ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

শবে কদরে যেসব আমল করা যায়

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১:৩৯ এএম, ১৮ এপ্রিল ২০২৩

রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে সংঘটিত হয় পবিত্র লাইলাতুল কদর। তবে অনেকেই ২৬ রমজান দিবাগত রাতকে লাইলাতুল কদরের রাত হিসেবে মেনে ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত হয়। কিন্তু নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকনির্দেশনা হলো- ইতেকাফের মাধ্যমে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করা। লাইলাতুল কদরের রাত ইবাদতেঅতিবাহিত করার জন্য কিছু আমল তুলে ধরা হলো। যে আমলগুলো কদরের রাতে করা যেতে পারে। তাহলো-

১. অনর্থক কাজ পরিহার করা (টিভি, মোবাইল ইত্যাদিতে সময় নষ্ট না করা)। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ الَّذِیۡنَ هُمۡ عَنِ اللَّغۡوِ مُعۡرِضُوۡنَ

‘আর (তারা সফলকাম) যারা আসার কর্মকাণ্ড থেকে বিমুখ থাকে।’ (সুরা মুমিনুন: আয়াত ৩)

যেসব কথায় বা কাজে কোন লাভ হয় না, যেগুলোর পরিণাম কল্যাণকর নয়, যেগুলোর আসলে কোনো প্রয়োজন নেই, যেগুলোর উদ্দেশ্যও ভালো নয় সেগুলোর সবই ‘বাজে’ কাজের অন্তর্ভুক্ত। যাতে কোনো দ্বীনি উপকার নেই বরং ক্ষতি বিদ্যমান। এ থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। রাসুলুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মানুষ যখন অনর্থক বিষয়াদি ত্যাগ করে, তখন তার ইসলাম সৌন্দর্য মণ্ডিত হতে পারে।’ (তিরমিজি ২৩১৭, ২৩১৮, ইবনে মাজাহ ৩৯৭৬)

২. বেশি বেশি সাদকা করা। কারণ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্রোতের মতো দান করতেন। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কল্যাণের কাজে ছিলেন সর্বাধিক দানশীল, বিশেষভাবে রমজান মাসে। (তাঁর দানশীলতার কোনো সীমা ছিল না) কেননা, রমজান মাসের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাতে জিবরিল আলাইহিস সালাম তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তিনি তাঁকে কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। যখন জিবরিল আলাইহিস সালাম তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি কল্যাণের জন্য প্রবহমান বায়ুর চেয়েও বেশি দানশীল হতেন। (বুখারি ৪৯৯৭)

৩. কোরআন তেলাওয়াত করা। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কল্যাণের কাজে ছিলেন সর্বাধিক দানশীল, বিশেষভাবে রমজান মাসে। (তাঁর দানশীলতার কোনো সীমা ছিল না) কেননা, রমজান মাসের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাতে জিবরিল আলাইহিস সালাম তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তিনি তাঁকে কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। যখন জিবরিল আলাইহিস সালাম তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি কল্যাণের জন্য প্রবহমান বায়ুর চেয়েও বেশি দানশীল হতেন। (বুখারি ৪৯৯৭)

৪. বেশি বেশি নফল ও হাজতের নামাজ পড়া। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পেছনের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।...’ (১৯০১)

৫. দোয়া ও জিকিরে মগ্ন থাকা। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে কদরের রাতে পড়ার জন্য এ দোয়া শিখিয়েছিলেন। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি ‘লাইলাতুল কদর’ জানতে পারি তাহলে সে রাতে কি বলব? তিনি বললেন, ‘তুমি বল-

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

‘হে আল্লাহ! তুমি সম্মানিত ক্ষমাকারী, তুমি মাফ করতেই পছন্দ কর, অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও।’ (তিরমিজি ৩৫১৩)

৬. তাহাজ্জুদ পড়া। লম্বা রুকু ও সেজদায় তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা। সম্ভব হলে সেজদায় কোরআন-হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো পড়া। আল্লাহ তাআলা বলেন-

اَمَّنۡ هُوَ قَانِتٌ اٰنَآءَ الَّیۡلِ سَاجِدًا وَّ قَآئِمًا یَّحۡذَرُ الۡاٰخِرَۃَ وَ یَرۡجُوۡا رَحۡمَۃَ رَبِّهٖ ؕ قُلۡ هَلۡ یَسۡتَوِی الَّذِیۡنَ یَعۡلَمُوۡنَ وَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ؕ اِنَّمَا یَتَذَکَّرُ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ

‘যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রব-এর রহমত প্রত্যাশা করে (সে কি তার সমান যে এরূপ করে না) বল, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?’ বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা যুমার: আয়াত ৯)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরজের নির্দেশ দেওয়া ছাড়াই তারাহিহের নামাজের ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার উপর দৃঢ় বিশ্বাস রেখে সওয়াবের নিয়তে তারাবিহের নামাজ আদায় করে তার পূর্বাপর সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (নাসাঈ ২২০২)

৭. সেহরি খাওয়ার আগে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ اِذَا سَاَلَکَ عِبَادِیۡ عَنِّیۡ فَاِنِّیۡ قَرِیۡبٌ ؕ اُجِیۡبُ دَعۡوَۃَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ ۙ فَلۡیَسۡتَجِیۡبُوۡا لِیۡ وَ لۡیُؤۡمِنُوۡا بِیۡ لَعَلَّهُمۡ یَرۡشُدُوۡنَ

‘আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৬)

হজরত রিফাআ আল-জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রাতের অর্ধেক বা দু-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা (বান্দাকে) অবকাশ দেন। ফজর উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি বলতে থাকেন, ‘আমার বান্দা আমাকে ছাড়া আর কারো কাছে চাইবে না। যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেবো, যে আমার কাছে প্রার্থনা করবে, আমি তাকে দান করবো, যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো।’ (ইবনে মাজাহ ১৩৬৭)

৮. সেহরি খাওয়া। এটি রবকতময় ইবাদতও বটে। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আব্দুলাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, তোমরা (ভোর রাতে)  সেহরি খাও। কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে।’ (নাসাঈ ২১৪৮)

৯. সুন্নতসহ ফজরের নামাজ পড়া। ফজরের সুন্নত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাত (সুন্নাত) নামাজ দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়েও উত্তম।’ (মুসলিম,  তিরমিজি ৪১৬)

এছাড়া এ জিকিরগুলো বেশি বেশি করা যেতে পারে-

> সুবহানাল্লাহ(سُبْحَانَ الله) আলহামদুলিল্লাহ (اَلْحَمْدُ لله) আল্লাহুআকবার (اَللهُ اَكْبَر) ১০০ বার পড়া।

> লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (لَا اِلَهَ اِلَّا الله) ২০০ বার পড়া।

> আসতাগফিরুল্লাহ (أَسْتَغْفِرُ الله) যতবেশি সম্ভব হয়।

> বেশি বেশি দরুদ শরিফ পড়া (صَلَّى الله عَلَيْهِ وَ سَلَّم)

> সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি (سُبْحَان الله و بِحَمْدِهِ) কমপক্ষে ১০০ বার পড়া।

> লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির (لَا اِلَهَ اِلَّا الله وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَ هوَ عَلَى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْر) কমপক্ষে ১০০ বার পড়া।

> দোয়া ইউনুস (لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْن) যতবার সম্ভব হয়।

> সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম (سُبْحَانَ اللهِ وَ بِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْم) কমপক্ষে ১০০ বার পড়া।

> লা হাওলা ওয়া লা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ (لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ)

> সুরা ইখলাস যতবেশি পড়া যায়-

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ - اللَّهُ الصَّمَدُ - لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ - وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

উচ্চারণ : কুল হুয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুচ্চামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ।’ (মাখরাজসহ বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নেয়া জরুরি )

> সাইয়েদুল ইসতেগফার পাঠ করা-

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।'

অর্থ : 'হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।'

 ইস্তেগফার জাতীয় দোয়া ও আমলগুলো রাতের শেষভাগে করা যেতে পারে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লাইলাতুল কদরে এ দোয়া ও আমলগুলো যথাযথভাবে করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

আরও পড়ুন