ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

ধর্মীয় শিক্ষা ও আগামীর ভবিষ্যৎ

প্রকাশিত: ১০:২৬ এএম, ২৩ জুলাই ২০১৬

সন্দেহাতীতভাবে নৈতিক মানদণ্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল-কুরআন। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব বিষয়ের সবিস্তার ভারসাম্যপূর্ণ বিধান প্রণীত হয়েছে এ গ্রন্থে। তাই সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের জন্য কুরআনের শিক্ষার বিকল্প নেই। এ কুরআনের সুশিক্ষাই মানুষের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিশু-কিশোরদেরকে সঠিক জীবন ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের কারিগর হিসেবে তৈরি করতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে এক ভয়াবহ নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যারা এ অবস্থার সৃষ্টিকারী তাদের অধিকাংশই অল্প বয়সী তরুণ-যুবক। যাদের পিছনে রয়েছে অদৃশ্য ভ্রান্ত আক্বিদা বিশ্বাসী একদল রাঘববোয়াল। যারা ধর্মের নামে পথহারা তরুণ-যুবাদের দিয়ে তাদের নিজেদের জীবনের পাশাপাশি অসংখ্য নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি করেই চলেছে। এদের বেশিরভাগই ইংরেজি মাধ্যমে পড়া দেশি-বিদেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী।

আধুনিক জীবনের স্বপ্ন দেখা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান-সন্তুতিদের অংশগ্রহণও এ দলে পরিলক্ষিত হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের চলমান জীবনও আজ হুমকির মুখে। এ বিপজ্জনক সমস্যা থেকে মুক্তি লাভের উপায় হলো সমাজের সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি নৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

যেহেতু আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তাই আপনার সন্তান-সন্তুতিকে শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক সুশিক্ষায় সঠিকভাবে গড়ে তুলতে ধর্মীয় শিক্ষা ও পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আল্লাহ তাআলা পরিবারের কর্তাব্যক্তিদের লক্ষ্য করে বলেন, ‘হে মুমিমনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর। (সুরা তাহরিম : আয়াত ৬) অর্থাৎ দুনিয়ায় সকল প্রকার অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতেই জাহান্নামের ভয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিবারের শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা তাদের পিতা-মাতা ও দায়িত্বশীলদের (রাষ্ট্রের) নিকট আল্লাহ তাআলার পবিত্র আমানত। তাদের সঠিক ও সুন্দর জীবন গঠনের জন্য সুশিক্ষা দেয়ার দায়িত্বও পরিবার এবং রাষ্ট্রের। হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্ববান এবং প্রত্যেকেই আপন দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। প্রতিটি মানুষ তার পরিবার রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে দায়িত্ববান। তাকে এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর সম্পদ ও সন্তানের ব্যাপারে দায়িত্ববান। সে এ সবের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ইমাম বা নেতাকে তার নেতৃত্বে থাকা মানুষের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

সন্তান প্রতিপালন নিঃসন্দেহে সাওয়াবের কাজ। হাদিসে এসেছে, ‘পিতা-মাতার পক্ষ থেকে সন্তানকে উত্তম চরিত্র শিক্ষা দেয়ার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কোনো দান (সাদকা) হতে পারে না। (তিরমিজি, বাইহাকি, মিশকাত) আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাদের ভরণপোষণ করা। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ২৩৩) সুতরাং যে পিতা-মাতা সন্তানের ভরণপোষণ চালাবে, স্বভাবতই তার দায়িত্ব হলো- তাদের সন্তান কি করছে, কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে ইত্যাদি বিষয়ের খোঁজ-খবর নেয়া।

চলমান সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ভয়াবহ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মহামারী থেকে সমাজ ও জাতিকে মুক্ত করতে পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মীয় শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। কারণ আইন করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মীয় শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া অতিব জরুরি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ কারণেই সন্তানদের সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি পরিবারের পিতা-মাতা ও দায়িত্বশীলদের তাদের উঠতি বয়সী সন্তানদের বেশি বেশি সঙ্গ দেয়ার কথা বলেছেন। পরস্পরিক মতবিনিময়ের পরামর্শ দিয়েছেন। চলমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর এ আহবান অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।

সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়তে কুরআন হাদিসের নৈতিক শিক্ষার সিলেবাস জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার পাঠ্যসূচিতে বাড়ানো প্রয়োজন। এ শিক্ষা দিতে হবে শিশুকাল তথা জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামের প্রথম শ্রেণি থেকেই। ছোট বয়স থেকে একজন শিশুকে নৈতিক শিক্ষা প্রদান করলে, সে শিশুর দ্বারা বড় হলে অন্যায় কাজ সংঘটিত হওয়া সম্ভাবনা একেবারেই কম থাকে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে মহৎ করে গড়ে তোল এবং তাদেরকে উত্তম আদব তথা শিষ্টাচার শিক্ষা দাও। এবং সন্তানকে আদব তথা শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া এক সা’ পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী সাদকা করা থেকেও উত্তম। (তিরমিজি, মিশকাত)

বর্তমান প্রযুক্তির যুগে নতুন প্রজন্ম ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত বললেই চলে। পক্ষান্তরে অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠনের ব্যাপক তৎপরতার কারণে কোমলমতি কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা ভ্রান্ত মতবাদের শিক্ষায় অন্যায় পথে প্রভাবিত হচ্ছে।

আবার অর্থের পেছনে ব্যস্ত পিতা- মাতা তাদের সন্তানদের পেছনে পড়াশোনার নামে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ খরচ করলেও সঠিক পরিচর্যা ও সঙ্গ দেয়ার অভাবে বিপথগামী হচ্ছে আগামী প্রজন্ম। যার কারণে একই সঙ্গে বসবাস করা সত্ত্বেও আদরের সন্তান হয়ে উঠছে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য।

সুতরাং পরিবার ও সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অর্থের পিছনে অন্ধ হয়ে ছুটে চলার অস্বাভাবিক গতি থামিয়ে সন্তান-সন্তুতির প্রতি দায়িত্ব পালন করা এবং ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা সময়ের দাবি। যে শিক্ষা আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য দিয়ে গেছেন। প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জনকে ফরজ করেছেন। বিশেষ করে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করলে মানুষ হালাল-হারাম, ন্যায়-অন্যায় বুঝতে পারবে, ন্যূনতম ততটুকু জ্ঞান অর্জন করাকে ফরজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

পরিশেষে...
এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, পরিবার সমাজ তথা রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় জীবনে সঠিক ভূমিকা পালনের মৌলিক শিক্ষা লাভের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হলো পারিবারিক পরিবেশ। সে কারণেই মায়ের কোলকেই শিশুর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন আল্লামা আবদুর রহমান কাশগরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। আসুন নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত থেকে মুক্তি দিতে পরিবার থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করি।

পরিবারের সন্তানের ওপর পিতা-মাতার হক, পিতা-মাতার ওপর সন্তানের হক, স্বামীর ওপর স্ত্রীর হক, স্ত্রীর ওপর স্বামীর হক, ভাইবোন, পাড়া-প্রতিবেশীর হক সম্পর্কিত যাবতীয় শিক্ষার প্রতি পরস্পরকে উদ্বুদ্ধ করে তুলি।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিপনা থেকে আমাদের আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে দেশের সকল শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষা কারিকুলামে সুবিধাবাদী রাজনীতিমুক্ত সঠিক ও স্বচ্ছ কুরআন-হাদিসের শিক্ষার বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়ের দাবি। তাই ধর্মীয় শিক্ষাই হোক আগামী প্রজন্মের মুক্তির রক্ষা কবচ, এ প্রত্যাশায়…

এমএমএস/আরআইপি

আরও পড়ুন