জান্নাতে প্রথম প্রবেশ করবেন যে সাহাবি
আবু বকর (রা.) ছিলেন আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্যতম প্রধান ও প্রিয় সাহাবি। ইসলামের আবির্ভাবের পর প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে তিনি একজন। বলা হয় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন মক্কার সর্বজনপ্রিয় ও প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি। আভিজাত্য, ভদ্রতা ও সুচরিত্রের জন্য তিনি সুপরিচিত ছিলেন। তার ইসলাম গ্রহণ অন্য অনেককেই ইসলাম গ্রহণে উৎসাহ জোগায়।
ইসলাম গ্রহণের পর ইসলামের প্রচার প্রসারে আবু বকরের (রা.) ত্যাগ-তিতিক্ষা, আল্লাহর ইবাদত, জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় তার অগ্রগামিতা তাকে মুসলমানদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিতে পরিণত করে। মুসলমানদের মধ্যে নবিজির (সা.) পরই ছিল তার অবস্থান। নবিজি (সা.) তাকে সাহাবিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন এবং তার অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। ওহাব আস-সুয়ায়ী থেকে বর্ণিত আলী (রা.) একদিন খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, আপনারা কি জানেন নবিজির (সা.) পর এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি কে ? সবাই বললেন আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি বললেন, না, নবিজির (সা.) পর এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আবু বকর, তারপর ওমর। (মুসনাদে আহমদ: ৮৩৪)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সা.) বলেছেন, আমার পরে আপনারা আমার সাহাবিদের মধ্যে আবু বকর ও ওমরের অনুসরণ করুন। (সুনানে তিরমিজি: ৩৬৬৩)
উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতেও প্রবেশ করবেন আবু বকর (রা.)। আবূ হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, একদিন জিবরাইল (আ.) আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে আমাকে জান্নাতের ওই দরজাটি দেখান যে দরজা দিয়ে আমার উম্মাত জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন আবু বকর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল! আমার ইচ্ছা হচ্ছে, যদি এ সময় আমি আপনার সাথে থাকতাম, তা হলে জান্নাতের ওই দরজা দেখতে পেতাম। তখন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে আবু বকর! আমার উম্মতের মধ্যে তুমিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৫৮৩)
নবুয়্যতপ্রাপ্তির আগ থেকেই নবিজির (সা.) সাথে আবু বকরের অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব ছিল। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি নবিজির (সা.) প্রধান সাহায্যকারীতে পরিণত হওয়ায় তাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়। রাসুল (সা.) যেমন তাকে তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু মনে করতেন, নবিজির (সা.) প্রতিও তার অনুরাগ ও ভালোবাসা ছিল সর্বাধিক। নবিজি (সা.) কখনও নিজের মৃত্যু বা বিদায়ের কথা বললে তিনি কেঁদে ফেলতেন।
আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে বললেন, আল্লাহ তাআলা তার বান্দাকে দুনিয়া ও আল্লাহর কাছে যা আছে-এ দুয়ের মধ্যে একটি গ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন। তিনি আল্লাহর কাছে যা আছে, তা গ্রহণ করেছেন।
এ কথা শুনে আবু বকর (রা.) কেঁদে ফেললেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, এই বৃদ্ধ কাঁদছেন কেন? আল্লাহ তার এক বান্দাকে দুনিয়া ও আল্লাহর কাছে যা আছে-এ দুয়ের একটা গ্রহণ করার এখতিয়ার দিলে তিনি আল্লাহর কাছে যা আছে তা গ্রহণ করেছেন। এখানে কাঁদার মতো কী আছে! আমি বুঝতে পারিনি আল্লাহর রাসুলই (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন সেই বান্দা। এটা ছিল তার বিদায়ের ইঙ্গিত। আবু বকর (রা.) ছিলেন আমাদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি।
নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবু বকরকে কাঁদতে দেখে বললেন, আবু বকর, তুমি কাঁদবে না। নিজের সাহচর্য ও সম্পদ দিয়ে আমার প্রতি যিনি সবচেয়ে বেশি অনুগ্রহ করেছেন, তিনি আবু বকর। (সহিহ বুখারি: ৪৬৬)
ওফাতের আগে নবিজির (সা.) যখন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তাকে তার জায়গায় নামাজের ইমামতির দায়িত্ব দেন। নবিজির (সা.) ওফাতের পর সাহাবিদের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে তিনি মুসলমানদের খলিফা নির্বাচিত হন।
ওএফএফ/জেআইএম