পশু জবাইয়ের যে ভুলে নষ্ট হতে পারে কোরবানির সওয়াব
কোরবানি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। মহান আল্লাহ তাআলার হুকুম। ঈদুল আজহার ৩ দিন যাদের কোরবানি করার সামর্থ্য থাকে, তাদের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরআনে আল্লাহ তাআলা নামাজের সাথে যুক্ত করে কোরবানির নির্দেশ দিয়েছেন,
فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَ انۡحَرۡ
তোমার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় করো ও কোরবানি করো। (সুরা কাওসার: ২)
কোরবানির সময়কাল হলো জিলহজের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। এই তিন দিনের যেকোনো দিন কোরবানি করা জায়েজ। তবে প্রথম দিন কোরবানি করা সর্বাপেক্ষা উত্তম। তারপর দ্বিতীয় দিন। তারপর তৃতীয় দিন।
কোরবানির পশু জবাইয়ের সঠিক পদ্ধতি
জবাই করার সময় কোরবানির পশু কিবলামুখী করে শোয়াবে। তারপর ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করবে। ইচ্ছাকৃত বিসমিল্লাহ না পড়লে জবাইকৃত পশু খাওয়া হারাম হয়ে যাবে, ভুলক্রমে বিসমিল্লাহ ছুটে গেলে তা খাওয়া জায়েজ।
কোরবানির পশু জবাইয়ের সময় জবাইকারীর কোরবানিদাতাদের নাম জানা বা তাদের জন্য নিয়ত করা জরুরি নয়। কোরবানিদাতাদের নিয়তই যথেষ্ট।
জবাই করার সময় চারটি রগ কাটা জরুরি : ১. কণ্ঠনালি, ২. খাদ্যনালি, ৩. দুই পাশের মোটা রগ, যাকে ওয়াজদান বলা হয়। এই চারটি রগের মধ্যে যেকোনো তিনটি কাটা হলে কোরবানি শুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি দুটি কাটা হয় তবে কোরবানি শুদ্ধ হবে না।
চারটি রগ কাটা হয়ে যাওয়ার পর রক্ত প্রবাহিত হয়ে পশুর দেহ নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। পশু নিস্তেজ হয়ে গেলে চামড়া ছাড়ানো ও মাংস কাটার কাজ শুরু করা যেতে পারে।
যে ভুল অনেকে করে থাকেন
অনেকে কোরবানির পশু জবাইয়ের সময় এমন একটি ভুল করে থাকেন যে ভুলের কারণে কোরবানি হত্যায় পরিণত হতে পারে এবং কোরবানির সওয়াব নষ্ট হয়ে যেতে পারে। জবাইয়ের পর ১০/১৫ মিনিট সময় বাঁচাতে গিয়ে এ ভুলটি করা হয়। ভুলটি হলো, কোরবানির পশু জবাই করার পর স্বাভাবিক নিয়মে রক্ত প্রবাহিত হয়ে পশুর দেহ নিস্তেজ হওয়ার সুযোগ না দিয়ে ছুরি বা চাকুর আগা দিয়ে জবাইয়ের স্থানে অর্থাৎ পশুর ঘাড়ের দিকে মেরুদণ্ডে আঘাত করা। এ কারণে অনেক সময় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রক্ত প্রবাহিত হয়ে নিস্তেজ হওয়ার বদলে পশুটি হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায় এবং পশুটির দেহের প্রবাহিত রক্ত সঠিকভাবে বের হতে পারে না। ফলে পশুর মাংসের শিরা উপশিরায় রক্ত জমাট বেঁধে মাংস দূষিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতেও এ ধরনের দূষিত মাংস খেয়ে ক্যান্সারসহ বহু জটিল রোগ হতে পারে। তাই পশু জবাই যেন সঠিক পদ্ধতিতে হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি।
ওএফএফ/জেআইএম