সাহাবির বাড়িতে তিন সম্মানিত মেহমান
আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, একদিন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘর থেকে বের হয়ে আবু বকর ও ওমরকে (রা.) দেখতে পেলেন। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, এ সময়ে কী কারণে আপনারা ঘর থেকে বের হয়েছেন? তারা বললেন, ক্ষুধার তাড়নায় ঘর থেকে বের হয়েছি। আল্লাহর রাসুলও (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সেই মহান সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! আমিও একই কারণে ঘর থেকে বের হয়েছি। চলুন দেখি খাবারের কোনো ব্যবস্থা হয় কি না।
নবিজি (সা.) তাদের নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এক আনসারি সাহাবির বাড়িতে পৌঁছলেন। তিনি তখন ঘরে ছিলেন না। আনসারি সাহাবির স্ত্রী আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেখতে পেয়ে স্বাগত জানালেন। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, অমুক (অর্থাৎ তার স্বামী) কোথায়? তিনি বললেন, তিনি আমাদের জন্য মিষ্টি পানি আনতে গিয়েছেন। তখনই আনসারি সাহাবি এসে উপস্থিত হলেন। তিনি আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তার দুই সঙ্গীকে দেখে বললেন, আলহাদুলিল্লাহ! আজ আমার মতো সম্মানিত মেহমানের সৌভাগ্য লাভকারী আর কেউ নেই!
আনসারি সাহাবি বাগানে গিয়ে মেহমানদের জন্য এমন একটি খেজুরের ছড়া নিয়ে এলেন যার মধ্যে পাকা, শুকনা ও কাঁচা বিভিন্ন রকমের খেজুর ছিল। তিনি বললেন, অনুগ্রহ করে আপনারা এটা থেকে খেতে থাকুন। এরপর তিনি একটি ছুরি হাতে নিলেন। তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, দুধওয়ালা বকরি জবাই করবে না।
আনসারি সাহাবি তাদের জন্য বকরি জবাই করলেন। রান্না ও খাবারের আয়োজন করলেন। তারা খেজুর ও বকরির মাংস খেলেন, পানি পান করলেন। সবাই পরিতৃপ্ত হলে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবু বকর ও ওমরকে লক্ষ করে বললেন, ওই মহান সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, কেয়ামতের দিন নিশ্চয় আপনাদের এসব নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। আপনারা ক্ষুধার তাড়নায় ঘর থেকে বের হয়েছিলেন, ঘরে ফেরার আগেই আল্লাহর এসব নেয়ামত লাভ করলেন। (সহিহ মুসলিম: ২০৩৮)
এ ঘটনা থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই
১. এ ঘটনাটি পড়ে আমরা বুঝতে পারি নবিজি (সা.) ও কিছু সম্মানিত সাহাবির দুনিয়ার জীবন যাপন কত সাদাসিধে ছিল। কত অভাব অনটনে তাদের দিন কাটতো। মাঝে মাঝে ঘরে খাওয়ার মতো কিছুই থাকতো না। বিশেষত যে মুহাজির সাহাবিরা মক্কায় ঘরবাড়ি, ধন সম্পদ সব ফেলে মদিনায় হিজরত করেছিলেন, মদিনার প্রথম কয়েক বছর তাদের জীবন বেশ অভাব অনটনে কেটেছে।
কিন্তু সব সাহাবির অবস্থা যে এ রকম ছিল না তাও আমরা এ ঘটনা পড়ে বুঝতে পারি। সাহাবিদের মধ্যে অনেক সম্পদশালী সাহাবিও ছিলেন যারা প্রচুর খেজুর গাছ, বকরি ইত্যাদির মালিক ছিলেন। যেমন এ ঘটনায় যে সাহাবি মেহমানদারি করেছেন, তিনি সম্পদশালী ছিলেন।
ইসলামে দরিদ্র থাকা, সম্পদশালী না হওয়া আদর্শ অবস্থা নয়। ইসলাম মানুষকে দরিদ্র থাকার নির্দেশনা দেয় না, বরং সৎভাবে জীবিকা উপার্জন এবং অপচয় বা কৃপণতা না করে মধ্যপন্থায় নিজের প্রয়োজনে ব্যয়ের নির্দেশনা দেয়। দান-সদকার ক্ষেত্রেও ইসলাম অতি বাড়াবাড়ি না করে মধ্যপন্থা অবলম্বনের নির্দেশনা দেয়।
২. মেহমান ঘরে এলে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো, আনন্দিত হওয়া, আনন্দ প্রকাশ করা উত্তম সংস্কৃতি ও আচরণের অন্তর্ভুক্ত। উত্তম খাবার দিয়ে মেহমানের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা এবং এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবারের আয়োজনও করা যেতে পারে। যেমন আনসারি সাহাবি নবিজি (সা.) ও দুই সাহাবির জন্য এক ছড়া খেজুর এনেছেন, একটি বকরিও জবাই করেছেন।
৩. খাবার-পানীয় আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। খাবার খাওয়ার পর আল্লাহর শোকর আদায় করা উচিত। নবিজি (সা.) খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর সাহাবিদেরকে সুরা তাকাসুরের শেষ আয়াত মনে করিয়ে দিয়েছেন যে আল্লাহর এসব নেয়ামত সম্পর্কে কেয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবে যে আমরা কীভাবে এগুলোর শোকর আদায় করেছি।
ওএফএফ/জেআইএম