হাদিস বলার আগে যাচাই করে নেওয়া ফরজ
‘হাদিস’ একটি আরবি শব্দ যার মূল অর্থ কথা বা মন্তব্য। ইসলামে হাদিস বলে হজরত মুহাম্মাদের (সা.) কথা, কাজ ও নীরব অনুমোদন বোঝানো হয়। মুহাম্মাদ (সা.) যা বলেছিলেন, যা করেছিলেন এবং যে কাজ দেখার পর নীরবতা অবলম্বন করেছিলেন- এ সবই হাদিস গণ্য হয়।
আল্লাহর রাসুলের (সা.) পরে তার সাহাবিরা যেসব হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং আমাদের পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে পৌঁছেছে, সেগুলো আমরা হাদিস হিসেবে গ্রহণ করতে পারি, বর্ণনা করতে পারি বা বলতে-লিখতে পারি। নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়া কোনো কথা ‘হাদিস’ হিসেবে বর্ণনা করা বা আল্লাহর রাসুলের (সা.) নামে মিথ্যা রটনা করা হারাম ও অত্যন্ত ভয়াবহ গুনাহের কাজ।
মুগিরা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি,
إِنَّ كَذِبًا عَلَيَّ لَيْسَ كَكَذِبٍ عَلَى أَحَدٍ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنْ النَّارِ
আমার ওপর মিথ্যারোপ করা অন্য কারো ওপর মিথ্যারোপ করার মত নয়। যে ব্যক্তি আমার ওপর মিথ্যারোপ করে সে অবশ্যই তার ঠিকানা জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়। (সহিহ বুখারি: ১২৯১)
আলী (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
لاَ تَكْذِبُوا عَلَىَّ، فَإِنَّهُ مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ فَلْيَلِجِ النَّارَ
তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না। কারণ আমার ওপর যে মিথ্যারোপ করবে সে জাহান্নামে যাবে। (সহিহ বুখারি: ১০৬)
তাই কোনো কথা ‘হাদিস’ বা নবিজির (সা.) বক্তব্য হিসেবে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা ফরজ। কেউ কোনো কথাকে যদি ‘হাদিস’ হিসেবে বর্ণনা করতে চায়, তার ওপর ফরজ হলো, প্রথমে যারা জানে তাদের থেকে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া যে, যে কথাটি সে হাদিস হিসাবে বর্ণনা করতে চাচ্ছে তা বাস্তবেই হাদিস কি না। যদি হাদিস হয় তাহলে তা পূর্ণ সতর্কতার সাথে নিজের পক্ষ থেকে কোনো কিছু বৃদ্ধি না করে বর্ণনা করা যেতে পারে।
নির্ভরযোগ্য আলেমদের রচিত বইয়ে কোনো হাদিস যদি নির্ভরযোগ্য কিতাবের সূত্রে উল্লেখ করা হয়, তাহলে তা ‘হাদিস’ হিসেবে বলা যেতে পারে। যে কোনো বইয়ে ‘হাদিস’ হিসেবে কিছু পেলেই তা যাচাই করা ছাড়া বর্ণনা করা যাবে না।
কোনো হাদিস নির্ভরযোগ্য বা বিশুদ্ধ কি না তা না জেনে বর্ণনা করলে তা যদি বিশুদ্ধও হয়, তবুও বর্ণনাকারীর গুনাহ হবে কারণ সে এটি বিশুদ্ধ না জেনে এবং যাচাই না করে বর্ণনা করেছে।
হাদিস সাধারণত আমরা সওয়াব অর্জনের জন্যই বলে থাকি। কিন্তু সঠিকভাবে না জেনে, যাচাই না করে বললে সওয়াবের বদলে গুনাহ লেখা হয়। ওপরে উল্লিখিত হাদিসগুলোতে নবিজির (সা.) সতর্কবার্তাগুলো মনে রেখে এই ভয়াবহ গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করা উচিত। সওয়াব অর্জন করতে গিয়ে আমরা যেন সওয়াবের বদলে গুনাহগার না হই।
ওএফএফ/এমএস