যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে
সুরা ইনফিতার কোরআনের ৮২তম সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ১৯টি। সুরা ইনফিতার মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। সুরা ইনফিতারের আলোচ্য বিষয় কেয়ামত, আখেরাতের হিসাব-নিকাশ, বিশ্বাসীদের প্রতিদান, অবিশ্বাসীদের শাস্তি ইত্যাদি। হাদিসে এসেছে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কেউ যদি কেয়ামত চোখের সামনে দেখতে চায়, সে যেন সুরা ইনফিতার, সুরা তাকভীর ও সুরা ইনশিকাক পড়ে। (সুনানে তিরমিজি) আরেকটি হাদিসে এসেছে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবি মুআজকে (রা.) নামাজে অন্য কিছু সুরার সাথে সুরা ইনফিতার পড়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন এ সুরাগুলোতে কেয়ামতের দৃশ্যাবলি, ভালো ও মন্দ আমলের প্রতিদান এবং শাস্তির আলোচনা এসেছে এবং আল্লাহর অকৃতজ্ঞতার জন্য মানুষকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে। (আত-তাফসীরুল মুনির)
সুরা ইনফিতারের ১-১২ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
(১)
إِذَا السَّمَاءُ انْفَطَرَتْ
ইযাস সামাউন-ফাতারাত।
যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে,
(২)
وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انْتَثَرَتْ
ওয়া ইযাল কাওয়াকিবুন-তাসারাত।
যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে,
(৩)
وَإِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْ
ওয়া ইযাল বিহারু ফুজ্জিরাত।
যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে,
(৪)
وَإِذَا الْقُبُورُ بُعْثِرَتْ
ওয়া ইযাল কুবূরু বু‘সিরাত।
এবং যখন কবরসমূহ উম্মোচিত হবে,
(৫)
عَلِمَتْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ وَأَخَّرَتْ
আলিমাত নাফছুম মা কাদ্দামাত ওয়া আখখারাত।
তখন প্রত্যেকে জেনে নিবে সে কী অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কী পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে।
(৬)
يَا أَيُّهَا الْإِنْسَانُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيمِ
ইয়াআইয়ূহাল ইনসানু মা গাররাকা বিরাব্বিকাল কারীম।
হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল?
(৭)
الَّذِي خَلَقَكَ فَسَوَّاكَ فَعَدَلَكَ
আল্লাযী খালাকাকা ফাসাওওয়াকা ফাআদালাক।
যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন।
(৮)
فِي أَيِّ صُورَةٍ مَا شَاءَ رَكَّبَكَ
ফীআইয়ি সূরাতিম মা শাআ রাক্কাবাক।
যিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামত আকৃতিতে গঠন করেছেন।
(৯)
كَلَّا بَلْ تُكَذِّبُونَ بِالدِّينِ
কাল্লা বাল তুকাযযিবূনা বিদ্দীন।
কখনও বিভ্রান্ত হয়ো না; বরং তোমরা শেষ বিচারকে মিথ্যা মনে কর।
(১০)
وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ
ওয়া ইন্না আলাইকুম লাহাফিজীন।
অবশ্যই তোমাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে।
(১১)
كِرَاماً كَاتِبِينَ
কিরামান কাতিবীন।
সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ।
(১২)
يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ
ইয়া‘লামূনা মা তাফআলূন।
তারা জানে যা তোমরা কর।
এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই:
১. কেয়ামত সংঘটিত হবেই। এই দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। মানুষকে আবার জীবিত করা হবে। মানুষের আমলের হিসাব-নিকাশ হবে। হাতে হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। পুলসিরাত স্থাপিত হবে। তারপর মানুষের গন্তব্য হবে জান্নাত অথবা জাহান্নাম।
২. মানুষ মৃত্যুর পরও দুনিয়াতে তার রেখে যাওয়া খারাপ কাজের কারণে গুনাহ পেতে থাকে। কেউ যদি দুনিয়াতে কোনো খারাপ কাজের প্রচলন ঘটিয়ে থাকে, তার দেখানো পথে মানুষ খারাপ কাজ করতে থাকে, তাহলে সে সেজন্য গুনাহের ভাগীদার হয়।
২. শয়তান সব সময় মানুষকে আল্লাহর ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলতে চায়। শয়তানের ধোঁকা থেকে সাবধান থাকতে হবে।
৩. মুমিন হওয়ার জন্য পুনরুত্থান ও হিসাব-নিকাশের ব্যাপারে দৃঢ় ইমান থাকা আবশ্যক। পুনরুত্থানের ব্যাপারে অবিশ্বাস থাকলে কেউ মুমিন হতে পারে না এবং এই অবিশ্বাস মানুষকে পাপাচার, জুলুমের দিকে ঠেলে দেয়।
৪. মানুষ সব ভালো ও মন্দ সব আমল লিখে রাখার দায়িত্বে রয়েছেন সম্মানিত দুজন ফেরেশতা। হাদিসে এসেছে, রাতের কর্মকাণ্ড লেখার জন্য একজন ও দিনের কর্মকাণ্ড লেখার জন্য একজন ফেরেশতা নিয়োজিত রয়েছেন।
ওএফএফ/এমএস