মা কেন সন্তানের কাছে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা পাবে?
মধুময় ছোট্ট একটি শব্দ মা। তিনিই সন্তানের কাছে বেশি উত্তম আচরণ পাওয়ার হকদার। সন্তানের জন্য মায়ের কষ্ট অনেক বেশি। মায়ের কষ্টের তুলনায় সন্তানের সারা জীবনের খেদমত ও ভালোবাসা একদমই নগন্য। এ জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে মায়ের অধিকার বেশি বলে উল্লেক করেছেন।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলো-
يا رسول الله، مَنْ أحقُّ الناس بِحُسن صَحَابَتِي؟ قال أمك قال: ثم مَنْ ؟ قال: أمك، قال: ثم مَنْ؟ قال: أمك، قال: ثم مَنْ؟ قال: أبوك
‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকার রাখে? তিনি বললেন- ’তোমার মা।’ লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি বললেন- ‘তোমার মা।’ সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন- ‘তোমার মা।’ সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন- ‘তারপর তোমার বাবা।’ (বুখারি ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, একব্যক্তি প্রশ্ন করলো-
يا رسول الله، مَنْ أحقُّ بحُسْنِ الصُّحْبَةِ؟ قال أمك، ثم أمك، ثم أمك، ثم أباك، ثم أدْنَاك أدْنَاك
হে আল্লাহর রাসুল! মানুষের মধ্যে সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাপেক্ষা হকদার কে? তিনি বললেন, ‘তোমার মা। এরপরও তোমার মা। এরপরও তোমার মা। এরপর তোমার বাবা। এরপর তোমার নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজন। এরপর তোমার নিকটবর্তী লোকজন।’ (মুসলিম)
সন্তানের জন্য মায়ের কষ্ট
মা তার সন্তানকে দীর্ঘ ৯ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ করেন। তারপর সন্তানকে অতি কষ্টের পর প্রসব করেন। সন্তান মায়ের নাড়ী ছেড়া ধন। প্রসবের সময় ভয়ানক কষ্টে তার জীবন নাশের উপক্রম হয়। সন্তান জন্মের পর মা তাকে দুধ খাওয়ান। তার ময়লা কাপড় পরিষ্কার করেন।
সন্তান জন্মের পর এমনিভাবে দুই বছর নিজের সব আরাম-আয়েশ ও ঘুম বিসর্জন দিয়ে সন্তানের আরাম-আয়েশ ও কল্যাণার্থে সন্তানকে বুকের দুধ পান করান। মা ঠাণ্ডার কষ্টে থাকলেও সন্তানকে আরামের পোশাক পরান। এ কাজে তিনি সীমাহীন কষ্ট সহ্য করেন। একথা আল্লাহ তাআলা তাঁর অহির ভাষায় এভাবে বর্ণনা করেছেন-
‘আর আমি মানুষকে তার বাবা-মায়ের প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করে এবং অতিকষ্টে তাকে প্রসব করে। তার গর্ভধারণ ও দুধপান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস।’ (সুরা আল-আহকাফ : আয়াত ১৫)
সন্তানের প্রাথমিক জীবন মায়ের কোলে কাটে। মায়ের কোল সন্তানের জন্য খাটে পরিণত হয়। মা তাকে অতি আদরে কোলে করে মানুষ করেন। এ জন্য মায়ের কোলকে সন্তানের প্রথম বিদ্যাপীঠ বলা হয়ে থাকে। সন্তানের মাঝে মায়ের সুন্দর ও উত্তম গুণের বিকাশ ঘটে থাকে।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, কোরআন-সুন্নায় বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ এর কারণস্বরূপ শুধু সেই সব কষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন, যা কেবল মায়েরাই সন্তান প্রতিপালন করার ক্ষেত্রে সহ্য করে থাকেন। এ কারণেই সন্তানের ওপর মায়ের বিরাট অধিকারের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
সন্তানের দায়িত্ব
সন্তানের সারা জীবনের আদর-যত্ন, ভালোবাসা ও সেবাযত্ন মায়ের কষ্টের কাছে খুবই নগন্য। তাই অতি আদরের সঙ্গে বাবা-মায়ের প্রতি সদাচরণ- খাদ্য, পানীয়, বাসস্থান, পোশাক ও জীবন ধারনের অন্যান্য প্রয়োজন মিটানো।
বিশেষ করে, তারা যখন যে জিনিসের অভাব বা প্রয়োজন বোধ করেন, তখন সে জিনিসের ব্যবস্থা করা। মায়ের কাছে দোয়া চাওয়া। কেননা আল্লাহ তাআলা সন্তানের জন্য মায়ের দোয়া কবুল করেন।
মনে রাখতে হবে
বাবা-মায়ের ব্যাপারে হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনাও সবার জন্য শিক্ষণীয়। তাকে রাজ সিংহাসন দেওয়ার পর তিনি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করেছিলেন। তিনি তাদের গ্রাম থেকে এনে নিজের রাজ সিংহাসনে বসালেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচরণের আরেকটি উপায় বরং যা সবার সদাচরণের সমষ্টি। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ শব্দ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়া পরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল-
رَّبِّ ارۡحَمۡهُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا
‘হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুন; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা আল-ইসরা : আয়াত ২৩-২৪)
সুতরাং সব সন্তানের উচিত, তাদের উভয়ের সঙ্গে সব ধরণের অশ্লীল, অশালীন ও অভদ্র ভাষা ও ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। সব ধরনের কষ্টদায়ক ভাষা পরিহার করা। তাদের সঙ্গে নম্র ভাষায় কথা বলা। তাদের প্রতি বিনয়ের ডানা নত করা। তাদের খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত করা। আপনার অন্তর থেকে মনে প্রাণে তাদের জন্য সর্বদা দোয়ায় নিজের জিহ্বাকে ভিজিয়ে রাখা। বেশি বেশি এ দোয়া করা-
رَّبِّ ارۡحَمۡهُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا
‘হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুন; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা আল-ইসরা : আয়াত ২৪)
মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে বাবা-মায়ের প্রতি যত্ন ও খেদমতে নিয়োজিত থাকার তাওফিক দান করুন। বাবা-মায়ের মর্যাদা বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেএমআই