তিনি সেখানে (মিনাতে) অবস্থান করলেন এবং তাঁর জন্য (আরাফাতের ময়দানে) ‘নামেরায়’ একটি পশমের তৈরী তাঁবু খাটানোর নির্দেশ দিলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাত্রা করলেন। কুরাইশদের ধারণা ছিল, অবশ্যই তিনি মাশ‘য়ারুল হারামে অবস্থান করবেন; কারণ জাহেলিয়াতের সময় কুরাইশরা এরূপ করত। (অর্থাৎ আভিজাত্যের কারণে তারা সাধারণের সাথে আরাফাতের মাঠে অবস্থান করত না)
কিন্তু ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামনের দিকে আগ্রসর হতে থাকলেন এবং আরাফাতে পৌঁছে দেখতে পেলেন, নামেরায় তাঁর জন্য তাঁবু খাটানো হয়েছে। কাজেই তিনি সেখানে অবতরণ করলেন এবং অবস্থান করলেন।
সূর্য মধ্যাকাশে স্থির হলে তিনি তাঁর কাসওয়াকে (উষ্ট্রী) সাজাতে হুকুম দিলেন। উষ্ট্রী সাজানো হলে তিনি উপত্যকার মাঝে এসে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন-
>> ‘তোমাদের জানমাল তোমাদের পরস্পরের জন্য হারাম (সম্মানের বস্তু) যেভাবে আজকের এ দিনে এ মাসে এবং এ শহর হারাম। (মর্যাদাপূর্ণ)
>> জাহিলী যুগের সকল রক্তের দাবী (হত্যার প্রতিশোধ) রহিত করা হল। আর আমি প্রথমেই আমাদের রক্তের দাবীর মধ্যে ইবনে রাবি‘য়া ইবনে হারিসের রক্তের দাবী রহিত ঘোষণা করলাম। সে বনি সা‘দ গোত্রের দধু পান অবস্থায় ছিল (লালিত হচ্ছিল)। এ অবস্থায় হুযাইল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করে।
>> জাহিলী যুগের সুদ রহিত করা হল। আর আমি প্রথমেই আমাদের সুদ আব্বাস ইবনে মুত্তালিবের সুদ রহিত ঘোষণা করছি। ইহার সমুদয় রহিত হল।
>> তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে। কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহর জামানতে (হিসেবে) গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালামের মাধ্যমে তাদের গুপ্ত অঙ্গকে হালাল করে নিয়েছ। তাদের উপরে তোমাদের হক হল তারা তোমাদের ঘরে এমন কাউকে আসতে দেবেনা, যাদের তোমরা অপছন্দ কর। আর যদি তারা তা করে তাহলে তাদেরকে হালকাভাবে মারবে যাতে কঠিন আঘাত না লাগে। আর তোমাদের ওপর তাদের হক হল, যথারীতি ও ইনসাফের ভিত্তিতে তাদের অন্ন, বস্ত্রের ব্যবস্থা করবে।
>>আর আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে থাক তাহলে তোমরা আমার পর কখনো গোমরাহ হবে না। তা হল, আল্লাহর কিতাব।
>> হে লোক সকল! তোমাদের কাছে আমার সম্পকের্ জিজ্ঞেস করা হবে। তখন তোমরা কি বলবে? তারা বলল, ‘আমরা সাক্ষ্য দেব, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর বাণী আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, আপনি নিজের কর্তব্য যথাযথভাবে সম্পাদন করেছেন এবং আমাদের কল্যাণ কামনা করেছেন।’ তখন তিনি তাঁর শাহাদাত আঙ্গুল আকাশের দিকে তুলে এবং উপস্থিত জনতার দিকে ইঙ্গিত করে তিনবার বলেন, ‘হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক, আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক।
অতপর মুয়াজ্জিন আজান দিল এবং ইক্বামত বলল। তিনি জোহরের নামাজ আদায় করলেন। পুনরায় ইক্বামত হল, তিনি আসর নামাজ পড়লেন। এর মাঝে কোন নফল পড়লেন না।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সওয়ার হয়ে নিজের অবস্থান স্থলে পৌঁছলেন এবং কাসওয়ার পেট পাথরসমূহের দিকে করে দিলেন এবং পায়ে চলার পথকে নিজের সামনে রেখে কেবলামুখী হলেন। এভাবে তিনি সূর্যাস্ত হয়ে হলুদবর্ণ কিছুটা চলে যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে রইলেন। শেষ পর্যন্ত সূর্য গোলক সম্পূর্ণ নিচে অদৃশ্য হয়ে গেল।
তারপর তিনি উসামাকে তার সওয়ারীর পিছনে বসিয়ে রওয়ানা হলেন এবং কাসওয়ার নাকের লরি এমনভাবে টেনে ধরলেন যে, এর মাথা হাওদার মোড়কের সাথে লেগে গিয়েছিল। আর তিনি তাঁর ডান হাতের ইশারায় বললেন, হে লোক সকল! তোমরা শান্তভাবে আস্তে আস্তে অগ্রসর হও। আর যখনই তিনি কোন বালু স্তুপের ওপর এসে উপনীত হতেন, বাহনের রশি কিছুটা ঢিল দিতেন যাতে উষ্ট্রী ওপরে উঠতে পারে।
এভাবে তিনি মুজদালিফায় এসে পৌঁছলেন। সেখানে তিনি এক আজান ও দু’টি ইক্বামতের সাথে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করলেন এবং দুই সালাতের মাঝে কোন প্রকার সুন্নাত বা নফল পড়লেন না। অতপর ভোর পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুয়ে থাকলেন এবং অন্ধকার কেটে গেলে আজান ও ইক্বামতের সাথে ফজরের নামাজ আদায়করলেন।
এরপর কাসওয়ায় আরোহণ করে ‘মাশ‘য়ারে হারাম’ নামক স্থানে পৌঁছে কিবলামুখী হয়ে দোয়া করলেন, আল্লাহর মহত্ব বর্ণনা করলেন, কালেমায়ে তাওহিদ পাঠ করলেন এবং তাঁর একত্ববাদের ঘোষণা করলেন। দিনের আলো পরিস্কার হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে এরূপ করতে থাকলেন এবং সূর্য ওঠার পূর্বে এখান থেকে রওয়ানা হলেন। এবার ফজল ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তাঁর সওয়ারীর পিছনে বসিয়ে নিলেন। ফজল একজন সুন্দর চুল বিশিষ্ট সুঠাম ও সুদর্শন যুবক ছিলেন।
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, আর মহিলাদের একটি দলও পাশাপাশি অগ্রসর হচ্ছিল। আর ফজল রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের দিকে তাকাচ্ছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজলের মখু মণ্ডলের ওপর তাঁর হাত রাখলেন। ফজল তার মখু অন্যদিকে ফিরিয়ে (আবারো) তাকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাত পুনরায় ফজলের মুখের ওপর রাখেন। এ অবস্থায় তিনি বাতনে মুহাসসিরে এসে পৌঁছলেন এবং সাওয়রীকে কিছুটা উত্তেজিত করলেন।
তিনি মাঝের পথ ধরে (মিনায়) জামরায় আকাবার দিকে অগ্রসর হলেন। অতপর তিনি জামারার নিকট পৌঁছলেন যা গাছের কাছে অবস্থিত। উপত্যকার মাঝখান থেকে তিনি এখানে সাতটি কংকর মারলেন, কংকর মারার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বললেন।
অতপর কুরবানির স্থানে গিয়ে তিনি নিজ হাতে ৬৩টি পশু কুরবানি করলেন। এরপর যা বাকি রইল তা আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু কে দিলেন এবং তিনি তা কুরবানি করলেন।
তিনি (আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু) নিজের কুরবানির পশুতে শরিক করলেন। তারপর তিনি প্রত্যেক পশুর কিছু অংশ নিয়ে একটি হাঁড়িতে পাকানোর জন্য নির্দেশ দিলেন। গোশত পাকানো হল এবং তাঁরা দু’জনই তা থেকে খেলেন ও এর ঝোল পান করলেন।
অতপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সওয়ার হয়ে বাইতুল্লাহ পৌঁছলেন এবং তওয়াফে ইফাযা (তাওয়াফে জিয়ারাত) করে মক্কায় জোহরের নামাজ পড়লেন। এরপর তিনি আপন গোত্র বনি মুত্তালিবের কাছে পৌঁছলেন। তারা জমজমের কূপের পাড়ে দাঁড়িয়ে লোকদেরকে পানি পান করাচ্ছিলেন। তিনি তাদের বললেন, হে বনি মুত্তালিব! তোমরা (পানি) টানতে থাক, তোমাদের পানি সরবরাহের অধিকার লোকেরা ছিনিয়ে নেবে বলে আশংকা না থাকলে আমিও তোমাদের সাথে একত্রিত হয়ে পানি তুলতাম। তখন তাঁরা তাঁকে এক বালতি পানি দিলেন এবং তিনি তা থেকে পান করলেন। (মুসলিম)
এই ছিলো বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হজ। ুুআল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বনবির পরিপূর্ণ অনুকরণে হজ আদায়ের মাধ্যমে হজে মাবরুর লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এবিএস