ঈদের দিন বিশ্বনবি যে কাজগুলো করতেন
ঈদ আমাদের জন্য একটি ইবাদত ও বিরাট নিয়ামত। যা আমরা অনেকেই এ দিনটিকে নিয়ামত হিসাবে গ্রহণ করি না। এ দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে। যা আমাদের জন্য ইবাদাত এবং পালন করা আবশ্যক-
ঈদের দিন ফজরের নামাজের জামাআত
ঈদের দিনের আনন্দ যেন আমাদেরকে ফজর নামাজ থেকে গাফেল করে না দেয়। রোজাদারের প্রকৃত আনন্দই হবে ঈদের দিনের ফজরের নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করার মাধ্যমে। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি তারা ইশা ও ফজর নামাজের মধ্যে কী আছে তা জানতো তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এ দুটি নামাজের জামায়াতে উপস্থিত হতো। (বুখারি ও মুসলিম)
ঈদের দিন গোসল
ঈদের দিন সকালে ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জনে গোসল করা। হজরত ইবনে ওমর রাদিয়ালাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি ঈদ-উল-ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করতেন।
ঈদের দিন উত্তম পোশাক পরিধান
ঈদের আনন্দকে উপভোগ করতে ঈদের জামাআতে যাওয়ার পূর্বে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করা। হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি দুই ঈদের দিনে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। (বায়হাকি)
সুগন্ধি ব্যবহার ও সাজ-সজ্জা গ্রহণ
এ দিনে সব মানুষ ঈদগাহে একত্রিত হয়, তাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত হলো আল্লাহর নিয়ামাত এবং তাঁর শুকরিয়া আদায় স্বরূপ নিজেকে সর্বোত্তম সাজে সজ্জিত করা। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা তার বান্দার উপর প্রদত্ত নিয়ামাতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন।’
ফিতরা আদায়
ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সাদকায়ে ফিতর আদায় করা সুন্নাত। যাতে গরিব-দুঃখী মানুষও হাসি-খুশি মনে ঈদগাহে সবার সঙ্গে একত্রিত হতে পারে।
ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া
ঈদের দিন নামাজ আদায়ের জন্য ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। যদি ওজর থাকে তা ভিন্ন কথা। কেননা ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া সুন্নাত।
এক পথে গিয়ে অন্য পথে আসা
ঈদগাহে এক পথে গিয়ে অন্য পথে ফিরে আসা সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন। (বুখারি) অর্থাৎ যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে ফিরে না এসে অন্য পথে বাড়ি ফিরে আসতেন। এটার হিকমত হচ্ছে- যাতে উভয় পথের লোকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়।
তাকবির দেয়া
ঈদগাহে যাওয়া থেকে শুরু করে ঈদের নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত তাকবির দেয়া। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের সহজ চান, কঠিন চান না, আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করতে পারো এবং তিনি তোমাদের যে হিদায়াত দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ কর (তাকবির) এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদ-উল-ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবির পাঠ করতেন। ঈদের নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত তাকবির পাঠ করতেন। যখন ঈদের নামাজ শেষ হয়ে যেতো তখন আর তাকবির পাঠ করতেন না।
ঈদের নামাজ আদায়
ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য ঈদগাহে যাওয়া এবং ঈদের মাঠে ইমামের সঙ্গে জামাআতের সহিত ঈদের নামাজ আদায় করা।
নামাজের পর খুতবা শুনা
ঈদের নামাজ জামাআতে আদায়ের পর খুতবা বাধ্যতামূলক শুনতেই হবে এমন কথা নেই। তবে খুতবা শুনা সাওয়াবের কাজ। কারণ দুই খুতবায় আল্লাহর গুণগান, প্রশংসা, তাকবির পাঠ করা হয়। তা শ্রবণ করলে এবং পাঠ করলে অধিক সাওয়াব পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে, হজরত আব্দুল্লাহ বিন সায়েব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করলাম। যখন তিনি ঈদের নামাজ শেষ করলেন, তখন বললেন, আমরা এখন খুতবা দেব। যার ভাল লাগে সে যেন বসে আর যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে। (আবু দাউদ)
ঈদের নামাজের পূর্বে খাবার গ্রহণ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদ-উল- ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। কোনো কোনো বর্ণনা এসেছে তিনি বিজোড় সংখ্যায় খেঁজুর খেতেন। সুতরাং ঈদ-উল-ফিতরের দিনে নামাজ আদায় করতে যাওয়ার আগে খেজুর, মিষ্টান্ন বা খাবার গ্রহণ করা।
আল্লাহ আমাদের উপরোক্ত কাজগুলোর ঈদের দিন সঠিকভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন
এমএমএস/পিআর