ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

মুসলিমরাও চিকিৎসাবিজ্ঞানের আবিষ্কারক

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:১৪ পিএম, ২৬ মে ২০২৩

মাওলানা নূর হোসাইন
বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান অপরিসীম। বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান খোলাফায়ে রাশেদীনদের যুগে শুরু হলেও বিজ্ঞান চর্চার সূত্রপাত শুরু হয় উমাইয়া যুগে এবং এর পরিসমাপ্তি ঘটে আব্বাসীয় যুগে।

ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায়- মেডিসিন, সার্জারি, হাসপাতাল তৈরিতে একসময় মুসলিম বিজ্ঞানীরা সারা পৃথিবীতে অগ্রগামী ছিল। ইতিহাসবিদ আল কিফতি তার ‘তারিখুল হুকামাত’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘হজরত ইদ্রিস আলাইহিস সালাম হলেন প্রথম চিকিৎসাবিজ্ঞানী। আর ইসলামের সর্বশেষ নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিজ্ঞানী।

ইতিহাসের পাতায় আরও পাওয়া যায়- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় (বিভিন্ন যুদ্ধকালীন সময়ে) ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন। মসজিদে নববির আঙিনায়ও রোগীরদের চিকিৎসা এবং সেবার ব্যবস্থা ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবিদের মধ্যেও কেউ কেউ চিকিৎসাব্যবস্থা জানতেন। এ বিষয়ে হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু, হজরত হারিস বিন কালদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও ইসলামের ইতিহাসে একজন নারী সাহাবি মদিনায় প্রথম স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মহীয়সী এই নারী সাহাবির নাম ছিল 'রুফাইদা আল আসলামিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা।' যুদ্ধ ছাড়াও এই মহীয়সী নারীর তাবু ছিল অসুস্থদের আস্থার ঠিকানা। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে তিনি কোনোরূপ বিনিময় গ্রহণ ছাড়াই রুগীদের সেবা দিয়েছেন। জিহাদের কঠিন মুহূর্ত ছাড়াও রোগীর সেবা-শুশ্রূষায় এমন আরও অনেক নারী সাহাবির নাম পাওয়া যায়; যাদের নাম আজ-ও ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

মূলতঃ রোগীর সেবা-শুশ্রূষা একটি মহান ইবাদত। এর মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। পারিবারিক ও সামাজিক সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন গভীর হয়। মহাগ্রন্থ কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা থেকে মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা অনুপ্রেরণা পেয়েই চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তারা অবদান রাখেন। চিকিৎসাশাস্ত্রে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন মুসলিম মনীষীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো-

ইবনে সিনা
তিনি ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বুখারায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১০৩৭ খৃস্টাব্দে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি পবিত্র কোরআনের হাফেজ ছিলেন। তার পুরো নাম ছিল আবু আলী হোসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ আল হাসান ইবনে আলী ইবনে সিনা। তাকে সর্ববিদ্যায় পারদর্শী হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।

আল-রাজী
তিনি ৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ইরানের তেহরানে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার পুরো নাম ছিল- আবু বকর মোহাম্মাদ ইবনে যাকারিয়া আল রাজী। তিনিই প্রথম হাম এবং গুটি বসন্তকে আলাদা রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেন। এর আগে দুটো রোগকে একই ভাবা হতো। তাকে মনোবিজ্ঞান এবং সাইকোথেরাপির জনক হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

ইবনে রুশদ
তিনি ১৪ এপ্রিল ১১২৬ সালে (৫২০ হিজরি) স্পেনে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১০ ডিসেম্বর ১১৯৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার পুরো নাম- আবু আল ওয়ালিদ মুহাম্মদ ইবনে আহমাদ ইবনে রুশদ। চিকিৎসা ছাড়াও তিনি দর্শন, ইসলামি শরিয়াহ, গণিত, আইন, ওষুধবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন।

জাহরাউয়ি
তিনিও ৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার পুরো নাম- আবু আল কাশিম খালাফ ইবনে আল আব্বাস আল জাহরাউয়ি। ঐতিহাসিকদের মতে তিনিই সর্বপ্রথম ইউরোপে বৈজ্ঞানিক প্রথায় সার্জারির প্রচলন এবং এর বিশদ বিবরণ প্রচার করেন।

ইবনে নাফিস
তিনি ১২০৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১২৮৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। পুরো নাম- আলাউদ্দিন আবুল হাসান আলি ইবনে আবুল হাজম ইবনুন নাফিস আল কোরায়েশি আল দামেস্কি। তিনি মানবদেহে বায়ু ও রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।

চিকিৎসা শাস্ত্র ছাড়াও বিজ্ঞানের আরও বিভিন্ন শাখায় মুসলিমদের অবদান খুঁজে পাওয়া যায়। গণিতশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র, উদ্ভিদবিদ্যা, জোর্তিবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ইত্যাদি।

লেখক: শিক্ষক, আলহাজ্ব আব্দুল মালেক মাতব্বর ইসলামিয়া মাদরাসা, খিলক্ষেত, ঢাকা।

এসএসএস/এমএস

আরও পড়ুন