ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

রমজানে ফিলিস্তিনিদের রোজা-তারাবিহ ও ইফতার

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০:৩৩ এএম, ১৮ এপ্রিল ২০২৩

মহিমান্বিত মাস রমজান। এ মাসকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী রয়েছে নানা অনুষ্ঠান আর রীতি-রেওয়াজ। সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় বাহারি ইফতার, ইফতারের পর তারাবিহের নামাজ পড়া ইত্যাদি ছাড়াও আনন্দ-উৎসব করার মাধ্যমেও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয় রমজানের খুশির আমেজ। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের চেয়েও এসব রীতি সাংস্কৃতিক উদযাপন হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। মধ্যপ্রাচ্য বা আরবের প্রাচীনতম একটি ভূখণ্ড ফিলিস্তিন। ইসলামের ইতিহাসের বিরাট জায়গা দখল করে আছে এই ফিলিস্তিন। কারণ, অসংখ্য নবী-রাসুলের স্মৃতিবিজড়িত এই ভূমিতে রয়েছে মুসলিম উম্মাহর প্রথম কেবলা বাইতুল মুকাদ্দাস বা আল আকসা। সেখানে কীভাবে পালিত হয় রমজান?

ফানুস উড়িয়ে আনন্দ

ফিলিস্তিনিদের জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব বিস্তার করে আছে তাদের নিজস্ব রমজান সংস্কৃতি। তাদের কাছে রমজান হলো, আধ্যাত্মিক সাধনা ও আপন প্রত্যয়ে বলিষ্ঠ হওয়ার মাস। রমজানের চাঁদ দেখা থেকে শুরু করে ঈদ উদযাপন পর্যন্ত গোটা মাসকে উৎসব হিসেবে পালন করেন তারা। নতুন চাঁদ দেখা দিলে ফিলিস্তিনি শিশুরা রঙিন বেলুন ও ফানুস নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে।

রমজানের ঐতিহ্য

ফিলিস্তিনের আকাশ বাহারি ফানুসে বর্ণিল হয় । সেখানকার অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দের রেশ। মানুষ সম্মিলিত কণ্ঠে রমজানের বিভিন্ন সংগীত গায়। উচ্চ আওয়াজে দফ বাজানো হয়। উল্লাস ও উচ্ছ্বাসের মাধ্যমে রমজানকে বরণ করা ফিলিস্তিনের একটি প্রাচীনতম ঐতিহ্য।

রমজানে আকসার প্রতি ভালোবাসা

নির্যাতিত জাতিগুলোর অন্যতম ফিলিস্তিনিরা। দীর্ঘদিন ধরে তারা নির্যাতিত হচ্ছে। এরপরও তারা নিজস্ব আবাসভূমির স্বপ্ন হারায়নি। তাদের সেই স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আল আকসা মসজিদ এবং ডোম অব রক (কুব্বাতুস সাখরা)। তবে এখানে দখলদার ইসরাইলিদের বিধিনিষেধের কারণে ফিলিস্তিনিরা ইচ্ছা করলেই আসতে পারে না। তবুও আল আকসা মসজিদের প্রতি তাদের ভালোবাসার কমতি নেই। রমজান এলে তাদের সেই ভালোবাসা আরও বেড়ে যায়।

মুক্তি সংগ্রামে রোজা ও ইফতার

নির্যাতিত ফিলিস্তিনি মুসলমানরাও সারা বিশ্বের মুসলমানদের সঙ্গে পবিত্র রমজান মাসের রোজা পালন করেন। তাদের মুক্তি সংগ্রামের একটি প্রয়াসও এই রমজান। গাজার ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ইফতারের একটি জনপ্রিয় খাবার হুম্মা। এই রোজাতেও অনেকে এ খাবারটি দিয়েই ইফতার সারছেন।

সেহরিতে জান্নাতি পাখির ডাক

রমজানের মধ্যরাতে জেরুজালেমে ছেলে-মেয়েরা মিলে ড্রাম বাজিয়ে এবং চিৎকার করে ঘুম থেকে মানুষকে সেহরি খেতে জাগায়। এটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। প্রযুক্তিগত বহু উন্নতি হলেও এটি একটি সম্মানিত ঐতিহ্য; যা আজও অব্যাহত রয়েছে। সেহরির সময়ে দলবেধে এমন মধুর চিৎকারে মনে হয়, যেন জান্নাতি পাখিরা ডাকছেন। মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এ প্রথা এখনও চালু রয়েছে।

ইফতারের সংকেত

জেরুজালেমে রমজানের কামান ছুঁড়ে ও আতশবাজি ফুটিয়ে ইফতারের সময় জানানো হয়। জেরুজালেমের বাসিন্দারা শত শত বছর ধরে রমজানের সময় কামানের গোলাগুলি শুনেছেন। জেরুজালেমের কামানটি শহরের মাঝখানে সালাহ আল দিন রাস্তায় আল সাহিরা গেট এলাকায় মুজাহিদিন ইসলামিক কবরস্থানে অবস্থিত। অন্যান্য শহর, যেমন কলকিল্যা, মসজিদে জামুর ইফতার (রোজার সাইরেন) ব্যবহার করে রোজা ভাঙার জন্য অবহিত করে।

সেহরি ইফতারের খাবার

ফিলিস্তিনিরা রমজানে বিশেষ বিশেষ খাবার তৈরি করতে পছন্দ করেন। ফিলিস্তিনিদের রমজানের রান্নায় অনেক খাবার রয়েছে, যার মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে অন্যদের তুলনায় বিশেষ ধরনের পদ পছন্দ করা হয়। গাজায় সাধারণত মাকলুবা, সুমাগিয়াহ এবং মাফতউল খায়। পশ্চিম তীরে মুসাখান ও মনসাফ বিখ্যাত। আচার এবং সালাদ সবসময় ফিলিস্তিনি ইফতারের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। এখানকার ইফতারির সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশের বেশ মিল রয়েছে। পুরোনো জেরুজালেমের বাসিন্দারা চিরায়ত ঐতিহ্য অনুযায়ী তাদের জনপ্রিয় পানীয় তামারিন জুস পান করেন। তবে সাধারণত তাদের ইফতার প্রথমে খেজুর দিয়ে শুরু হয়। তারা সেহরিতে পনির ও দই জাতীয় খাবার ইত্যাদি খায়।

তারাবিহ তাহাজ্জুদে রাত পার

রমজানের পুরো রাত জেগে থাকে ফিলিস্তিনের মসজিদগুলো। তারাবিহ ও তাহাজ্জুদে রাত কাটায় ফিলিস্তিনিরা। আর দিনগুলো মুখর থাকে ধর্মীয় আলোচনা ও ইতিহাস চর্চায়। ফিলিস্তিনিরা মসজিদে আকসায় তারাবির নামাজ পড়তে পছন্দ করে। ফিলিস্তিনের মসজিদগুলোতে দিনের বেলা ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা সভা হয়। এতে দ্বীনের বিধি-বিধানের পাশাপাশি তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য আলোচিত হয়।

মুসলমানদের প্রথম কেবলা

মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান হলো, ফিলিস্তিন। মুসলমানদের প্রথম কেবলা ‘মসজিদুল আকসা’ এখানেই অবস্থিত। বহু নবী-রাসুলের জন্মস্থান এই ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিনের বাইতুল মোকাদ্দাস মসজিদ থেকে রাসুল (সা.) মেরাজে গমন করেন। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমের সুরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিবেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি; যাতে আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’

রমজান এলেই ইসরায়েলের প্রবণতা

ফিলিস্তিন মানব ইতিহাসের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কারণ, এটি ইসলাম, খ্রিস্টান ও ইহুদি তিন ধর্মের মানুষের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে স্বীকৃত। এ তিন ধর্মের লোকেরা একে তাদের আদি আবাসভূমি মনে করেন। তাই ফিলিস্তন পবিত্র ভূমি হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু আজ সেই পবিত্র ভূমিতে চলছে নারকীয় তাণ্ডব। সেখানে দিনের পর দিন ইসরায়েলি বোমা ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে অগণিত ফিলিস্তিনির বুক। কবে এ রক্ত বন্যা থামবে, তা কেউ জানে না। ইউরোপের দেশগুলো মুখ ঘুরিয়ে রাখে নিজেদের স্বার্থে আর মুসলিম দেশগুলো শুধু নিন্দাজ্ঞাপন করে দায় সারে। রমজান এলেই এই প্রবণতা বাড়তে থাকে।

এমএমএস/জেআইএম

আরও পড়ুন