হজের আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি
মওলবি আশরাফ
হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। কোনো ব্যক্তি যদি কাবা ঘরে যাওয়া ও ফিরে আসা পরিমাণ অর্থের মালিক হয়, এছাড়াও তার মৌলিক খরচ ও পরিবারের ভরণপোষণের খরচ থাকে, তবে তার উপর হজ ফরজ। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরাহ আল্লাহর জন্য পালন কর।’ (সুরা বাকারা: ১৯৬)
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য। (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)
হজ তিন প্রকার
১. ওমরাহ ছাড়া শুধু হজ। একে ইফরাদ হজ বলে। এমন হজকারীকে বলা হয় মুফরিদ।
২. এক এহরামে একসাথে হজ ও ওমরাহ পালন। একে কেরান হজ বলে। এমন হজকারীকে বলা হয় কারিন।
৩. দুই এহরামে আলাদা আলাদাভাবে হজ ও ওমরাহ। একে তামাত্তু হজ বলে। এমন হজকারীকে বলা হয় মুতামাত্তি। নতুন হাজিদের জন্য তামাত্তু করা ভালো।
হজের নিয়ত
কারিন হাজি নিয়ত করবেন, ‘হে আল্লাহ, আমি হজ ও ওমরাহর নিয়ত করলাম, আমার জন্য সব সহজ করে দিন, আমার হজ কবুল করে নিন।’
আর মুতামাত্তি ও মুফরিদ হাজি নিয়ত করবেন, ‘হে আল্লাহ, আমি হজের নিয়ত করলাম, আমার জন্য হজের সব কাজ সহজ করে দিন, আমার হজ কবুল করে নিন।’
হজের আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি
ইসলামে আমল যেমন কাম্য, তেমনই আমলটা সঠিক ও পরিপূর্ণ হওয়াও কাম্য। আল্লাহর রাসুল (সা.) আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন— হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে ওজুর পূর্ণতা, নামাজের পূর্ণতা, আপনার পূর্ণ সন্তুষ্টি ও পূর্ণ মাগফিরাত কামনা করি। (মুসনাদে হারিস: ৪৬৯)
একটা হলো আমল শুদ্ধ হওয়া, আরেকটা হলো পরিপূর্ণ হওয়া। ওজুতে মুখ ধোয়া ফরজ, কিন্তু মুখ ধোয়ার আগে আমরা হাত ধুই, কুলি করি, মেসওয়াক করি, নাকে পানি দিই—এই কাজগুলো ওজুকে পূর্ণতা দেয়। তো হজ আদায়কারীদের কাম্য হওয়া উচিত তাদের হজ যেন পরিপূর্ণ হয়, কেবল আল্লাহর জন্য হয়। হাদিসে এসেছে, কেউ যদি যৌনতা, অশ্লীলতা ও নিষিদ্ধ সব কাজ থেকে বিরত থেকে হজ করে কেয়ামতের দিন তাকে সদ্য জন্মগ্রহণকারী শিশুর মতো গুনাহমুক্ত অবস্থায় ওঠানো হবে। (সহিহ বুখারি: ১৫২১)
হজের জন্য প্রস্তুত হতে যে কাজগুলো করবেন:
এক. খালেস নিয়ত: নিয়ত যে সহিহ হতে হবে, এটা আমরা সবাই জানি। তবে সত্যি বলতে, নিয়তই হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন কাজ। আল্লাহ না করুন, হজের নিয়তে যদি রিয়া বা লোক দেখানোর কোনো উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে সওয়াবের বদলে শিরকের গুনাহ নিয়ে ঘরে ফিরতে হতে পারে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, আমি আমার উম্মতের জন্য গোপন শিরককে সবচেয়ে বেশি ভয় করি। তাই আগে নিয়ত ঠিক করা, তারপর হজ করা।
দুই. তওবা: খাঁটি তওবা করে আল্লাহর ঘরের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া। তাহলে আল্লাহর দরবারে হজ পালনকারীর অবস্থা ও অবস্থান ভিন্ন হবে। তার দোয়া ও আমল কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
তিন. তাকওয়া: শ্রেষ্ঠ পাথেয় হলো তাকওয়া। কোরআনে আছে—‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকি লোকের এবাদতই কবুল করেন।’ (সুরা মায়েদা: ২৭) তাই মুত্তাকি হতে হবে।
চার. হালাল সম্পদ: সম্পদ হালাল হতে হবে। হালাল-হারাম মিশ্রিত হলে হবে না। দশ টাকা দিয়ে কাপড় কিনেছেন, এর মধ্যে এক টাকা হারাম, তবু হবে না। আল্লাহ নিজে পাক-পবিত্র, তিনি পবিত্রতাকেই কেবল পছন্দ করেন।
পাঁচ. হজের উদ্দেশ্য জানা: হজের হাকিকত, হজের শিক্ষা, হজের সফর থেকে কী নিয়ে আসবেন, কেন যাচ্ছেন, হজের তাওফিক আল্লাহর কত বড় নেয়ামত—এসব জানা।
ছয়. হজের মূল আমল সম্পর্কে জানা: হজ নিয়ে আলোচনার আগে হজের আমলগুলো ভাগ করে নেওয়া জরুরি। হাজি সাহেব আলেম না হলে অনেক সময় হজের ব্যবস্থাপনামূলক নিয়মকেও এবাদত মনে করে। তাই দুই ধরনের আমলকে আলাদা করলে পালন করা সহজ হবে।
এক ধরনের কাজ হলো সবসময়ের আমল। যেমন আপনি কীভাবে ঘর থেকে বের হবে, কীভাবে বাহনে আরোহণ করবেন। এই বিষয়গুলোও হজের আলোচনায় আসে। কিন্তু এসব হজের জন্য নির্ধারিত আমল নয়। অন্যদিকে যে কাজগুলো হজের জন্য ফরজ কিংবা ওয়াজিব সেগুলো বিশেষভাবে বুঝতে হবে।
সাত. হজের বিষয়গুলো বুঝে নেওয়া: হজ সংক্রান্ত প্রত্যেকটি নাম আরবি ভাষায়। এই পারিভাষিক নামগুলো মুখস্থ করার প্রয়োজন নেই। কেবল বিষয়গুলো বুঝে নিলেই হবে।
আট. ইতিহাস জানা: হজের সাথে সম্পৃক্ত সবকিছুর ইতিহাস জানা। একেকটা বস্তু একেকটা জায়গা—মিনা, মুজদালিফা, সাফা, মারওয়া, ইসলামের ইতিহাস ও রাসুলের (সা.) জীবনের সাথে এগুলোর সম্পর্ক জানা ও বোঝা।
ওএফএফ/জেআইএম