মানুষ হত্যাকারী অভিশপ্ত ও চিরজাহান্নামি
ইসলামে বড় অপরাধ ও পাপসমূহের একটি হলো নিরপরাধ মানুষ হত্যা বা খুন। মানুষের হক সম্পর্কিত সবচেয়ে বড় অপরাধ এটি। ইসলামে মানুষ হত্যা দুনিয়াতে দণ্ডণীয় অপরাধ, এর শাস্তি ভোগ করতে হবে আখেরাতেও। একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার অপরাধ কত ভয়াবহ তা ফুটে ওঠে এ আয়াতে, আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَنۡ قَتَلَ نَفۡسًۢا بِغَیۡرِ نَفۡسٍ اَوۡ فَسَادٍ فِی الۡاَرۡضِ فَكَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِیۡعًا وَ مَنۡ اَحۡیَاهَا فَكَاَنَّمَاۤ اَحۡیَا النَّاسَ جَمِیۡعًا
যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা জমিনে সন্ত্রাস সৃষ্টির কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করলো সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল। আর যে একজন মানুষের প্রাণ বাঁচালো, সে যেন সব মানুষকে বাঁচালো। (সুরা মায়েদা: ৩২)
একাধিক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষ হত্যাকে কুফরি বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুসলিমকে গালি দেয়া গুনাহের কাজ এবং তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা কুফুরি। (সহিহ মুসলিম: ১২৪)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোরবানির দিন সবাইকে সমবেত করে একটি ভাষণ দেন। তাতে তিনি বলেন, হে লোক সকল! আজকের এ দিনটি কোন্ দিন? সকলেই বলেন, সম্মানিত দিন। তিনি বলেন, এ শহরটি কোন শহর? তারা বলেন, সম্মানিত শহর। তিনি বলেন, এ মাসটি কোন মাস? তারা বলেন, সম্মানিত মাস। তিনি বলেন, আপনাদের রক্ত, আপনাদের সম্পদ, আপনাদের সম্মান আপনাদের জন্য তেমনই সম্মানিত, যেমন সম্মানিত আপনাদের এ দিনটি, আপনাদের এ শহর এবং আপনাদের এ মাস। এ কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন। পরে মাথা উঠিয়ে বলেন, হে আল্লাহ! আমি কি আপনার বাণী পৌঁছে দিতে পেরেছি? হে আল্লাহ! আমি কি আপনার বাণী পৌঁছে দিতে পেরেছি? উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন অনুপস্থিত ব্যক্তিদের কাছে এই কথা পৌঁছে দেয়। আমার পর আপনারা একে অপরকে হত্যা করে কুফরির দিকে ফিরে যাবেন না। (সহিহ বুখারি: ১৭৩৯)
হত্যাকারী বা খুনি অভিশপ্ত এবং তার শাস্তি স্থায়ী জাহান্নাম। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ مَنۡ یَّقۡتُلۡ مُؤۡمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهٗ جَهَنَّمُ خٰلِدًا فِیۡهَا وَ غَضِبَ اللّٰهُ عَلَیۡهِ وَ لَعَنَهٗ وَ اَعَدَّ لَهٗ عَذَابًا عَظِیۡمًا
যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম; যাতে সে স্থায়ীভাবে থাকবে, তার ওপর আল্লাহর ক্রোধ ও অভিশাপ এবং আল্লাহ তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সুরা নিসা: ৯৩)
কেয়ামতের দিন বান্দার হকের সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধসমূহের মধ্যে হত্যার বিচার হবে সর্বপ্রথম। (সহিহ বুখারি ৬৫৩৩, সহিহ মুসলিম ১৬৭৮) অন্যায়ভাবে নিহত ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়ে হত্যাকারীর বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ করবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কেয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীকে মাথার সামনের দিকের চুল ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসবে। তার শরীর থেকে রক্ত ঝরতে থাকবে এবং সে বলতে থাকবে, হে আমার রব! এই ব্যক্তিই আমাকে হত্যা করেছে। এ কথা বলতে বলতে সে আরশের কাছে চলে যাবে। (সুনানে নাসাঈ: ৪০০৫, সুনানে তিরমিজি: ৩০২৯)
অর্থাৎ হত্যার অপরাধকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং হত্যাকারীর কঠিন শাস্তি হবে।
ওএফএফ/এএসএম