ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:০৬ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২৪

সুরা ইয়াসিন কোরআনের ৩৬তম সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ৮৩ এবং রুকুর সংখ্যা ৫। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। কোরআনের সুরা সমূহের মধ্যে সুরা ইয়াসিনের বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্ব রয়েছে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক বস্তুর হৃদয় থাকে, কোরআনের হৃদয় হলো সুরা ইয়াসিন। যে ব্যক্তি একবার সুরা ইয়াসিন পড়বে, মহান আল্লাহ তাকে দশবার সমগ্র কুরআন পড়ার সওয়াব দান করবেন। (সুনানে তিরমিজি: ২৮৮৭)

মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে বসে সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। নবিজির (সা.) একটি হাদিসে মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে বসে সুরা ইয়াসিন পাঠ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মা’কিল ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আপনারা আপনাদের মৃতদের জন্য সুরা ইয়াসিন পাঠ করুন। (সুনানে আবু দাউদ: ৩১২১)

সাহাবি ও তাবেঈদের মধ্যে মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে বসে সুরা ইয়াসিন পাঠের প্রচলন ছিল। সাফওয়ান (রহ.) কয়েকজন তাবেঈ থেকে বর্ণনা করেন যে তারা সাহাবি গুজাইফ ইবনে হারেসের (রা.) মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। তখন তিনি বললেন, আপনাদের মধ্যে কেউ কি সুরা ইয়াসিন পাঠ করতে পারেন? তখন সালেহ ইবনে শুরাইহ (রহ.) সুরা ইয়াসিন পড়তে শুরু করেন। চল্লিশ আয়াত পর্যন্ত পড়া হতেই গুজাইফের (রা.) মৃত্যু হয়। সাফওয়ান (রহ.) বলেন, তাবেঈরা বলতেন, মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশের বসে সুরা ইয়াসিন পাঠ করলে তার মৃত্যু যন্ত্রণা লাঘব হয়। (মুসনাদে আহমদ: ৪/১০৫)

এ ছাড়া মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে বসে সুরা ইয়াসিন পাঠ করলে তা শুনে মুমূর্ষু ব্যক্তির অন্তরে ঈমানের চেতনা জাগ্রত হয়। সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াতের কারণে সেখানে আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হয়। শয়তান দূরে সরে যায়। ফলে মৃত ব্যক্তি আল্লাহর রহমতে ঈমানসহ মৃত্যু বরণের তওফিক লাভ করে।

মৃত ব্যক্তির পাশে বসে সুরা ইয়াসিন পাঠের কোনো ফজিলত আছে?

মৃত্যু হয়ে যাওয়ার পর মৃতের পাশে বসে সুরা ইয়াসিন বা কোরআনের অন্যান্য জায়গা থেকে পাঠ করার কোনো বিশেষ ফজিলত জানা যায় না। নবিজির (সা.) যুগে বা সাহাবিদের মধ্যে মৃতের পাশে বসে কোরআন বা বিশেষ কোনো সুরা পাঠ করার প্রচলন ছিল -এমন কোনো বর্ণনা নেই। যদিও এটাকে অবৈধ বলার মতো কোনো দলিলও নেই।

ওলামায়ে কেরাম বলেন, কারো মৃত্যুর পর তাকে গোসল দেওয়ার আগে লাশ না ঢেকে তার পাশে বসে সশব্দে কোরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ, নিঃশব্দে তিলাওয়াত করলে সমস্যা নেই। আর লাশ আপাদমস্তক ঢেকে দিলে গোসল দেওয়ার আগেও তার পাশে বসে সশব্দে কোরআন তিলাওয়াত করা জায়েজ।

মৃতের আত্মায় সোয়াব পৌঁছানোর জন্য সুরা ইয়াসিন পাঠ করা যায়

মৃতের আত্মায় সওয়াব পৌছানো বা তার উপকারে আসার সুন্নত দুটি পদ্ধতি হলো মৃতের জন্য দোয়া করা এবং সদকা করা। নবীজি (সা.) ও সাহাবিদের থেকে বহু সূত্রে মৃতের জন্য এ দুটি আমলের কথা বর্ণিত রয়েছে।

কোরআনে পূর্ববর্তী মুসলমানদের জন্য পরবর্তী মুসলমানদের ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ الَّذِیْنَ جَآءُوْ مِنْۢ بَعْدِهِمْ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَ لِاِخْوَانِنَا الَّذِیْنَ سَبَقُوْنَا بِالْاِیْمَانِ

যারা তাদের (অর্থাৎ মুহাজির ও আনসারদের) পরে এসেছে। তারা বলে, হে আমাদের রব! ক্ষমা করুন আমাদের এবং আমাদের সেই ভাইদেরও যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে। (সুরা হাশর: ১০)

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, সাদ ইবনে উবাদার (রা.) অনুপস্থিতিতে তার মা ইন্তেকাল করেন। তিনি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা মারা গেছেন। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার কোনো উপকারে আসবে? নবিজি (সা.) বললেন, হাঁ। সাদ রা. বললেন, আমি আপনাকে সাক্ষী রাখছি যে, আমি আমার ‘মিখরাফ’ নামের বাগানটি আমার মায়ের জন্য সদকা করে দিলাম। (সহিহ বুখারি: ২৭৫৬)

এ ছাড়া নফল নামাজ পড়ে, নফল রোজা রেখে ও সুরা ইয়াসিনসহ কোরআনের যে কোনো জায়গা থেকে তিলাওয়াত করেও মৃতের কাছে সওয়াব পৌঁছানোর জন্য দোয়া করা যায়।

মৃতের আত্মায় সওয়াব পৌঁছানোর জন্য কোরআন তিলাওয়াত করা নবউদ্ভাবিত পদ্ধতি বা বিদআত নয়।

ওএফএফ/এএসএম

আরও পড়ুন