ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

যেভাবে নবুয়ত লাভ করেন নবিজি (সা.)

ওমর ফারুক ফেরদৌস | প্রকাশিত: ০৬:৫৪ পিএম, ১৫ মে ২০২৪

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুলের (সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি সর্বপ্রথম ওহীর সূচনা হয় সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন তা প্রভাতের আলোর মতোই সত্যে পরিণত হতো। এরপর তিনি নির্জনতা পছন্দ করতে শুরু করলেন। তিনি একাধারে কয়েকদিন পর্যন্ত নিজের পরিবার পরিজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হেরা পর্বতের গুহায় নির্জন পরিবেশে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকতে লাগলেন। তিনি কিছু খাবার সাথে নিয়ে হেরা পর্বতে যেতেন। তা শেষ হলে খাদিজার (রা.) কাছে ফিরে এসে আবার কয়েক দিনের জন্য কিছু খাবার সাথে নিয়ে যেতেন। অবশেষে একদিন হেরা গুহায় থাকাকালে তার কাছে ওহী এলো।

জিবরিল (আ.) হেরা পর্বতে এসে নবিজিকে (সা.) বললেন, ’পড়ুন!’ আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি তো পড়তে পারি না! নবিজি (সা.) বলেন, ফেরেশতা তখন আমাকে ধরে এমন জোরে চাপ দিলেন যে, তাতে আমি প্রবল কষ্ট অনুভব করলাম। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ’পড়ুন!’ আমি বললাম, আমি তো পড়তে পারি না। তখন দ্বিতীয়বার তিনি আমাকে ধরে আবারও খুব জোরে চাপলেন। এবারও আমি ভীষণ কষ্ট অনুভব করলাম। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ’পড়ুন!’ এবারও আমি বললাম, আমি পড়তে পারি না। ফেরেশতা তৃতীয়বার আমাকে দৃঢ়ভাবে চেপে ধরলেন। এবারও আমি অত্যন্ত কষ্ট অনুভব করলাম। ফেরেশতা আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,

اقرَأْ باسمِ ربِّكَ الَّذِي خَلَقَ خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمُ
পড় তোমার রবের নামে; যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে 'আলাক' থেকে। পড়, আর তোমার রব মহামহিম। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে তা শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না। (সুরা আলাক: ১-৫)

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ আয়াতগুলো আয়ত্ত করে ফিরে এলেন। তখন তার অন্তর কাঁপছিল। তিনি খাদিজাকে বললেন, চাদর দিয়ে আমাকে ঢেকে দাও। চাদর দিয়ে আমাকে ঢেকে দাও। তখন তিনি তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। তার ভয় কিছুটা কাটলে তিনি খাদিজার কাছে ঘটনা বর্ণনা করে বললেন, আমি আমার নিজের জীবন সম্পর্কে আশঙ্কাবোধ করছি।

খাদিজা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে দৃঢ়তার সাথে বললেন, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আল্লাহ তাআলা কখনোই আপনাকে অপমানিত করবেন না। আপনি আত্মীয়স্বজনের সাথে ভালো আচরণ করেন, সর্বদা সত্য কথা বলেন, অক্ষমদের দায়িত্ব বহন করেন। নিঃস্বদেরকে উপার্জন করে সাহায্য করেন, অতিথিদের মেহমানদারি করেন এবং প্রকৃত বিপদগ্রস্তদেরকে সাহায্য করেন।

খাদিজার (সা.) চাচাতো ভাই ওয়রাকা খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিল। তিনি আল্লাহর রাসুলকে সাথে নিয়ে তার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নাওফালের কাছে গিয়ে তাকে বললেন, তোমার ভাতিজা কী বলে তা একটু শোনো! ওয়ারাকা বললেন, ভাতিজা! তুমি কী দেখেছ। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা দেখেছিলেন তা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন।

ঘটনা শুনে ওয়ারাকা বললেন, এ তো সেই রহস্যময় ফেরেশতা, যাকে আল্লাহ তাআলা মুসার (আ.) কাছে পাঠিয়েছিলেন। হায়! আমি যদি তোমার নুবুওয়্যাতকালে বলবান যুবক থাকতাম। হায়! আমি যদি সেই সময় জীবিত থাকতাম যখন তোমার সম্প্রদায় তোমাকে মক্কা থেকে বের করে দেবে। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তারা কি সত্যই আমাকে বের করে দেবে? ওয়ারাকা বললেন, হ্যাঁ, তুমি যা নিয়ে দুনিয়াতে এসেছ, অনুরূপ কোন কিছু নিয়ে যে লোকই এসেছ, তার সাথেই শত্রুতাই করা হয়েছে। আমি তোমার সে যুগ পেলে সর্বশক্তি দিয়ে তোমার সাহায্য করব। এর কিছুদিন পর ওয়ারাকা মৃত্যুবরণ করলেন। এরপর বেশ কিছুদিন ওহীর আগমনও বন্ধ রইলো। (সহিহ বুখারি: ৩, সহিহ মুসলিম: ২৫২)

কিছুদিন বিরতির পর আবার ওহী আসা প্রসঙ্গে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, একদিন আমি হাঁটছি, হঠাৎ আকাশ থেকে একটি শব্দ শুনতে পেয়ে চোখ উপরে তুললাম। দেখলাম, সেই ফেরেশতা, যিনি হেরা গুহায় আমার কাছে এসেছিলেন, আকাশ ও জমিনের মাঝে একটি আসনে উপবিষ্ট। এই দৃশ্য দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। দ্রুত ঘরে ফিরে এসে বললাম, আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর, আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর! তখন আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করলেন,

یٰۤاَیُّهَا الۡمُدَّثِّرُ قُمۡ فَاَنۡذِرۡ وَرَبَّکَ فَکَبِّرۡ وَثِیَابَکَ فَطَهِّرۡ وَالرُّجۡزَ فَاهۡجُرۡ ۪

হে বস্ত্রাবৃত! ওঠ ও সতর্ক কর। আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। আর তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র কর। আর অপবিত্রতা বর্জন কর। (সুরা মুদ্দাসসির: ১-৫)

এরপর থেকে পুরোদমে ধারাবাহিক ওহী অবতীর্ণ হতে লাগল। (সহিহ বুখারি: ৪)

ওএফএফ/জেআইএম

আরও পড়ুন