মা সম্পর্কে যে হাদিস শুনলে হৃদয় কেঁপে ওঠে
মা দিবস পালনের রীতি বহু পুরনো। মা দিবস এলেই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিস সব সন্তানের হৃদয় কাঁপিয়ে দেয়। সন্তানের জন্য মায়ের সম্মান ও মর্যাদা অনেক বেশি। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসটি শুনলে যে কোনো মুমিন মুসলমানের হৃদয় কেঁপে উঠবে। প্রত্যেক সন্তানকে বাবা-মায়ের যথাযথ সম্মান প্রদানের দিকে আগ্রহী করে তুলবে। সেই হাদিসটি কী?
হজরত কাব ইবনে ওজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন (মসজিদে নববির) মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলেন; আর বললেন- ‘আমিন’। দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন; আবার বললেন- ‘আমিন'। তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন; আর তখনও বললেন- ‘আমিন’।
হজরত কাব ইবনে ওজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি যখন (মিম্বর থেকে) নামলেন; আমরা তাঁর কাছে 'আমিন' বলার কারণ জানতে চাইলাম। বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! এর আগে তো আপনাকে কখনো এভাবে 'আমিন' বলতে শুনিনি। উত্তরে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
প্রথম সিঁড়িতে পা রাখার সময়
হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, ‘ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি; যে রমজান মাস পেল, কিন্তু তার গুনাহ মাফ করাতে পারল না।' তখন আমি বললাম- ‘আমিন’।
দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখার সময়
হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, 'ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি; যার কাছে আপনার নাম উচ্চারিত হলো অথচ সে আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করল না।' তখন আমি বললাম- ‘আমিন’।
তৃতীয় সিড়িঁতে পা রাখার সময়
হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, 'ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি যে বৃদ্ধ বাবা-মা উভয়কে অথবা একজনকে পেল অথচ তারা উভয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না। অর্থাৎ (সন্তান) তাদের খেদমতের মাধ্যমে নিজেকে জান্নাতবাসী করতে পারল না। আমি বললাম- আমিন।’ (মুসলিম, তিরজিমি)
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসের আলোকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, দিবস পালনে নয় বরং মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা ও আদর-যত্ন থাকবে আজীবন, অমলিন। তবেই সন্তান হতে পারবে জান্নাতের অধিবাসী। যে কথা কোরআনের সুরা বনি ইসরাইলে আল্লাহ ঘোষণা করেন-
- وَ اخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحۡمَۃِ وَ قُلۡ وَ قَضٰی رَبُّکَ اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا ؕ اِمَّا یَبۡلُغَنَّ عِنۡدَکَ الۡکِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوۡ کِلٰهُمَا فَلَا تَقُلۡ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنۡهَرۡهُمَا وَ قُلۡ لَّهُمَا قَوۡلًا کَرِیۡمًا
‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদের `উহ' শব্দটিও বলো না এবং তাদের ধমক দিও না এবং বল তাদের শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। তাদের সামনে ভালবাসার সঙ্গে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল-
رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ২৩-২৪)
মায়ের ভালোবাসা কিংবা সম্মানের জন্য বিশেষ কোনো দিনক্ষণ নিয়ে বাড়াবাড়ি নয়, সন্তানের জন্য প্রতিটি মুহূর্তই হোক মা-বাবার জন্য সম্মান ও ভালোবাসা। মূলতঃ মায়ের প্রতি যেসব সন্তানের যথাযথ ভালোবাসা নেই, এ দিবসটি তাদের জন্য হতে পারে যথাযথ। দিবসটি এলে কিংবা দিবসটি উদযাপন করতে দেখলে হয়তো তাদের মনে হবে, আজ মা দিবস। কিছু সময়ের জন্য হয়তো তারা মায়ের কথা ভাববে।
মনে রাখতে হবে
ইসলাম সব মাকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। মাকে করা হয়েছে জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। হাদিসে বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত। তাই জান্নাত পাওয়ার আকাঙ্খাকারী কোনো সন্তানই মাকে দিন-ক্ষণ ঠিক করে ভালোবাসতে পারে না। তাদের কাছে মায়ের ভালোবাসা থাকে প্রতিক্ষণ প্রতি মুহূর্ত।
আল্লাহ তাআলা পুরো দুনিয়ার সব সন্তানকে তাদের মা-বাবার প্রতি ভালোবাসার দায়িত্ববোধ ও যথাযথ সম্মান দেয়ার তাওফিক দান করুন। মহান আল্লাহর অনিবার্য ধ্বংস থেকে নিজেদের রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম