কোরবানিদাতা যে আমল করবেন জিলহজের প্রথম দিন থেকে
ঈদুল আজহা মুসলমানদের দুটি বড় উৎসবের অন্যতম। রাসুল (সা.) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় গেলেন, তখন সেখানে জাহেলি যুগ থেকে প্রচলিত দু’টি উৎসবের দিন ছিল; শরতের পূর্ণিমায় ‘নওরোজ’ এবং বসন্তের পূর্ণিমায় ‘ মেহেরজান’। রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, এই দুই দিন কীসের? মদিনাবাসী সাহাবিরা বললেন, জাহেলি যুগ থেকে আমরা এই দুই দিন খেলাধুলা ও আনন্দ করি। রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহ এই দুই দিনের বদলে তোমাদের নতুন দু’টি উৎসবের দিন দিয়েছেন: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। (মুসনাদে আহমদ ১৩০৫৮)।
এভাবে দ্বিতীয় হিজরি অর্থাৎ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে মুসলমানদের এ দুটি উৎসবের সূচনা হয়। রাসুল (সা.) ঘোষণা করেন, ‘সব জাতিরই ঈদ বা উৎসবের দিন থাকে, এটা আমাদের ঈদ।’ (সহিহ বুখারি ৩৯৩১, সহিহ মুসলিম ২০৯৮)।
ঈদুল আজহার দিন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করা প্রাপ্তবয়স্ক, সামর্থ্যবান পুরুষ ও নারীদের ওপর ওয়াজিব। আল্লাহ তার প্রিয় রসূলকে নামায আদায়ের সাথে কোরবানি করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তোমার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় কর এবং কুরবানি করো।” (সূরা কাওসার: ২) কোরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, “প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ হিসেবে যে সব চতুস্পদ জন্তু দিয়েছেন সেগুলোর উপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ; অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর; আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও। (সুরা হজ: ৩৪) রসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের সাথে নামাজ আদায় করতে না আসে। (মুসনাদে আহমদ ১৬/১২০)
ঈদুল আজহা পালিত হয় জিলহজের ১০ তারিখ, এর দশদিন পূর্ব থেকে অর্থাৎ জিলহজের ১ তারিখ থেকে কোরবানিদাতাদের জন্য চুল, নখ না কাটা মুস্তাহাব। উম্মে সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা কোরবানি করবে, জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে তারা যেন চুল নখ না কাটে। (সহিহ মুসলিম: ১৯৭৭)
এ হাদিসের ভিত্তিতে ফকিহরা বলেন, জিলহজের চাঁদ ওঠার পর থেকে কোরবানিদাতাদের জন্য নখ, চুল, লোম না কাটা মুস্তাহাব। তবে এ হুকুম তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে যারা জিলকদের শেষে নখ-চুল কেটেছে। নখ-চুল বেশি লম্বা হয়ে গেলে কেটে ফেলতে হবে।
এ কারণে জিলকদ মাস শেষ হওয়ার আগেই চুল, গোঁফ ও শরীরের অন্যান্য জায়গার যেসব লোম নিয়মিত কাটতে হয়, সেগুলো কেটে ফেলা উচিত। যেন জিলহজের শুরু থেকে এই মুস্তাহাব আমলটি করা যায়।
এ বছর (২০২৪) ঈদুল আজহা হতে পারে ১৬ বা ১৭ জুন। জিলহজের চাঁদ দেখা যেতে পারে আগামীকাল শুক্রবার ৭ জুন দিবাগত রাতে। তাই যারা কোরবানি করবে, তাদের আগামীকাল সন্ধ্যার আগেই এ চুল, গোঁফ ও অন্যান্য অযাচিত লোম কেটে ফেলতে হবে।
যারা কোরবানি করবে না, তারা কি এ আমলটি করবে?
যারা কোররবানি করবে না তাদের জন্য এ হুকুম প্রযোজ্য কি না এ ব্যাপারে কেউ কেউ বলেছেন, এ হুকুম শুধুমাত্র কোরবানিদাতাদের জন্য প্রযোজ্য। উপরোক্ত হাদিসে শুধু কোরবানিদাতাদের কথাই বলা হয়েছে।
তবে কারো কারো মতে সামর্থ্য না থাকায় যারা কোরবানি করবে না, আমলটি তাদের জন্যও। তাদের দলিল হলো আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস। তিনি বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একবার তার এক সাহাবিকে বললেন, আমাকে কোরবানির দিন ঈদ পালনের আদেশ করা হয়েছে। যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। ওই সাহাবি বললেন, যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা অর্থাৎ অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উষ্ট্রী থাকে, আমি কি তা কোরবানি করে ফেলবো? নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না, তবে তুমি চুল, নখ ও গোঁফ কাটবে এবং নাভীর নিচের লোম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কোরবানি বলে গণ্য হবে। (সুনানে আবু দাউদ: ২৭৮৯)
এ হাদিসে কোরবানির ঈদের দিন নখ, চুল, গোঁফ ও অন্যান্য অযাচিত লোম কাটার নির্দেশ থেকে এর আগের দশ দিন না কাটার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাই যারা সামর্থ্যের অভাবে কোরবানি করতে পারছে না, তারাও যদি জিলহজের প্রথম দিন থেকে চুল-নখ না কেটে কোরবানির ঈদের দিন কাটেন, হতে পারে তারা কোরবানির সওয়াব পেয়ে যাবেন।
ওএফএফ/জিকেএস