ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

রমজানের শিক্ষায় আলোকিত হোক জীবন

প্রকাশিত: ১১:২৫ এএম, ০৬ জুলাই ২০১৬

আজ ৩০ রমজান। সিয়াম-সাধনার শেষ দিন অতিবাহিত করছেন রোজাদারগণ। আত্মশুদ্ধির চূড়ান্ত অর্জণের পথে রোজাদার। প্রত্যেকেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন আগামী রমজান পর্যন্ত পাপমুক্ত জীবন-যাপনের। বিশেষ করে রমজান থেকে মানুষ যে তিনটি জিনিস শিক্ষা লাভ করে তা হলো-

ক. কম কথা বলার শিক্ষা;
খ. অল্প নিদ্রার অভ্যাস গঠন; এবং
গ. নিজেকে স্বল্প পানাহারের জন্য তৈরি করা।

তাছাড়া রোজাদার বান্দা রমজান মাসজুড়ে অনুভব করেছেন গরিব-দুঃখীর ক্ষুধার যন্ত্রনা। একজন সফল রোজাদারের রমজানের শিক্ষার আলোকিত দিকগুলো তুলে ধরা হলো-

১. আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসায় নৈকট্য লাভ-
রোজাদারের সারাদিন পানাহার ত্যাগের মাধ্যমেই কেবল তাকওয়া অর্জন সম্ভব নয়। যদি আল্লাহর ভয় তার অন্তরে না থাকে। এ রোজার মাধ্যমেই মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয় এবং ভালোবাস তৈরি হয়। যা রোজাদারকে তাঁর নৈকট্য লাভে এগিয়ে দেয়। কারণ, আল্লাহ তাআলার ইবাদতের মধ্যে রোজা ব্যতিত সব ইবাদত লক্ষণীয়। রোজা হচ্ছে আত্মিক ইবাদত যাকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। তাই রোজাদার মনে প্রাণে আল্লাহকে ভয় করে এবং ভালোবেসেই আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে রোজা রাখে। রোজাদারের এ ভয় এবং ভালোবাসা বছরের বাকি ১১ মাস বিরাজমান থাকা জরুরি। তবেই রোজাদারের রোজার শিক্ষা সফলতা লাভ করবে।

২. ধৈর্যের শিক্ষা-
রোজা মানুষকে আল্লাহর হুকুম পালনে ধৈর্যশীল ও পরমসহিষ্ণু হতে শিখায়। সারাদিনের প্রচণ্ড ক্লান্তি সত্বেও ক্ষুধা নিবারনে ইফতারের অপেক্ষায় ধৈর্যধারণ করতে শিখায়। মানুষ চাইলেই লুকিয়ে পানাহার করতে পারে; আল্লাহর ভয়ই মানুষকে লুকিয়ে খাওয়া থেকে বিরত রাখে।

৩. নিয়মানুবর্তীতার শিক্ষা-
রোজা মানুষকে শৃংখলিত জীবনের দিকে পথ-নির্দেশ করে। রোজায় মানুষ যেমন সময় মতো সেহরি, সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাআতে আদায় করতে যথা সময়ে মসজিদে উপস্থিতি; সময় মতো ইফতার; সময় মতো তারাবিহ; নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজগুলো করতে শিখায় একজন মানুষ যদি রমজান মাসকে ফলো করে, তবে বাস্তবজীবনে একজন মানুষ নিয়ম-নিয়ন্ত্রিত সফল মানুষে পরিণত হতে পারে।

৪. রোজাদার হয়ে ওঠে পরিশ্রমী-
রোজা মানুষকে অলসতা দূর করে পরিশ্রমী হতে শিখায়। মানুষ রোজার দিনে পানাহার ত্যাগ করা সত্ত্বেও নামাজসহ অন্যান্য ইবাদাত-বন্দেগির পাশাপাশি সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে। সারা দিন রোজা রেখে রাতের বেলায় তারাবি, তাহাজ্জুদ নামাজ আদয়, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার করে। আবার শেষ রাতে ওঠে সাহরি খাওয়া ও ফজর আদায় করা অনেক কষ্টকর। এই রোজা থেকেই মানুষ পরিশ্রমী হতে শিখে। যা একজন মানুষের বাস্তব জীবনে অতিব জরুরি।

৫. রোজাদার হয়ে ওঠে সত্যবাদী-
মানুষের যতরকম খারাপ চরিত্র বা আচরণ থাকুক না কেন রমজানের রোজা তা ধুয়ে-মুছে সুন্দর জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করে তোলে। যে ব্যক্তি রোজা রাখেন তিনি কখনও মিথ্যা কথা বলতে পারেন না। মিথ্যা বলতে গেলে নিজে থেকেই একটা খারাপ লাগা অনুভূত হয়। তাছাড়া একজন রোজাদার কখনও সজ্ঞানে কোনো অবৈধ-ঘৃণিত-নিষিদ্ধ তথা হারাম কাজ করতে পারেন না। কুরআন নাজিলের মাসে কুরআনের বরকতে আল্লাহর রহমতে রোজাদার হয়ে ওঠেন সত্যবাদী।

৬. রোজা দায়িত্বশীল হতে শিখায়-
রমজানের রোজা একজন রোজাদারকে সকল প্রকার অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার নির্যাতনমূলক কাজ-কর্ম করা থেকে বিরত রাখে। পাশাপাশি পরিবার ও সমাজে যাতে কোনো রকম গর্হিত কাজ না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকে। রোজাদার কাজে কর্মে, অফিসে-আদালতে, ব্যবসা বাণিজ্যে সব জায়গায় নিজেকে যথাযথ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট রাখে। যা অন্য কোনো সময় সাধারণত দেখা যায় না। এ জন্যই আল্লাহ বান্দার জন্য এক মাসের রোজা ফরজ করেছেন; যাতে বান্দাহ বাকি ১১ মাস রোজার আলোকিত জীবন উপহার দিতে পারে।

৭. রোজার অন্যতম প্রশিক্ষণ নামাজ-
রমজানের পূর্বে যে মানুষটি নামাজ পড়তেই অলসতা করত। রমজানে সেই মানুষটি নিজে নামাজ পড়ে এবং অপরকেও নামাজের আহ্বান করে। যা আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ। এ কারণেই রমজান আসলে মানুষ মসজিদমুখী হয়। মসজিদ ফিরে পায় প্রকৃত যৌবন। প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে রোজাদার নামাজে প্রথম কাতারবন্দী হতে। এ সবই রমজানের রোজার আলোকিত শিক্ষা। যা পরেও মানুষের জীবনে বাস্তবায়িত থাকে।

৮. কুরআনের বিধান বাস্তবায়নের মাস রমজান-
রমজান আসলেই মানুষ আল্লাহর রাস্তায় বেশি বেশি দান-সাদকা করেন। সম্পদশারী ব্যক্তি জাকাত আদায় করেন। ব্যক্তি পরিবার ও সমাজরে লোকজন পরিবারের পক্ষ থেকে ফিতরাহ আদায়ে মনোযোগী হয়। কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী সব বিধিবিধান বাস্তয়নে এগিয়ে আসে। সমাজ ফিরে পায় সোনালী জীবন। অপরাধ-কুসংস্কার দূরভীত হয় সমাজ থেকে। কুরআনের বিধান বাস্তবায়নের ফলে সমাজ জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে সুখ ও শান্তি বিরাজ করে। যা এক অতুলণীয় উপমা।

৯. গোনাহমুক্ত হওয়ার মাস রমজান-
আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদেরকে বিগত বছরের সব গোনাহ থেকে মুক্ত করে নিষ্পাপ মাছুম করে দেয়া জন্য ঘোষণা দিয়েছেন। এ কারণেই মানুষ রমজানে আল্লাহর হুকুম পালন করে গোনাহ মাপের জন্য দিনের বেলায় পানাহার-যৌনাচার ত্যাগ করে এবং রাতের বেলায় তারাবি-তাহাজ্জুদ-সেহরির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত করে। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলাও প্রত্যেক বান্দার গোনাহ মাপে এগিয়ে আসেন। যার বাস্তবায়ন শুধুমাত্র রমজানেই সম্ভব। কেননা আল্লাহ তাআলা বান্দার বিগত জীবনের গোনাহ মাপের জন্য রেখেছেন হাজার মাসের চাইতেও উত্তম রাত পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর।

১০. রোজাদারের আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ-
সর্বোপরি মানুষ যে জন্য তৈরি হয় তা হচ্ছে- জান্নাতে আল্লাহ তাআলার দিদার লাভ। আল্লাহ বলেছেন- রোজা আমার জন্য রাখা হয় আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব। কেননা আল্লাহ তাআলা সকল কাজের প্রতিদান দুনিয়াতে ঘোষণা করেছেন শুধুমাত্র রোজার প্রতিদান ব্যতিত। রোজাদারের প্রতিদানের চূড়ান্ত ঘোষণা দিবেন- মহান আল্লাহ তাআলা। যার সর্বোচ্চ পর্যায় হচ্ছে আল্লাহর দিদার।

পরিশেষে..
আল্লাহ তাআলা রমজানের শিক্ষাকে বছরের বাকি ১১ মাস মুসলিম উম্মাহর দৈনন্দিন জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

আরও পড়ুন