মসজিদে নববির অর্ন্তগত ফজিলতপূর্ণ স্থানসমূহ
মদিনাতুন্নবি বা নবির শহর বিশ্ব মুসলিমের আবেগ-অনুভূতি কেন্দ্রস্থল। ইসলামের প্রথম যুগে মক্কার কুরাইশরা যখন বিশ্বনবিকে নির্দয় ও নিষ্ঠুর আচরণের মাধ্যমে মাক্কি জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছিল; দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল ঠিক তখন যে পবিত্র ভূমি তাঁকে সাদরে গ্রহণ করে চির ধন্য হয়েছিল; সেই পবিত্র ভূমিই হলো মদিনা মুনাওয়ারা। আজও যে জমিন তাঁর পবিত্র দেহ মোবারক ধারণ করে বিশ্বের বুকে জান্নাতের মর্যাদা লাভ করেছে; সেটিই হলো মদিনা মুনাওয়ারা।
হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য মসজিদে নববির ফজিলতপূর্ণ ইবাদাতের স্থানগুলোর পরিচয় সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-
রিয়াজুল জান্নাহ
বিশ্বনবির হুজরা মোবারক বা মিম্বারের পাশের জায়গাটি রিয়াজুল জান্নাহ বা বেহেশতের বাগান হিসেবে পরিচিত। এ স্থানে নামাজ আদায়ের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। মসজদে নববি কার্পেট লাল রংয়ের হলেও রিয়াজুল জান্নাহ অংশের কার্পেটের রং সাদা।
ওস্তুওয়ানা হান্নানা
বিশ্বনবির মিম্বারের ডান পাশে খেজুর বৃক্ষের খুঁটির স্থানে নির্মিত স্তম্ভ এটি। এ খুঁটির পাশ থেকে বিশ্বনবির মিম্বার স্থানান্তর করার সময় এটি উঁচু শব্দে কেঁদেছিল।
ওস্তুওয়ানা সারির
বিশ্বনবি যে স্থানে ই’তিকাফ করতেন এবং রাতের বেলায় যেখানে বিশ্রাম গ্রহণ করতেন। রওজা শরিফ সংলগ্ন পশ্চিম পার্শ্বে এ স্থানটির অবস্থান।
ওস্তুওয়ানা ওফুদ
বিভিন্ন স্থান থেকে আগত প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যে স্থানে বসে বিশ্বনবি বৈঠক করতেন এবং আগত লোকজন যেখানে ইসলাম গ্রহণ করতেন।
ওস্তুওয়ানা আয়েশা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার মসজিদে একটি ফজিলতপূর্ণ স্থান রয়েছে, এ স্থানে নামাজ আদায়ের ফজিলত জানলে লোকজন এ স্থানের সন্ধান পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতো। স্থানটি চিহ্নিত করতে সাহাবাগণ অনেক চেষ্টা করতেন। অবশেষে বিশ্বনবির ইন্তেকালের পর হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁর ভাগ্নে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইরকে সে জায়গাটির সন্ধান দিয়ে বলেন, ‘এটিই সেই স্তম্ভ। এই স্তম্ভটি ওস্তুওয়ানা ওফুদের পশ্চিম পাশে রওজায়ে জান্নাতের ভেতরে অবস্থিত।
ওস্তুওয়ানা আবু লুবাবা
এ স্থানটি তাওবার স্তম্ভ নামে অধিক পরিচিত। হজরত আবু লুবাব ‘র একটি ভুলের জন্য তিনি নিজেকে এই স্তম্ভের সঙ্গে বেঁধে বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ না পর্যন্ত বিশ্বনবি নিজ হাতে বাঁধন খুলে না দেবেন; ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এর সঙ্গে বাঁধা থাকব।
বিশ্বনবি বলেছিলেন, ‘আল্লাহ তাআলার নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এ বাঁধন খুলব না।’ এভাবে দীর্ঘ ৫০ দিন অতিবাহিত হয়ে যায়। পরে হজরত আবু লুবাবার তওবা কবুল হলে বিশ্বনবি নিজ হাতে তাঁর বাঁধন খুলে দিলেন। এ স্থানটি ওস্তুওয়ানা ওফুদের পশ্চিম পাশে রওজায়ে জান্নাতের ভেতর অবস্থিত।
ওস্তুওয়ানা জিবরিল
হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম যখন হজরত দাহিয়াতুল কালবি রাদিয়াল্লাহু আনহুর আকৃতিতে ওহি নিয়ে আসতেন; তখন তাঁকে অধিকাংশ সময় তিনি এখানে বসা থাকতেন।
বিশ্বনবির মিহরাব
কাউকে কষ্ট না দিয়ে নিষিদ্ধ সময় ব্যতিত এ স্থানে নফল নামাজ পড়া উত্তম। এ মিহরাবের ডান পাশেই বিশ্বনবির নামাজে দাঁড়ানোর জায়গা ছিল।
আল্লাহ তাআলা হজ ও ওমরা পালনকারীদের এ স্থানসমূহে ইবাদাত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে এ সকল স্থান জিয়ারাত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর