অভিশাপ দেওয়া গুনাহের কাজ
কাউকে লানত করা বা অভিশাপ দেওয়ার অর্থ হলো তাকে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য দোয়া করা। ইসলামে কাউকে অভিশাপ দেওয়া, লানত করা, কারও জন্য আল্লাহর গজব প্রার্থনা করা অত্যন্ত গুরুতর ব্যাপার এবং অনেক ক্ষেত্রেই গুনাহের কাজ।
আমাদের সমাজে অনেক মানুষকে দেখা যায় কথায় কথায় অভিশাপ দিয়ে বসে। ছোটখাটো বাগবিতণ্ডায় বা মনোমালিন্যেও অভিশাপ দেয়। এটা গুনাহের কাজ তো বটেই, যাকে অভিশাপ দেওয়া হয় সে অভিশাপের যোগ্য না হলে অভিশাপের ক্ষতি অভিশাপদাতার ওপরও আসতে পারে। হজরত আবু দারদা (রা.) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কেউ কোনো কিছুকে অভিশাপ দেয় তখন ওই অভিশাপ আকাশের দিকে যায়; আকাশের পথ তার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন তা দুনিয়ায় দিকে ফিরে আসে; কিন্তু দুনিয়াতে আসার পথও বন্ধ করে দেওয়ায় সে ডানে বামে যাওয়ার চেষ্টা করে। অবশেষে অন্য কোনো পথ না পেয়ে যাকে অভিশাপ করা হয়েছে তার ওপরে যায়। সে অভিশাপের যোগ্য হলে তার ওপর অভিশাপ পড়ে। সে যদি অভিশাপের যোগ্য না হয় তাহলে অভিশাপকারীর ওপরই তা পতিত হয়। (আবু দাউদ)
একাধিক হাদিসে রাসুল (সা.) অভিশাপ দিতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, অভিশাপ দেওয়া কোনো মুমিন ও মুত্তাকি ব্যক্তির কাজ হতে পারে না। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি মানুষের ভুলত্রুটি নিয়ে কটাক্ষকারী, অভিসম্পাতকারী, অশ্লীলভাষী ও অভদ্র হতে পারে না। (সুনানে তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)
সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সা.) বলেছেন, তোমরা পরস্পরকে আল্লাহর লানত, আল্লাহর গজব বা জাহান্নামের অভিশাপ দিও না। (সুনানে তিরমিজি)
আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, অভিশাপদাতা কেয়ামতের দিন সুপারিশকারী বা সাক্ষী হতে পারবে না। (সহিহ মুসলিম)
কোনো গুনাহগার ব্যক্তিকেও অভিশাপ দেওয়া সমীচীন নয়। বরং তার জন্য হেদায়াতের দোয়া করা উচিত। রাসুল (সা.) গুনাহগারকে অভিশাপ দিতে নিষেধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদিন নবিজির (সা.) কাছে এক মাতাল লোককে আনা হলো। তিনি তাকে প্রহার করার নির্দেশ দিলেন। আমাদের মধ্যে কেউ হাত দিয়ে, কেউ জুতা দিয়ে, কেউ বা কাপড় দিয়ে প্রহার করলো। লোকটি যখন চলে গেল, তখন এক ব্যাক্তি বলল, এর কি হলো! আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করুন! এ কথা শুনে রাসুল (সা.) বললেন, নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে শয়তানের সাহায্যকারী হয়ো না। (সহিহ বুখারি)
অর্থাৎ সে আল্লাহর গজবে নিপতিত হলে তাতে শয়তানের উদ্দেশ্যই সিদ্ধ হয়। শয়তানের পক্ষে তাকে পথভ্রষ্ট করা, পাপে লিপ্ত করা আরও সহজ হয়। তাই তার হেদায়াতের জন্য দোয়া করা উচিত। আল্লাহ যেন তাকে তওবার তওফিক দেন, গুনাহ থেকে বিরত থাকার তওফিক দেন সেজন্য দোয়া করা উচিত।
ওএফএফ/এমএস