মূল্যবান বস্তু দিয়ে ফিতরা আদায়ে সওয়াব বেশি
মুফতি রেজাউল করীম আবরার
বর্তমানে অনেকে সদকাতুল ফিতর বা ফেতরা দিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য ফতোয়া বিভাগ নির্ধারিত মূল্য অনুসরণ করে৷ এ ক্ষেত্রে সবাই সর্বনিম্ন গমের মূল্য অনুযায়ী ফেতরা দেয়৷ ফেতরার ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়ার মূলনীতি হলো, যত বেশি এবং মূল্যবান বস্তু দিয়ে আদায় করা যায়, তত বেশি নেকি৷ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, ‘দাতার কাছে যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি, তা দান করা উচিত।’ (বুখারি ৩/১৮৮)
পাঁচ ধরনের খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফেতরা দেওয়া যায়
খেজুর, পনির, যব, কিশমিশ এবং গম৷ গম ছাড়া বাকি চারটি দ্রব্য দ্বারা তিন কেজি তিনশত গ্রাম এবং গম দ্বারা আদায় করলে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম দিতে হয়৷ সুতরাং বর্তমান বাজার মূল্যে ফিতরার পরিমাণ দাড়ায়-
> খেজুর দিয়ে ফিতরা দিলে প্রতি কেজি ৬০০ টাকা হলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রামের হিসেবে একজনের ফিতরা হয় ১ হাজার ৯৮০ টাকা।
এছাড়া যদি কেউ উন্নতমানের আজওয়া খেজুর দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতে চায়, তাহলে খেজুরের মূল্য প্রতি কেজি ১ হাজার টাকা হলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রমা হিসেবে একজনের ফেতরা হয় ৩ হাজার ৩০০টাকা। আর কেউ যদি মোটামুটি ধরনের খেজুর দিয়ে ফিতরা দিতে চায় তবে প্রতি কেজি ৩০০ টাকা হলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম হিসেবে একজনের ফেতরা হয় ৯৯০ টাকা।
> কিশমিশ প্রতি কেজি ৫০০ টাকা হলে ৩ কজি ৩০০ গ্রাম হিসেবে একজনের ফেতরা হয় ১ হাজার ৬৫০ টাকা।
> পনির প্রতি কেজি ৮০০ টাকা হলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম হিসেবে একজনের ফেতরা হয় ২ হাজার ৬৪০ টাকা।
> যবের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি ১২০ টাকা হলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম হিসেবে একজনের ফেতরার পরিমাণ হয় ৩৯৬ টাকা।
> আটা বা গম প্রতি কেজি ৭০ টাকা হলে ১ কেজি ৬৫০গ্রাম হিসেবে একজনের ফেতরার পরিমাণ হয় ১১৫ টাকা ৫০ পয়সার মতো৷
ফেতরা আদায়ের সঠিক নিয়ম
সামর্থ্যানুযায়ী ফেতরা আদায় করা কর্তব্য৷ কিন্তু সমাজে যাদের খেজুরের মূল্য দিয়ে ফেতরা আদায়ের সামর্থ্য আছে, দেখা যায়, তারা সর্বনিম্ন গমের মূল্য দিয়ে আদায় করে৷ তেমনিভাবে যাদের কিশমিশের মূল্য দিয়ে আদায়ের সামর্থ্য আছে, তারাও গমের মূল্য দিয়ে আদায় করে৷ এ ক্ষেত্রে হওয়া উচিত ছিল এমন, যে ব্যক্তি উন্নতমানের আজওয়া খেজুরের হিসেবে ফেতরা আদায়ের সামর্থ্য রাখে, সে তা দিয়েই আদায় করবে। যার সাধ্য পনিরের হিসেবে দেওয়ার, সে তা-ই দেবে। এর চেয়ে কম আয়ের লোকেরা খেজুর বা কিশমিশের হিসাব গ্রহণ করতে পারে। আর যার জন্য এগুলোর হিসেবে দেওয়া কঠিন, সে গম দ্বারা আদায় করবে। এটিই উত্তম নিয়ম।
সাহাবায়ে কেরাম আধা সা গম দিয়ে ফেতরা আদায় করেছেন। এর কারণ হলো, তখন আধা সা গমের মূল্য এক সা খেজুরের সমান ছিল৷ হজরত মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগে গমের ফলন বৃদ্ধি পেলে আধা সা গমকে ফেতরার অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের এক সা’র মতো গণ্য করা হতো। (আল ইসতিজকার ৯/৩৫৫)
তাই শুধু গমের মূল্য দিয়ে ফেতরা না দিয়ে সামর্থ্যানুযায়ী খেজুর, পনির এবং কিশমিশের মূল্য দিয়েও সদকাতুল ফিতর আদায় করার চেষ্টা করি৷ আল্লাহ তাআলা উত্তম পন্থায় ফেতরা আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস