পরিচ্ছন্ন পরিবেশ গড়তে করণীয়
আ.স.ম আল আমিন
পরিবেশ শব্দের বিস্তৃতি বিশাল। আমাদের পরিবেশ হলো আকাশ-বাতাস, মাটি-পানি, গাছপালাসহ বড় এক দিগন্তের নাম। এগুলো মানুষের কল্যাণে মহান আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। কারণ মানুষ সামাজিকজীব। জীবন চলার পথে প্রতি কদমে প্রয়োজন পড়বে সুন্দর পরিবেশের। সুন্দর পরিবেশ সুরক্ষার জন্য আমাদের অনেক করনীয় রয়েছে। তা তুলে ধরা হলো -
আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা
সুন্দর পৃথিবীতে আগমন আর সুন্দর অবয়ব নিয়ে মানুষ ‘আশরাফুল মাখলুকাতে’র উপাধি লাভ করে। সঙ্গে অপরূপ সুন্দর সৃষ্টির পরিবেশের সুবর্ণ সুযোগ লাভ করা নিঃসন্দেহে এটি আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। এই নেয়ামতের বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা জরুরি। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ اِذۡ تَاَذَّنَ رَبُّکُمۡ لَئِنۡ شَکَرۡتُمۡ لَاَزِیۡدَنَّکُمۡ وَ لَئِنۡ کَفَرۡتُمۡ اِنَّ عَذَابِیۡ لَشَدِیۡدٌ
‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম: আয়াত ৭)
আর দুনিয়াতে আজাব-গজব যা আমাদের ওপর নেমে আসে তা সব আমাদের হাতের কামাই। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
ظَهَرَ الۡفَسَادُ فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ بِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِی النَّاسِ لِیُذِیۡقَهُمۡ بَعۡضَ الَّذِیۡ عَمِلُوۡا لَعَلَّهُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ
‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা আর-রূম: আয়াত ৪১)
পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন থাকা
একটি সুন্দর পরিবেশ গড়তে হলে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার কোনো বিকল্প নেই। শুধু নিজে ব্যক্তি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে চলবে না, নিজের আশ-পাশের সবকিছুকেই পরিস্কার রাখতে হবে। মদিনার কাছাকাছি কুবা নামক এলাকার মানুষ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করতো। তাদের ভূয়সী প্রশংসা করে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
لَا تَقُمۡ فِیۡهِ اَبَدًا ؕ لَمَسۡجِدٌ اُسِّسَ عَلَی التَّقۡوٰی مِنۡ اَوَّلِ یَوۡمٍ اَحَقُّ اَنۡ تَقُوۡمَ فِیۡهِ ؕ فِیۡهِ رِجَالٌ یُّحِبُّوۡنَ اَنۡ یَّتَطَهَّرُوۡا ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الۡمُطَّهِّرِیۡنَ
‘তুমি সেখানে কখনও (নামাজ কায়েম করতে) দাঁড়িও না। অবশ্যই যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে তা বেশি হকদার যে, তুমি সেখানে নামাজ কায়েম করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।’ (সুরা তাওবা: আয়াত ১০৮)
হাদিসে পাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।’ (মুসলিম ২২৩)
বৃক্ষরোপণ করতে হবে
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণ করতে হবে। হাট-বাজার, দেয়াল, গাড়িতে একটি শ্লোগান দেখি তা হলো- ‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান’; পরিবেশ সুন্দর ও সংরক্ষণের জন্য গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন-
یُنۡۢبِتُ لَکُمۡ بِهِ الزَّرۡعَ وَ الزَّیۡتُوۡنَ وَ النَّخِیۡلَ وَ الۡاَعۡنَابَ وَ مِنۡ کُلِّ الثَّمَرٰتِ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ
‘তার মাধ্যমে তিনি তোমাদের জন্য উৎপন্ন করেন ফসল, যাইতুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর এবং সকল ফল-ফলাদি। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।’ (সুরা নাহল: আয়াত ১১)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃক্ষরোপণের গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষরোপণ করে অথবা কোনো শস্য উৎপাদন করে এবং তা থেকে কোনো মানুষ কিংবা পাখি অথবা পশু ভক্ষণ করে, তবে তা উৎপাদনকারীর জন্য সদকাস্বরূপ গণ্য হবে।’ (বুখারি ২৩২০)
পানির সংরক্ষণ করতে হবে
পরিবেশের প্রায় সকল উপাদান ও প্রক্রিয়া পানির উপর নির্ভর করে। তাই পরিবেশকে সংরক্ষণ করতে হলে পানির ভূমিকা অপরিহার্য। পানি না থাকলে গাছ-পালা জন্মাবে না, ফসল উৎপাদন হবে না। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
هُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً لَّکُمۡ مِّنۡهُ شَرَابٌ وَّ مِنۡهُ شَجَرٌ فِیۡهِ تُسِیۡمُوۡنَ
‘তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, যাতে রয়েছে তোমাদের জন্য পানীয় এবং তা থেকে হয় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা জন্তু চরাও।’ (সুরা নাহল: আয়াত ১০)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-
اَفَرَءَیۡتُمُ الۡمَآءَ الَّذِیۡ تَشۡرَبُوۡنَ ءَاَنۡتُمۡ اَنۡزَلۡتُمُوۡهُ مِنَ الۡمُزۡنِ اَمۡ نَحۡنُ الۡمُنۡزِلُوۡنَ
'তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে চিন্তা করেছ কি? তোমরাই কি তা মেঘ থেকে বর্ষণ করো, না আমি করি।' (সুরা ওয়াকিয়াহ: আয়াত ৬৮-৬৯)
এছাড়া ও পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আমাদেরকে জুলুম ছেড়ে দিতে হবে, আল্লাহ তাআলার অবাধ্য হওয়া যাবে না। মানুষের প্রতি ইনসাফ করতে হবে। উত্তরাধিকার ঠিক মত বণ্টন করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুক। আমিন।
লেখক: কেন্দ্রীয় আহবায়ক বাংলাদেশ কওমী ছাত্র পরিষদ।
এমএমএস/জিকেএস