হজ পালনকারীদের কোরবানি
সামথ্যবানদের জন্য কোরবানি ওয়াজিব। আর যারা হজ পালন করবেন, তারা অবশ্যই সামর্থ্যবান। কারণ সামর্থ্য না থাকলে হজ ফরজ হয় না। তাই হজ পালনকারীদের জন্য কোরবানি ওয়াজিব। তবে হজ পালনে পবিত্র নগরী মিনায় অবস্থানকালে কারা কোরবানি ও দমে শোকর আদায় করবেন?
হজ হচ্ছে তিন প্রকার- ১. হজে তামাত্তু, ২. হজে কিরান এবং ৩. হজে ইফরাদ। আর হজ পালনের সময় যেসব হাজির জন্য কোরবানি ওয়াজিব; তারা হলেন- ১. হজে তামাত্তু পালনকারী ও ২. হজে কিরান পালনকারী।
তামাত্তু হজ
তামাত্তু হজ পালনকারী ওই ব্যক্তিকে বলা হয়, যে হজের মাসগুলোতে ওমরার ইহরাম করে, এরপর ওমরা পালন করে তা থেকে হালাল হয়ে যায়। এবং সেই বছরের একই সফরে হজের ইহরাম করে। (আর হজের মাস হচ্ছে- শাওয়াল, জিলকদ এবং জিলহজ মাসেরর প্রথম দশ দিন।’ (বুখারি ১৫৬০)
সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি শাওয়াল মাস আসার আগেই ওমরার ইহরাম করে এবং (বাকি সময়) মক্কায় অবস্থান করে সেই বছরেই হজও করে তাহলে তার প্রতি হাদি (পশু কোরবানি) জবাই করা ওয়াজিব হবে না। কারণ, সে তামাত্তু হজ পালনকারী নয়; কেননা সে হজের মাস আসার আগেই ওমরার ইহরাম করেছে।
আবার কোনো ব্যক্তি যদি একবছর শাওয়াল মাস আসার পর ওমরার ইহরাম করে এবং পরের বছর হজ সম্পাদন করে তাহলে তার প্রতিও হাদি (পশু কোরবানি) জবাই করা ওয়াজিব হবে না। কারণ, সে তামাত্তু হজ পালনকারী নয়; কেননা সে এক বছর ওমরা করেছে এবং পরের বছর হজ আদায় করেছে।
অনুরূপভাবে যদি কোনো ব্যক্তি হজের মাসে ওমরার ইহরাম করে এবং ওমরা হতে হালাল হয়ে নিজ দেশে বা বাড়িতে ফিরে চলে আসে, এরপর শুধু হজের ইহরাম করে মক্কায় ফিরে আসে তবুও সে তামাত্তু হজ পালনকারী বলে গণ্য হবে না; কারণ সে পৃথক সফরে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম করেছে।
কিরান হজ
কিরান হজ এমন হজকে বলা হয় যে, কোনো ব্যক্তি ওমরা ও হজের ইহরাম একই সঙ্গে করলো কিংবা প্রথমে ওমরার ইহরাম করলো এরপর ওমরার তওয়াফ শুরু করার আগেই তার সঙ্গে হজের নিয়ত মিলিয়ে নিল।
হজে তামাত্তু পালনকারী ও কিরান হজ পালনকারীর প্রতি হাদি (পশু কোরবানি) জবাই করা ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে যে, সে যেন মক্কা বা হারামের এলাকার অধিবাসী না হয়। সুতরাং যারা মক্কা বা হারামের এলাকার অধিবাসী তাদের উপর হাদি (পশু কোরবানি) জবাই করা ওয়াজিব নয়। যার দলিল মহান আল্লাহর বাণী-
فَمَن تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ ذَلِكَ لِمَن لَّمْ يَكُنْ أَهْلُهُ حَاضِرِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ
‘...আর যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন যে ব্যক্তি ওমরার পর হজ সম্পাদনপূর্বক তামাত্তু করবে, তবে যে পশু সহজ হবে, তা জবাই করবে। কিন্তু যে তা পাবে না তাকে হজে তিনদিন এবং যখন তোমরা ফিরে যাবে, তখন সাতদিন রোজা পালন করবে। এই হল পূর্ণ দশ। এই বিধান তার জন্য, যার পরিবার মাসজিদুল হারামের অধিবাসী নয়।...’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৯৬)
আর মক্কার বাইরে জেদ্দাবাসীরা হজে তামাত্তু বা কিরান করলে তাদের প্রতি হাদি (পশু কোরবানি) জবাই করা ওয়াজিব। কারণ, তারা মসজিদে হারামের বাসিন্দা নয়। তবে যদি মক্কার অধিবাসী বিদ্যার্জনের জন্য বা অন্য কোনো কারণে মক্কার বাইরে সফর করে, এরপর হাজ্জে তামাত্তু বা কিরান পালনের নিয়তে মক্কা ফিরে আসে তাহলে তার প্রতি হাদি (পশু কোরবানি) করা ওয়াজিব হবে না। কারণ, এক্ষেত্রে তার বাসস্থানকে কেন্দ্র করতে হবে, আর তাহলো মক্কা মোকররামা।
আর যদি মক্কার কোনো অধিবাসী বসবাসের উদ্দেশ্যে অন্য কোনো এলাকায় চলে যায়, তারপর তামাত্তু বা কিরান হজের উদ্দেশ্যে মক্কায় ফিরে আসে তাহলে তার প্রতি হাদি (পশু কোরবানি) করা ওয়াজিব। কারণ, সে বর্তমান মসজিদে হারামের বাসিন্দা নয়।
তামাত্তু হজ পালনকারী বা কিরান হজ পালনকারী যদি হাদি (কোরবানির পশু) না পায় বা তার খরচ-খরচা এবং বাড়ি ফিরে আসার মতো পয়সার অতিরিক্ত কোরবানি ক্রয় করার পয়সা না থাকে তাহলে তার প্রতি হাদি (পশু কোরবানি) ওয়াজিব হবে না, বরং তার রোজা পালন করা আবশ্যক হবে। যার দলিল মহান আল্লাহর বাণী-
فَمَن تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ ذَلِكَ لِمَن لَّمْ يَكُنْ أَهْلُهُ حَاضِرِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ
‘যে কেউ ওমরাকে হজের সঙ্গে মিলিয়ে উপকার লাভ করতে উচ্ছুক, সে যেমন সম্ভব কোরবানি দেবে এবং যার পক্ষে সম্ভব না হয়, সে ব্যক্তি হজের দিনগুলোর মধ্যে তিনদিন এবং ঘরে ফেরার পর সাতদিন, এই মোট দশদিন রোজা পালন করবে। এটা সেই লোকের জন্য, যার পরিবারবর্গ মসজিদে হারামের বাসিন্দা নয়।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৯৬)
এমএমএস/এমএস