ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

জুমার প্রথম খুতবা

জুমাতুল বিদায় মুসলিম উম্মাহর করণীয়

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:২১ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২৩

আজ শুক্রবার। বরকতময় রমজান মাসের শেষ জুমা। ২১ এপ্রিল ২০২৩ ইংরেজি, ০৮ বৈশাখ ১৪৩০ বাংলা, ২৯ রমজান ১৪৪৪ হিজরি। আজকের জুমার আলোচ্য বিষয়- জুমাতুল বিদায় মুসলিম উম্মাহর করণীয়।

প্রিয় মুসল্লিগণ!

রমজানের শেষ জুমা আজ। এটি মুসলিম উম্মাহর কাছে জুমাতুল বিদা হিসেবে পরিচিত। এ জুমার বিশেষ কোনো ফজিলত না থাকলেও কিছু কথা, কিছু জিজ্ঞাসা ও করণীয় সামনে চলে আসে। রমজান শুরু হয়েছিল রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত নিয়ে। দেখতে দেখতে তা শেষ প্রান্তে। আজ শেষ জুমা। হতে পারে শেষ রোজাও। সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করবে আগামীকালের রোজা। যদি চাঁদ ওঠে যায় তবে কালই ঈদ। কিন্তু বিদায় নেওয়া এই রমজান থেকে মুমিন মুসলমানের প্রাপ্তি কী? রোজাদার কী পেলো? ইতেকাফকারী কি লাইলাতুল কদর পেয়েছে। সব রোজাদার কি নিজেদের গুনাহ থেকে মুক্ত করতে পেরেছে?

আজকের জুমায় ‘জুমাতুল বিদা’ সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা, চিন্তা-ভাবনা ও করণীয় প্রসঙ্গে একজন জনপ্রিয় আলেম ও ইসলামিক স্কলার ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহমাতুল্লাহি আলাইহি একটি চমৎকার শিক্ষণীয় নসিহত জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

প্রিয় মুসল্লিগণ!

আমরা জুমাতুল বিদার মাধ্যমে রমজানকে বিদায় জানাতে চলেছি। কিন্তু কিভাবে? বিশ্বাসঘাতকতার সঙ্গে না বিশ্বস্ততার সঙ্গে। রমজান এসেছিল কোরআন, সিয়াম, কিয়াম ও তাকওয়ার উপহার নিয়ে। আমরা কি রমজানের রোজা পালন শেষে এগুলোকেও বিদায় করে দেব? তাহলে রমজানের সঙ্গে কি বিশ্বাসঘাতকতা করা হলো না?

হাজেরিন! রমজানের হাদিয়া ভালোবেসে গ্রহণ করুন। কোরআন ছাড়বেন না। কত কষ্ট করে সারা মাস তারাবিতে কোরআন শুনলেন। যদি বুঝতে পারতেন তাহলে এ শোনার আনন্দ, তৃপ্তি ও সওয়াব আরো অনেক বেশি হতো। কোরআনের নূরে হৃদয় আলোকিত হতো।

কোরআন বুঝে পড়ুন

আসুন সকলেই নিয়ত করি, আগামী রমজানের আগে একবার অন্তত পূর্ণ কোরআন অর্থ সহ পাঠ করবো। যেন আগামী রমজানে তারাবিহের সময় কোরআন শোনার সময় অন্তত কিছু বুঝতে পারি।

বছরব্যাপী নফল রোজা রাখুন

সিয়াম (রোজা) ছাড়বেন না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন হাদিসে বলেছেন যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি, রহমত, বরকত ও রূহানিয়াত অর্জনের জন্য নফল সিয়াম অতুলনীয় ইবাদত। (তাহলো)-

১. প্রতি মাসে তিন দিন; বিশেষত প্রতি আররি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়াম পালন করা।

২. প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার।

৩. জিলহজ মাসের প্রথম ৯ দিন।

৪. বিশেষত আরাফার (হজের) দিন।

৫. আশুরার (১০ মহররম) দিন এবং তার আগে বা পরে এক দিন সিয়াম পালন করার অসীম ফজিলত ও সওয়াবের কথা বিভিন্ন হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি।

৬. রমজানের পরেই শাওয়াল মাস। ১ শাওয়াল আমরা ঈদুল ফিতর আদায় করি। ঈদের পরদিন থেকে পরবর্তী ২৮/২৯ দিনের মধ্যে ৬টি রোজা রাখার বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ

'যে ব্যক্তি রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে। এরপর সে শাওয়াল মাসে ৬টি রোজা পালন করবে, তার সারা বছর সিয়াম পালনের মতো হবে।' (মুসলিম)

ফরজসহ নফল নামাজ পড়ুন

কিয়াম (নামাজ) ছাড়বেন না। কিয়ামুল্লাইলের সওয়াব ও ফজিলত শুধু কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিস থেকে জমা করলেও একটি বড় বই হয়ে যাবে। যদি শেষ রাতে না পারেন তবে অন্তত প্রথম রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, দুই-চার রাকাত নামাজ আদায় করবেন। বিভিন্ন বিশুদ্ধ হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে-

প্রতি রাতে, রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ বা ৪ ঘন্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পরে, রাত ১০/১১ টা থেকে দোয়া কবুলের ও রহমত-বরকতের সময় শুরু হয়।

সারাদিন যে যেভাবেই কাটান না কেন, অন্তত ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুই-চার রাকাত কিয়ামুল্লাইল আদায় করে সামান্য সময় আল্লাহর জিকির ও দরুদ পাঠ করে আল্লাহর দরবারে সারাদিনের গুনাহের ক্ষমা চেয়ে ও নিজের সব আবেগ আল্লাহকে জানিয়ে ঘুমাতে যাবেন।

আল্লাহকে ভয় করুন

তাকওয়া (আল্লাহর ভয়) ছেড়ে দেবেন না। রমজানের পরে ইবাদত-বন্দেগী কিছু কমে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে মুমিন ইচ্ছাকৃতভাবে পাপের পথে ফিরে যেতে পারেন না। তাহলে তো রমজানের সব পরিশ্রম বাতিল করে দেওয়া হলো। আর নিজের কষ্টে অর্জিত কর্ম নষ্ট করা পাগলামী ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। আল্লাহ বলেন-

وَلا تَكُونُوا كَالَّتِي نَقَضَتْ غَزْلَهَا مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ أَنْكَاثًا

'তোমরা সে (উন্মাদিনী) মহিলার মত হয়ো না যে তার সুতা মযবুত করে পাকানোর পর পাক খুলে নষ্ট করে ফেলে।' (সুরা নাহল : আয়াত ৯২)

তাই কষ্টের আমল রক্ষা করতে আমাদের রমজানের তাকওয়া রক্ষা করার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে।

শিরক-কুফর থেকে মুক্ত থাকুন

এছাড়া কিছু বিষয় আছে যা মুমিনের জীবনের সব আমল ধ্বংস করে দেয়। তার অন্যতম হলো শিরক ও কুফর। আল্লাহর কোনো ক্ষমতায়, গুণে বা ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক করা হলো শিরক। আল্লাহ ছাড়া কোনো নবি, ওলী, ফেরেশতা, জিন বা অন্য কারো কোনো অলৌকিক ক্ষমতা আছে, ইচ্ছ করলেই তারা কোনো মানুষের মনের কথা জানতে পারেন, উপকার বা ক্ষতি করতে পারেন এরূপ বিশ্বাস করা শিরক।

আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করা, গায়েবি সাহায্য চাওয়া, গায়েবিভাবে নির্ভর করা, আল্লাহ ছাড়া কারো নাম নিয়ে কাজ শুরু করা, মানত করা ইত্যাদি শিরক। শিরকের মতোই মহাপাপ কুফর। যেমন- আল্লাহর দ্বীনের কোনো বিধান অচল মনে করা, উপহাস করা, ইসলামের কোনো বিধান অমান্য করা কারো কারো জন্য বৈধ হতে পারে বলে মনে করা ইত্যাদি।

প্রিয় হাজেরিন!

আমরা যত পাপই করি না কেন, সব পাপের ক্ষমার আশা আছে। কিন্তু শিরক-কুফর পাপের কোনো ক্ষমার আশা নেই। আর শিরক ও কুফরের কারণে আগের সব নেক আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। একজন মানুষ যদি নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ ও অন্যান্য ইবাদত পালন করে আবার পাশাপাশি মদ, সিনেমা বা অন্যান্য পাপে লিপ্ত হয়, তবে পাপের কারণে নামাজ বাতিল হবে না। পাপ ও পুণ্য উভয়ই জমা হবে। কিন্তু যদি কেউ শিরক করে তবে তার আগের সব ইবাদত বাতিল হবে। তাকে পুনরায় হজ্জ ও অন্যান্য ইবাদত আদায় করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন:

وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

'তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই ওহী করা হয়েছে যে, ‘তুমি আল্লাহর শরীক স্থির করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত।' (সুরা যুমার : আয়াত ৬৫)

আল্লাহ আরো বলেন-

وَمَنْ يَكْفُرْ بِالإِيمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ فِي الآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ

'কেউ ঈমানের সঙ্গে কুফরি করলে তার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।' (সুরা মায়েদা : আয়াত ৫)

যুগে যুগে শিরক হয় মূলত নবি, ওলি, ফেরেশতা বা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের নিয়ে। যারা শিরক করে তারা মনে করে এ সব নবি, ওলি বা ফেরেশতা তাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন এবং তাদের ওপারের (মুক্তির) কাণ্ডারী হবেন। অথচ আল্লাহ বলেছেন যে, নবি, ওলি ও ফেরেশতাগণ আল্লাহর অনুমতিতে সুপারিশ করবেন ঠিকই, তবে (যারা) শিরক-কুফরমুক্ত তাওহীদ ও ঈমান নিয়ে মরবেন শুধু তাদের জন্যই সুপারিশ করবেন। যারা শিরকে লিপ্ত হবে তাদের জন্য কেউ সুপারিশ করবে না। আল্লাহ বলেন:

إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ

'কেউ আল্লাহর শরিক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত নিষিদ্ধ করবেন ও তার আবাস জাহান্নাম; জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।' (সুরা মায়েদা : আয়াত ৭২)

আমরা রমজানে প্রতি দিন প্রায় ৭০ বার এবং সারামাসে প্রায় ২ হাজার বার সুরা ফাতেহার মধ্যে আল্লাহর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি- ' আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং শুধু তোমারই কাছে সাহায্য চাই।' এর পরও কি আমরা বিপদে আপদে কোনো দরগা, মাজার, জিন, নবি, ওলি বা অন্য কাউকে ডাকব বা তাদের কাছে বিপদ মুক্তির জন্য সাহায্য প্রার্থনা করবো? মুমিন কি তা করতে পারে?

মাজারে যাবেন মাজারস্থ ব্যক্তিকে যিরারত করতে, তাকে সালাম দিতে ও তার জন্য দোয়া করতে। আলিমদের কাছে যাবেন দ্বীন শিখতে। পীরের কাছে যাবেন আল্লাহর পথে চলার ও বেলায়াত অর্জনের পথ শিখতে। কিন্তু চাওয়া, পাওয়া, বিপদ, সাহায্য, ত্রাণ উদ্ধার এগুলো সবই একমাত্র আল্লাহর জন্য।

কোথায় দৌড়াচ্ছেন দোয়া করতে? আল্লাহ তো আপনার কাছে রয়েছেন। তিনি কখনোই বলেন নি, বান্দা আমার কাছে দোয়া করতে তোমাকে কোথাও যেতে হবে। তিনি বলেছেন, বান্দা যেখানেই তুমি থাক না কেন, আমি তোমার কাছেই আছি। তুমি ডাকলেই আমি সাড়া দেব।

রমজান উপলক্ষ্যে আল্লাহ আমাদেরকে এ কথা বিশেষ করে শিখিয়েছেন। রমজানের রোজার বিধান দিয়েই পরের আয়াতে আল্লাহ বলেন-

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ

'আর আমার বান্দারা যখন আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আমি তো কাছেই। যখনই কোনো আহ্বানকারী আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া প্রদান করি। কাজেই তারা আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার উপর বিশ্বাস রাখুক, তাহলে তারা ঠিক পথে থাকতে পারবে।' (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৬)

মুমিন বান্দা পাপী হতে পারে, তবে হৃদয়ের গভীরে আল্লাহ ছাড়া আর কারো উপর নির্ভরতা থাকতে পারে না। বিপদে আপদে আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। বিদায় হজের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাসকে কি শিক্ষা দিয়েছেন; শুনুন-

يَا غُلامُ إِنِّي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ احْفَظْ اللَّهَ يَحْفَظْكَ احْفَظْ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلْ اللَّهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ وَلَوْ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ رُفِعَتْ الأقْلامُ وَجَفَّتْ الصُّحُفُ

'হে বালক! আমি তোমাকে কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিচ্ছি। তুমি আল্লাহকে হেফাজত করবে, তাহলে তিনি তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহকে (তোমার অন্তরে সদা জাগ্রত) সংরক্ষিত রাখবে, তাহলে তাঁকে সর্বদা তোমার সামনে পাবে। যখন চাইবে বা প্রার্থনা করবে তখন শুধু আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন শুধু আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। জেনে রাখো! যদি সব মানুষ তোমার কোনো কল্যাণ করতে সম্মিলিত হয়, তাহলে তারা তোমার শুধু ততটুকুই কল্যাণ করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন। আর যদি তারা সবাই তোমার অকল্যাণ করতে একজোট হয়, তাহলে তারা তোমার শুধু ততটুকুই অকল্যাণ করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার ব্যাপারে নির্ধারণ করেছেন। কলমগুলো উঠে গেছে এবং পৃষ্ঠাগুলো শুকিয়ে গিয়েছে।' (তিরমিজি, মুসতাদরাকে হাকেম)

মনে রাখতে হবে

রমজানের আমল বরবাদ হওয়ার আরেকটি বিষয় নামাজ। অনেকেই রমজানে রোজা রাখেন এবং নামাজ পড়েন, কিন্ত রমজানের পরে আর ফরজ নামাজ পড়েন না। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কি হতে পারে!

কোরআন ও হাদিসে নামাজ পরিত্যাগ করাকে কুফরি বলা হয়েছে। সাহাবি-তাবেয়ীগণ অনেকেই এক ওয়াক্ত নামাজ পরিত্যাগ করাকেই কুফরি বলে গণ্য করতেন। অন্যরা বলেছেন যে, নামাজ ত্যাগ করা কুফরি না হলেও কুফরির গুনাহ। অর্থাৎ মদপান, শুকরের মাংশ খাওয়া ও অন্য সব পাপের চেয়েও মহাপাপ হলো এক ওয়াক্ত নামাজ ছেড়ে দেওয়া। আর যদি কেউ মনে করে যে, নামাজ না পড়েও ভালো মুসলমান থাকা যায় তবে সে নিঃসন্দেহে কাফির হয়ে যায়।

মুসলিম উম্মাহর করণীয়

আমরা চেষ্টা করব, সব সুন্নাত-মুস্তাহাব পালন করে পরিপুর্ণভাবে নামাজ আদায় করতে। কিন্তু অসুবিধা হলে যতটুকু সম্ভব হাজিরা দিতে হবে। (যেমন)-

১. অজু না করতে পারলে তায়াম্মুম করে,

২. পবিত্র কাপড় না থাকলে নাপাক কাপড়ে,

৩. কাপড় না থাকলে উলঙ্গ হয়ে,

৪. কেবলামুখি হতে না পারলে যে দিকে মুখ করে সম্ভব,

৫. দাঁড়াতে না পারলে বসে, শুয়ে যেভাবে সম্ভব,

৬. সুরা-কেরাআত বা দোয়া না জানলে শুধু আল্লাহু আকবার বা সুবহানাল্লাহ পড়ে নামাজ আদায় করতে হবে। এতেই নামাজ আদায় হয়ে যাবে। তবে কোনো অবস্থাতেই জ্ঞান থাকা অবস্থায় নামাজ কাযা করা যাবে না। হাদিসে এসেছে-

ফরজ নামাজ কাজা করার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-

لاَ تَتْرُكْ صَلاَةً مَكْتُوْبَةً مُتَعَمِّداً فَمَنْ تَرَكَهَا مُتَعَمِّداً فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ (ذِمَّةُ اللهِ وَذِمَّةُ رَسُوْلِهِ)

'ইচ্ছাপূর্বক এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজও পরিত্যাগ করবে না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজ পরিত্যাগ করবে, সে আল্লাহর যিম্মা ও তাঁর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিম্মা থেকে বহিস্কৃত হবে।' (মুসতাদরাকে হাকেম, মাজমাউয যাওয়াইদ, তারগিব)

এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে? নাম কাটা যাওয়ার পরে তো আর উম্মাত হিসেবে কোনো দাবিই থাকে না। ক্ষমা লাভ বা শাফাআত লাভের আশাও থাকে না।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে বছরজুড়ে রমজানের তাকওয়া, নামাজ, রোজা, কিয়াম ও সব আমল হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

আরও পড়ুন