ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

জুমার প্রথম খুতবা: জুমার দিনের বিশেষ করণীয়

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:২০ পিএম, ১১ আগস্ট ২০২৩

আজ শুক্রবার। নতুন হিজরি বছরের মহররম মাসের চতুর্থ জুমা আজ। ১১ আগস্ট ২০২৩ ইংরেজি, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩০ বাংলা, ২৩ মহররম ১৪৪৫ হিজরি। আজকের জুমার আলোচ্য বিষয়- জুমার দিনের বিশেষ করণীয়।

প্রিয় মুসল্লিগণ!
জুমা সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। আল্লাহ তাআলা এই দিনকে অন্য দিনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। মমতা ও হৃদ্যতায় মুমিন হৃদয়ে অনাবিল সুখ ফুটে ওঠে জুমার নামাজের দৃশ্যে। বিশ্বাস ও পারস্পরিক সৌন্দর্যের সম্প্রীতি এক অদ্ভুত ভালোবাসার দীপ্তি ছড়িয়ে পড়ে দুনিয়াজুড়ে। এ দিনের বিশেষ কিছু ইবাদত আছে, নবিজির জীবন সেসব বিষয় ফুটে ওঠেছে। নিম্নে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

১. জুমার দিন কোরআন তেলাওয়াত করা
জুমাবারের ফজরের তেলাওয়াত করা। জুমার দিন এই সুরা তেলাওয়াত করতেন। কারণ এই সুরাতে আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টির কথা, পুনরুত্থানের কথা, কেয়ামতের দিন সবাইকে সমবেত হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আর এসব হবে জুমার দিন। সে জন্য এই সুরা পাঠ করে উম্মতকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুক্রবার ফজরের নামাজে সুরা আস-সেজদা এবং সুরা আল-ইনসান তেলাওয়াত করতেন। (বুখারি ১০৬৮)

২. বেশি বেশি দরুদ পড়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা জুমার দিন আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ কোরো। কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়।’ (আবু দাউদ ১০৪৭)

৩. জুমা তরককারীর অন্তরে মোহরাঙ্কিত হয়
ইসলামের যেসব ফরজ বিধান আছে, এর মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ জুমার নামাজ। আরাফার দিবসের পর সবচেয়ে বেশি মানুষ একসঙ্গে এদিনই সমবেত হয়। যারা জুমার নামাজকে অলসতা কিংবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ছেড়ে দেয়, তাদের হৃদয়ে আল্লাহ তাআলা মোহর মেরে দেন।

৪. জুমার দিন ভালোভাবে গোসল করা
হাদিসে পাকে জুমার দিন বিশেষভাবে গোসল করার তাগিদ এসেছে। হজরত সালিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি জুমার নামাজে আসে সে যেন গোসল করে আসে। (তিরমিজি ৪৯২)

৫. জুমার দিন সুগন্ধি ব্যবহার করা
অন্য দিনের চেয়ে জুমার দিন বেশি সুগন্ধি ব্যবহার করা উত্তম। হাদিসে পাকে এসেছে- হজরত আবু সাইদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমার দিন সুগন্ধি পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করবে। (বুখারি ৮৮০)

৬. মেসওয়াক করা
মেসওয়াক করা এবং প্রত্যুষে নামাজের জন্য জাগ্রত হওয়া।

৭. জুমার দিন বিশেষ ইবাদত করা
জুমার নামাজে আসার আগ পর্যন্ত নামাজ, জিকির ও তিলাওয়াতে রত থাকা। জুমার পর সূর্যান্ত হওয়া পর্যন্ত এ ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা।

৮. খুতবার সময় সম্পূর্ণ নিশ্চুপ থাকা
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় তার সঙ্গীকে বলল, ‘চুপ থাকো’ সে একটি অনর্থক কাজ করল। (নাসাঈ ১৪০১)

৯. সুরা কাহফ পড়া
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তীকাল জ্যোতির্ময় হবে।’ (আত-তারগিব ৭৩৫)

১০. জুমার নামাজের নির্ধারিত সুরা পাঠ করা
হজরত নুমান ইবনে বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ঈদের নামাজে ও জুমার নামাজে ‘সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আলা-’ ও ‘হাল আতা-কা হাদিসুল গা-শিয়াহ’ সুরাদ্বয় পাঠ করতেন। (মুসলিম ১৯১৩)

কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা জুমুআ ও সুরা আলা তেলাওয়াত করতেন।

১১. পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর কাপড় পরিধান করা
হজরত আবু জার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন উত্তমরূপে গোসল করে, উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তার উৎকৃষ্ট পোশাক পরে এবং আল্লাহ তার পরিবারের জন্য যে সুগন্ধির ব্যবস্থা করে, তা শরীরে লাগায়, এরপর জুমার নামাজে এসে অনর্থক আচরণ না করে এবং দুজনের মাঝে ফাঁক করে অগ্রসর না হয়, তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’ (ইবনে মাজাহ ১০৯৭)

১২. মসজিদে সুগন্ধি লাগানো
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জুমার দিন দ্বিপ্রহরে মসজিদে সুগন্ধি লাগানোর জন্য আদেশ করেছেন।

১৩. গুনাহ মাফের দিন
এদিন মহান রবের পক্ষে গুনাহ মাফ হয়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলিম যদি পবিত্র হয়ে জামে মসজিদের দিকে হাঁটতে থাকে, এরপর ইমাম নামাজ শেষ করা পর্যন্ত নীরব থাকে, তাহলে এ নামাজ এই জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত তার গুনাহের কাফফারা (মোচনকারী) হয়ে যাবে, যদি ধ্বংসকারী তথা কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। (মুসনাদে আহমাদ ২৩৭২৯)

১৪. জুমার দিন কবর আজাব মাফ হয
জুমার দিন কবরের আজাব মাফ হয়ে যায়। হজরত আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার দিন ছাড়া (অন্য দিন) ঠিক দুপুরে নামাজ আদায় করা অপছন্দ করতেন। তিনি বলেছেন, জুমার দিন ছাড়া (অন্যান্য দিনে) জাহান্নামের আগুনকে উত্তপ্ত করা হয়। (আবু দাউদ ১০৮৩)

জুমার দিনে বা রাতে যে মারা যাবে, তার থেকে কবরের আজাব উঠিয়ে নেওয়া হবে এটা এই হাদিস থেকে প্রমাণিত। তবে কিয়ামত পর্যন্ত আজাব দেওয়া হবে না এটা নিশ্চিত নয়।

১৫. দোয়া কবুল হয়
জুমার দিন বিশেষ সময়ে দোয়া কবুল হয়। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জুমার দিনের মধ্যে অবশ্যই এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করে নিশ্চয়ই তিনি তাকে তা দান করেন। তিনি বলেন, সে মুহূর্তটি অতি স্বল্প। (মুসলিম ১৮৫৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনের বিশেষ কাজগুলো করার মাধ্যমে ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

আরও পড়ুন