সুরা ফাতেহা: ৭টি শিক্ষা ও নির্দেশনা
ফাতেহা অর্থ সূচনা বা ভূমিকা। কোরআনের সূচনা হয়েছে সুরা ফাতেহার মাধ্যমে। রাসুলের (সা.) ওপর অবতীর্ণ প্রথম পূর্ণাঙ্গ সুরা ফাতেহা। কোরআনে এ সুরাটিকে ‘সাবআ মাসানী’ বা বহুল পঠিত সাত আয়াত নামে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنٰکَ سَبۡعًا مِّنَ الۡمَثَانِیۡ وَ الۡقُرۡاٰنَ الۡعَظِیۡمَ
আর আমি তো তোমাকে দিয়েছি বারবার পঠিত সাতটি আয়াত ও মহান কোরআন। (সুরা হিজর: ৮৭)
সুরা ফাতেহাকে হাদিসে উম্মুল কোরআন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, উম্মুল কোরআন বা সুরা ফাতেহা হলো ‘বহুল পঠিত সাত আয়াত’ ও মহান কোরআন।’ (সহিহ বুখারি: ৪৭০৪)।
কোরআনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ সুরা ফাতেহা। বিভিন্ন হাদিসে সুরা ফাতেহার বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। সহিহ বুখারির একটি হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, একদিন রাসুল (সা.) তার সাহাবি আবু সাইদ আল মুআল্লাকে বললেন, আমি তোমাকে জানাচ্ছি, কোরআনের সবচেয়ে বড় ও মর্যাদাপূর্ণ সুরা কোনটি; সেটি হলো ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ বা সুরা আল ফাতেহা। এটিই সাতটি বহুল পঠিত আয়াত ও মহান কোরআন যা আমাকে দেওয়া হয়েছে। (সহিহ বুখারি: ৪৭০৩) আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, তওরাত, ইনজিল, জাবুর এবং কোরআনেও এর মত কোন সুরা নাজিল হয়নি। (সুনান তিরমিজি: ২৮৭৫)
সুরা আল ফাতেহা
১. পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে। ২. সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব। ৩. যিনি পরম করুণাময় অতি দয়ালু। ৪. বিচার দিবসের মালিক। ৫. আপনারই আমরা ইবাদত করি এবং আপনারই নিকট আমরা সাহায্য চাই। ৬. আমাদের সরল পথ দেখান। ৭. তাদের পথ, যাদের ওপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন। যাদের ওপর (আপনার) ক্রোধ অপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।
সুরা আল ফাতেহার শিক্ষা ও নির্দেশনা
১. আল্লাহ চান বান্দা তার প্রশংসা করুক। তার অনুগ্রহ স্বীকার করুক। সুরা ফাতেহার শুরুতে আল্লাহ এই সুরার শুরুতে নিজের প্রশংসা করেছেন এবং আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন তার প্রশংসা করতে।
২. যে কোনো প্রশংসার যথাযথ কারণ থাকতে হয়। আল্লাহ নিজেকে সব প্রশংসার অধিকারী ঘোষণা করে তার কারণও উল্লেখ করেছেন যে, তিনি সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক, পরম দয়ালু ও বিচার দিবসের মালিক।
৩. দোয়ার আদব হলো প্রথম আল্লাহর প্রশংসা করা, তার মর্যাদা ও উত্তম গুণাবলি বর্ণনা করা। রাসুল (সা.) তার স্ত্রী উম্মে সালামাকে (রা.) বলেছেন, প্রথমত আল্লাহর প্রশংসা, পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনা করে আল্লাহর কাছে যে কোনো কিছু চাইলে আল্লাহ ওই দোয়া অবশ্যই কবুল করেন। (সুনান তিরমিজি, সুনান নাসাঈ)
৪. মুসলিম হিসেবে আমাদের কর্তব্য একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করা এবং একমাত্র তার কাছেই সাহায্য চাওয়া, তার ওপরই ভরসা করা।
৫. অনুনয়-বিনয়ের সাথে বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, দোয়াই ইবাদত। (মুসনাদে আহমদ: ১৮৩৫২) কুরআনের আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকার করে আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সুরা গাফির: ৬০)
৬. আল্লাহর কাছে সরল পথের দিশা বা হেদায়াত প্রার্থনা করা উচিত। হেদায়াত অনেক বড় নেয়ামত।
৭. সব সময় আল্লাহর নেক বান্দাদের অনুসরণ করতে হবে, কাজ ও চিন্তায় তাদের অনুগামী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পথভ্রষ্ট বান্দাদের পথ অনুসরণ করা, কথা ও কাজে তাদের অনুগামী হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
ওএফএফ/জেআইএম