ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

যেভাবে দীনের দাওয়াত দিয়েছিলেন নবি নুহ (আ.)

ওমর ফারুক ফেরদৌস | প্রকাশিত: ০৬:৪১ পিএম, ০৩ জুলাই ২০২৪

সুরা নুহ কোরআনের ৭১তম সুরা; এর আয়াত সংখ্যা ২৮, রুকু সংখ্যা ২। সুরা নুহ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সুরাটিতে আল্লাহর নবি হজরত নুহ (আ.) ও তার সম্প্রদায়ের কথা বর্ণিত আছে। নবি নুহের (আ.) দাওয়াত, দীর্ঘকাল দাওয়াত দেওয়ার পরও তার জাতির দীন বিমুখ থাকা, নবি নুহের (আ.) দোয়া, আল্লাহর শাস্তি নেমে আসা ইত্যাদি এ সুরার আলোচ্যবিষয়।

আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কী জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে এ সুরাটি নাজিল হয়।

সুরা নুহের ১-২০ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন কীভাবে নুহ (আ.) তার জাতিকে দাওয়াত দিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, “আমি নূহকে প্রেরণ করেছিলাম তাঁর সম্প্রদায়ের প্রতি একথা বলে যে, তুমি তোমার সম্প্রদায়কে সতর্ক কর, তাদের প্রতি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আসার আগে। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্যে স্পষ্ট সতর্ককারী। এ বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহ তাআলার এবাদত কর, তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আল্লাহ তাআলা তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার নির্দিষ্টকাল যখন হবে, তখন অবকাশ দেয়া হবে না, যদি তোমরা তা জানতে!

সে বলল, হে আমার রব! আমি আমার সম্প্রদায়কে দিবারাত্রি দাওয়াত দিয়েছি; কিন্তু আমার দাওয়াত তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি করেছে। আমি যতবারই তাদেরকে দাওয়াত দিয়েছি, যাতে আপনি তাদের ক্ষমা করেন, ততবারই তারা কানে অঙ্গুলি দিয়েছে, মুখমন্ডল বস্ত্রাবৃত করেছে, জেদ করেছে এবং খুব ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে।

আমি তাদেরকে প্রকাশ্যে দাওয়াত দিয়েছি, আমি ঘোষণাসহ প্রচার করেছি এবং গোপনে চুপিসারে বলেছি। আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ত তি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।

তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতে চাচ্ছনা? অথচ তিনি তোমাদের বিভিন্ন স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ কিভাবে সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। সেখানে চন্দ্রকে রেখেছেন আলোরূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের মৃত্তিকা থেকে উদগত করেছেন। অতঃপর তাতে ফিরিয়ে নিবেন এবং আবার পুনরুত্থিত করবেন। আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্যে ভূমিকে করেছেন বিছানা। যাতে তোমরা চলাফেরা কর প্রশস্ত পথে।”

এ আয়াতগুলো থেকে আমরা যে শিক্ষা ও নির্দেশনা পাই:

১. আল্লাহ তাআলা তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানুষকে হেদায়াত গ্রহণের সুযোগ দেন। হেদায়াত গ্রহণের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেন না। মানুষ যখন যথেষ্ট সুযোগ পেয়েও আল্লাহর দীন থেকে বিমুখ থাকে, তখন আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে। এই শাস্তি দুনিয়াবি বালা-মসিবতের মাধ্যমে হতে পারে। কুফরের ওপর মৃত্যুবরণ করে চিরজাহান্নামী হওয়ার মাধ্যমেও হতে পারে।

২. দীনের দাওয়াত দিতে হয় নম্রতা, হেকমত ও ধৈর্যের সাথে। মানুষের অবস্থা অনুযায়ী দাওয়াতের পদ্ধতিও বিভিন্ন রকম হওয়া উচিত।

৩. মানুষ যখন জেনেবুঝে বা বোঝার চেষ্টা না করেই সত্য বারবার প্রত্যাখ্যান করে, ঔদ্ধত্য দেখায়, তখন তার অন্তরে মোহর পড়ে যায়। সে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে যায়। দীনের বাণী আর তার অন্তরে প্রবেশ করে না।

৪. ইমান ও তাকওয়ার জন্য যেমন আখেরাতের পুরস্কার রয়েছে, দুনিয়ার অনেক বরকত ও পুরস্কারও রয়েছে। ইমান, তাকওয়া ও নেক আমলের কারণে আল্লাহ দুনিয়ার ধন-সম্পদ ও স্বচ্ছলতাও দান করেন। সুরা আরাফে আল্লাহ বলেছেন,

وَ لَوۡ اَنَّ اَهۡلَ الۡقُرٰۤی اٰمَنُوۡا وَ اتَّقَوۡا لَفَتَحۡنَا عَلَیۡهِمۡ بَرَکٰتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَ الۡاَرۡضِ

আর যদি নগরবাসীরা (কোনো দেশ বা সমাজের লোকেরা) ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে আমি অবশ্যই আকাশ ও জমিন থেকে বরকতসমূহের দরজা তাদের জন্য খুলে দিতাম। (সুরা আরাফ: ৯৬)

৫. বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করলে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা রিজিক বৃদ্ধি, উত্তম প্রাকৃতিক পরিবেশ, সম্পদ ও সন্তান দিয়ে সাহায্য করতে পারেন যেমন নবি নুহের (আ.) জাতিকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। রাসুল (সা.) প্রতি ফরজ নামাজের পর তিনবার ইস্তিগফার পড়তেন। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম) এ সহজ আমলটি আমরাও নিয়মিত করতে পারি।

ওএফএফ/জিকেএস

আরও পড়ুন