ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

রমজানের শেষে রোজাদারের রহমত পাওয়ার উপায় কী?

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০২:৫০ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২৩

আজ ২৯ রমজান। চাঁদ না দেখা সাপেক্ষে হতে পারে ৩০ রমজান। আর আজ চাঁদ দেখা গেলে আগামীকালই ঈদ। আগামী একবছর আর রমজানের রাতের নামাজ তারাবিহ পড়া হবে না। আল্লাহ যাদের প্রতি রহমত করবেন তারা আবার বছর ঘুরে আগামী বছর পাবেন রহমত বরকত মাগফেরাতের মাস রমজান। রমজান শেষ হতে চললেও প্রকৃত রোজাদারের প্রতি নাজিল হতে থাকবে রহমত। সৌভাগ্যময় রোজাদারের এ রহমতগুলো পাওয়ার উপায় কী?

রমজান মাসে পাওয়া প্রশিক্ষণগুলো রমজান পরবর্তী সময়ে যথাযথভাবে পালন করলে এমনিতেই রোজাদারের প্রতি নাজিল হতে থাকবে রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত। কিন্তু এরপরও রোজাদারের জন্য রয়েছে বিশেষ করণীয়। তাহলো-

'রমজান মাসের পর শুরু হবে ঈদের মাস শাওয়াল। এ মাসের প্রথম রাত তথা ঈদের রাত ও ঈদুল ফিতর মুমিন মুসলমান রোজাদারের জন্য রহমত ও সৌভাগ্য পাওয়ার অন্যতম উপায়। কেননা শাওয়াল মাসের প্রথম রাত এবং ঈদুল ফিতরের নামাজ পর্যন্ত রোজাদারের জন্য অবিরত রহমত ও সৌভাগ্য নাজিল হতে থাকে। রমজানের শেষ সময়ের রাত ও দিনগুলোর ফজিলত মর্যাদা এবং সৌভাগ্য কম নয়। তাই ঈদের খুশি ও প্রস্তুতিতে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ ও রমজানের রহমত বরকত আর অফুরন্ত সৌভাগ্যগুলো কোনোভাবেই হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।

যারা কোরআন খতমের মাধ্যমে তারাবিহ আদায় করেছেন, এটা মহান তাদের জন্য মহান আল্লাহ অনুগ্রহ। আর যারা খতম তারাবি পড়তে পারেনি কিন্তু এমনিতে তারাবিহ, তাহাজ্জুদ পড়েছে এবং শেষ রাতে সেহরি খেয়েছেন; সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করেছেন; তাদের জন্য এগুলোও বিশেষ অনুগ্রহ।

রহমত পাওয়ার সময়ে যে ভুল করে থাকে রোজাদার

রমজান পরবর্তী শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা থেকে শুরু করে পরদিন ঈদুল ফিতর আদায় করা পর্যন্ত এ রহমত ও সৌভাগ্য অব্যাহত থাকে। অনেক রোজাদার ঈদের চাঁদ দেখেই কেনা-কাটা; আনন্দ-বিনোদনে বা বিভিন্ন কারণে এ রহমত থেকে বঞ্চিত হয়। আবার অনেকের নামাজ ও ইবাদত ছুটে যায়।

মনে রাখতে হবে

নামাজ ফরজ ইবাদত। পুরো রমজানজুড়ে নিয়মিত নামাজ আদায় করার পর রমজান পরবর্তী সময়ে যেন তাতে বিরতি না পড়ে। নামাজ কাজা না হয়। কেননা নামাজ ছেড়ে দেওয়ার পরিণতি বড়ই মারাত্মক। হাদিসে পাকে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইচ্ছাপূর্বক এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজও পরিত্যাগ করবে না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজ পরিত্যাগ করবে, সে আল্লাহর যিম্মা ও তাঁর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিম্মা থেকে বহিস্কৃত হবে (নাউজুবিল্লাহ) (মুসতাদরাকে হাকেম)

মাসব্যাপী রোজা রাখা এবং তারাবিহ-তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবিহ পড়ার পর নামাজ ছুটে যাওয়া বা কাজা হওয়ার চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে!

যদি কোনো রোজাদার ব্যক্তি মাসব্যাপী ইবাদতে রহমত ও সৌভাগ্য পাওয়ার পর আবার নামাজ ছেড়ে দেয় তবে তার যিম্মাদারী আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কাছে থাকে না। আর যার যিম্মাদারি থাকে না, তার ক্ষমা ও শাফাআত পাওয়ার সম্ভাবনাই বা কতটুকু?

সুতরাং মাসব্যাপী রমজানের এ রোজা পালন ও রমজান মাসে নিয়মিত ফরজ নামাজ, তারাবিহ, তাহাজ্জুদ আদায় কোনো কাজে আসবে না; যদি পরবর্তী সময়ে নিয়মিত নামাজ আদায় না হয়। তাই যারা ২৯ রোজার তারাবিহ আদায় করেছেন, তারা সামনের রাতগুলোতেও তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবিহ, নফল নামাজ এবং কোরআন তেলাওয়াত এবং তওবা-ইসতেগফার করার সঙ্গে ফজর নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করবেন। শেষ রমজান সারাদিন যথাযথ ইবাদত-বন্দেগির সঙ্গে দায়িত্বগুলো পালন করবেন।

বিশেষ করে…

মুমিন মুসলমান শেষ রমজানের রোজা পালন, তারাবিহ ও তাহাজ্জুদের ইবাদত থেকে কখনো বিরত থাকবে না। কোনো রোজাদার যদি এগুলো থেকে বিরত থাকে তবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি হাদিসের ওপর আমল ছুটে যাবে। তাহলো-

১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার বিগত জীবনের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে।' (বুখারি, মুসলিম)

২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতের নামাজ (তারাবিহ) পড়ে, তার বিগত জীবনের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে।' (বুখারি, মুসলিম)

৩. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে লাইলাতুল কদরে নামাজ পড়ে, তার বিগত জীবনের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে।' (বুখারি, মুসলিম)

সুতরাং রমজানের শেষ দশকের শেষ সময় তথা শেষ তারাবিহের রাত ও দিনে তারাবিহ-তাহাজ্জুদ-সালাতুত তাসবিহ, তওবা-ইসতেগফার, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, সেহরি-ইফতার ও রোজা রাখাসহ যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগিই রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার অন্তর্ভূক্ত।

তাই কোনো রোজাদারেরই উচিত নয়, শেষ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো ঈদের প্রস্তুতি কিংবা অবহেলায় তা থেকে বিরত থাকা। কেননা হতে পারে রমাজনের শেষ সময়ের এ ইবাদত-বন্দেগিই মুমিন মুসলমানের জন্য রমজানের সেরা রহমত তথা অনুগ্রহ পাওয়ার কারণ হতে পারে। পেতে পারে মহান আল্লাহর কাছে চূড়ান্ত ক্ষমা।

শাওয়ালের চাঁদ দেখার পরও রহমত ও সৌভাগ্য পেতে ঈদের রাতের ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত রাখা। এ রাতেও আল্লাহর ইবাদত করা। এ রাতে মহান আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহে ভাণ্ডার খুলে দেন। আল্লাহ তাআলা চাঁদ রাতের কোনো আবেদন বা দোয়া ফেরত দেন না।

তাই এ রাতে কোনো রোজাদার মুমিন মুসলমানের জন্য উৎসব ও আনন্দের মোহে বিনা ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। কোনো মুমিন মুসলমান রোজাদারের যেন এ ভুলটি না হয়। ঈদের চাঁদ দেখেই নবিজির শেখানো দোয়াটি এভাবে পড়া-

اَللهُ اَكْبَرُ اَللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَ الْاِيْمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَ الْاِسْلَامِ وَ التَّوْفِيْقِ لِمَا تُحِبُّ وَ تَرْضَى رَبُّنَا وَ رَبُّكَ الله

উচ্চারণ : 'আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াস্সালামাতি ওয়াল ইসলামি ওয়াত্তাওফিকি লিমা তুহিব্বু ওয়া তারদা রাব্বুনা ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।'

অর্থ : ’আল্লাহ মহান, হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদকে আমাদের নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদয় কর। আর তুমি যা ভালোবাস এবং যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও, সেটাই আমাদের তাওফিক দাও। আল্লাহ তোমাদের এবং আমাদের প্রতিপালক।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

শেষ রমজনেও রোজাদারের যেসব আমল জারি থাকবে

দুনিয়ায় মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার সব আমলের পথ বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি আমল অব্যাহত থাকবে। হাদিসের বর্ণনা থেকেই তা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

‘মানুষের মৃত্যুর পর তিনটি আমল ব্যতিত সব রকমের আমলই বন্ধ হয়ে যায়। তাহলো-

১. সদকায়ে জারিয়া,

২. উপকারি ইলশ বা জ্ঞান,

৩. এমন সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করতে থাকে।’ (মুসলিম)

সদকায়ে জারিয়া

যার অর্থ এমন ধরনের জনকল্যাণকর কাজ ব্যয় হয়, যার সুফল বহু দিন পর্যন্ত চলতে থাকে। মানুষ এ কাজে উপকার পেয়ে থাকে। যেমন- পুকুর কাটা, কুপ খনন করা বা পরিস্কার পানির ব্যবস্থা করা, মুসাফিরদের জন্য সরাইখানা তৈরি করা, রাস্তার পাশে ছায়াদানকারী বৃক্ষ রোপন করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করে যাওয়া, রাস্তাঘাট নির্মাণ বা ব্রিজ-কালর্ভাট তৈরি করা

উপকারি জ্ঞান

এমন জ্ঞানমূলক বই-পুস্তক লেখা, যার মাধ্যমে লোকেরা সঠিক পথের সন্ধান লাভ করবে। কল্যাণের পথে পরিচালিত হবে। দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় জ্ঞান লাভে জীবন সাজাতে পারবে। কিংবা মৃতব্যক্তি কাউকে এমন কিছু শেখায় যে তার ফলেও সে প্রতিদান পেতে থাকবে।

নেক সন্তান

তৃতীয় যে কাজটির জন্য মৃত্যুর পরও সে প্রতিদান পেতে থাকবে তা হল তার নেক সন্তান। যাকে সে প্রথম থেকেই সুশিক্ষা প্রদান করেছে এবং তার চেষ্টার ফলেই সে আল্লাহভীরু ও দ্বীনদার হতে পেরেছে। যতদিন পর্যন্ত এমন নেক সন্তান দুনিয়ায় জীবিত থাকবে ততদিন পর্যন্ত তার কৃত সৎকাজের ছওয়াব সেও পেতে থাকবে। এমনকি সে সন্তান বাবা-মার কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে দু'হাত তুলে বলবে-

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

উচ্চারণ : 'রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।'

অর্থ : 'হে আমার প্রভু! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।' (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ২৪)

সুতরাং রমজানের আমলগুলো যেন এমন হয় যে, রমজান পরবর্তী সময়ে সঠিকভাবে জীবন পরিচালনায় সহায়ক হয়। এমনকি মৃত্যুর পরও যেন তা আমাদের জন্য সাদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভূক্ত হয়

উল্লেখিত আমলগুলোই নয়; বছরজুড়ে এ কাজগুলো করে যাওয়া প্রত্যেক রোজাদারের একান্ত কাজ। তাহলো-

১. আগের চেয়ে আরও বেশি বাবা-মার সেবায় নিয়োজিত হওয়া।

২. প্রতিবেশির খোঁজ-খবর রাখা।

৩. অসহায়দের ঘরে ঈদের উপহার পৌঁছে দেওয়া।

৪. বিপদ-আপদে অন্যের পাশে দাঁড়ানো।

৫. অহংকার-দম্ভ পরিহার করা।

৬. সব পাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা।

৭. ব্যবসা-বাণিজ্যে সততা অবলম্বন করা।

৮. অন্যের সম্পদ অধিগ্রহণ থেকে দূরে থাকা।

৯. সর্বাবস্থায় মিথ্যা পরিহার করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে রোজাপালন করে শেষ দিনের সৌভাগ্যের রহমত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। রমজানের শেষ সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করে রমজনের বরকত মাগফেরাত নাজাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। বিগত জীবনের গুনাহ থেমে মুক্তির তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

আরও পড়ুন