ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

তারাবিহের আলোচনা

তাওহিদের বর্ণনায় মুখরিত হবে আজকের তারাবিহ

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৬:১২ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০২৩

তাওহিদের ঘোষণায় শুরু হবে ১৪৪৪ হিজরির ২০তম তারাবিহ। আজকের তারাবিতে সুরা ইয়াসিন (২২-৮৩), সুরা সাফফাত, সুরা সোয়াদ, সুরা যুমার (১-৩১) পড়া হবে। সে সঙ্গে ২৩তম পারার তেলাওয়াত শেষ হবে আজ। আল্লাহর ইবাদত ও তার দিকে ফিরে যাওয়ার ঘোষণায় শুরু হবে আজকের তারাবিহ। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ مَا لِیَ لَاۤ اَعۡبُدُ الَّذِیۡ فَطَرَنِیۡ وَ اِلَیۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ
‘আর আমি কেন তাঁর ইবাদাত করব না যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন? আর তাঁর কাছেই তোমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে।’ (সুরা ইয়াসিন: আয়াত ২২)
তাওহিদ রেসালাত আখেরাত এবং আগের নবি-রাসুলদের নবুয়তের বিভিন্ন ঘটনা রয়েছে এ সুরাগুলোতে। বিশেষ করে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের জীবনের প্রায় ঘটনাই পড়া হবে আজ। সুরাগুলোর সংক্ষিপ্ত আলোচ্যসূচি হলো-
সুরা ইয়াসিন : (২২-৮৩)
সুরা ইয়াসিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কী জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে নাজিল হয়েছে। এ সুরায় মূলত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতকে অকাট্য প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত করার পাশাপাশি এ রিসালাতের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করার দাওয়াত প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ مَا لِیَ لَاۤ اَعۡبُدُ الَّذِیۡ فَطَرَنِیۡ وَ اِلَیۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ
‘আর আমি কেন তাঁর ইবাদাত করব না যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন? আর তাঁর কাছেই তোমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে।’ (সুরা ইয়াসিন: আয়াত ২২)
তিনি নিজের তওহিদবাদী হওয়ার কথা প্রকাশ করলেন, যাতে তাঁর উদ্দেশ্য নিজ সম্প্রদায়ের মঙ্গল কামনা ও তাদেরকে সঠিক পথের দিশা দেওয়া। এও হতে পারে যে, তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে বলেছিল যে, তুমিও সেই উপাস্যের উপাসনা করছ, যার দিকে এই সকল রাসুল আমাদের আহবান করছে এবং তুমিও আমাদের উপাস্যকে বর্জন করে বসেছ? যার উত্তরে তিনি এ কথা বলেছিলেন। মুফাসসিরগণ তাঁর নাম হাবিব নাজ্জার বলেছেন। আর আল্লাহই অধিক জানেন।

যারা বিশ্বনবির রিসালাতের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবে না তাদেরকে কঠিন শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করে সতর্ক করা হয়েছে। সাথে সাথে অবিশ্বাসীদেরকে যুক্তি ও অকাট্য প্রমাণ দ্বারা এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। এ সুরায় তিন বিষয়ের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে-
১. তাওহিদ বা একত্ববাদ : প্রাকৃতিক নিদর্শন ও সাধারণ বিবেক-বুদ্ধির মাধ্যমে;
২. পরকাল সম্পর্কে : প্রাকৃতিক নিদর্শন, সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি এবং স্বয়ং মানুষের অস্তিত্বের সাহায্যে;
৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত ও রিসালাতের সত্যতা সম্পর্কে : এ ব্যাপারে বর্ণনা করা হয়েছে যে, বিশ্বনবি সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে অসহনীয় কষ্ট, দুর্ভোগ, নির্যাতন সহ্য করে নবুয়তের মহান দায়িত্ব পালন করেছেন।
এ দাওয়াত ছিল যুক্তিযুক্ত এবং বিবেক সম্মত। যার মধ্যে সবার জন্য কল্যাণ নিহিত। আল্লাহ তাআলা বলেন-
اِنِّیۡۤ اٰمَنۡتُ بِرَبِّکُمۡ فَاسۡمَعُوۡنِ قِیۡلَ ادۡخُلِ الۡجَنَّۃَ ؕ قَالَ یٰلَیۡتَ قَوۡمِیۡ یَعۡلَمُوۡنَ بِمَا غَفَرَ لِیۡ رَبِّیۡ وَ جَعَلَنِیۡ مِنَ الۡمُکۡرَمِیۡنَ
'আমি নিশ্চিতভাবে তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব আমার কাছ থেকে শুনে নাও। তাকে বলা হল, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলল হায়, আমার সম্প্রদায় যদি কোন ক্রমে জানতে পারত- যে আমার পরওয়ারদেগার আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।' (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ২৫-২৭)
তওহিদের দাওয়াত দেওয়া ও একত্বকে স্বীকার করার ফলে তাঁর জাতি তাঁকে হত্যা করতে চাইলে তিনি পয়গম্বরগণকে সম্বোধন করে বললেন (উদ্দেশ্য নিজের ঈমানের উপর সেই পয়গম্বরগণকে সাক্ষ্য রাখা) অথবা তাঁর জাতিকে সম্বোধন করে বললেন (যার উদ্দেশ্য সত্য দ্বীনের উপর শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকার কথা প্রকাশ ছিল), তোমরা যা ইচ্ছা করতে পার; কিন্তু ভালোভাবে শুনে নাও যে, আমার ঈমান সেই প্রতিপালকের উপরে আছে যিনি তোমাদেরও প্রতিপালক। বলা হয় যে, তারা তাঁকে মেরে ফেলেছিল এবং তাতে তাদেরকে কেউ বাধা দেয়নি।
কোরআনের উপরোক্ত বাক্য থেকে এ দিকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, লোকটিকে শহীদ করে দেওয়া হয়েছিল। কেননা, কেবল জান্নাতে প্ৰবেশ অথবা জান্নাতের বিষয়াদি দেখা মৃত্যুর পরই সম্ভবপর। (কুরতুবি, ফাতহুল কাদির)
হজরত কাতাদাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এ লোকটি তার সম্প্রদায়কে আল্লাহর দিকে আহবান জানিয়েছে এবং তাদের জন্য উপদেশ ব্যক্ত করেছে, কিন্তু তারা তাকে হত্যা করেছে।’ (তাবারি)
যে ঈমান ও তওহিদের কারণে আল্লাহ তাআলা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, যদি সে কথা আমার সম্প্রদায় জানত, তাহলে তারাও ঈমান ও তাওহিদে বিশ্বাসী হয়ে আল্লাহর ক্ষমা ও তাঁর বিভিন্ন অনুগ্রহের হকদার হয়ে যেত। এইভাবে সে ব্যক্তি মৃত্যুর পরেও নিজ জাতির মঙ্গল চেয়েছেন। একজন প্রকৃত মুমিনকে এমনই হওয়া দরকার যে, সে সর্বদা মানুষের মঙ্গল কামনা করবে; অমঙ্গল নয়। তাদেরকে সঠিক পথ দেখাবে; পথভ্রষ্ট করবে না। তাতে মানুষ তার সাথে যেমনই ব্যবহার করুক না কেন; এমনকি যদিও তাকে মেরে ফেলে। (আহসানুল বয়ান)
وَ اٰیَۃٌ لَّهُمُ الۡاَرۡضُ الۡمَیۡتَۃُ ۚۖ اَحۡیَیۡنٰهَا وَ اَخۡرَجۡنَا مِنۡهَا حَبًّا فَمِنۡهُ یَاۡکُلُوۡنَ وَ جَعَلۡنَا فِیۡهَا جَنّٰتٍ مِّنۡ نَّخِیۡلٍ وَّ اَعۡنَابٍ وَّ فَجَّرۡنَا فِیۡهَا مِنَ الۡعُیُوۡنِ لِیَاۡکُلُوۡا مِنۡ ثَمَرِهٖ ۙ وَ مَا عَمِلَتۡهُ اَیۡدِیۡهِمۡ ؕ اَفَلَا یَشۡکُرُوۡنَ
'তাদের জন্যে একটি নিদর্শন মৃত পৃথিবী। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা থেকে ভক্ষণ করে। আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং প্রবাহিত করি তাতে নির্ঝরিণী। যাতে তারা তার ফল খায়। তাদের হাত একে সৃষ্টি করে না। অতঃপর তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না কেন?' (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ৩৩-৩৫)
মৃত পৃথিবীকে জীবিত করে আমি তা থেকে তাদের খাবারের নিমিত্তে শুধু ফসলই উৎপন্ন করিনি বরং তাদের কাজ ও মুখের তৃপ্তির জন্য বিভিন্ন রকমের ফল অধিক মাত্রায় সৃষ্টি করেছি। এই আয়াতে শুধু দুই প্রকার ফলের কথা উল্লেখ হওয়ার কারণ হল, উক্ত ফল দুটি খুবই উপকারী এবং আরবদের নিকট অতি পছন্দনীয়ও বটে। তাছাড়া এই দুই ফলের গাছ আরব্য-ভূমিতেই অধিক হারে পাওয়া যায়। ফসলের উল্লেখ আগে করেছেন। কারণ ফসল অধিক পরিমাণে উৎপন্ন হয়ে থাকে এবং মানুষের খোরাকের দিক দিয়েও ফসলের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মানুষ যতক্ষণ ভাত-রুটি ইত্যাদি খাবার পেট পূর্ণ করে না খায়, ততক্ষণ শুধু ফল-ফ্রুট দ্বারা খাবারের প্রয়োজন পূর্ণ হয় না।
কিছু জায়গায় পানির ঝরনা প্রবাহিত করেন, যার পানি দ্বারা উৎপাদিত ফল মানুষ ভক্ষণ করে থাকে। উৎপন্ন ফল-ফসল আল্লাহ তাআলার বান্দাদের প্রতি এক বিশেষ অনুগ্রহ। তাতে বান্দার প্রচেষ্টা, মেহনত, পরিশ্রম ও কষ্টের কোন হাত নেই। এর পরেও তারা আল্লাহর এই সকল নিয়ামতের উপর তাঁর শুকরিয়া জ্ঞাপন কেন করে না? যাতে তারা সেই ফল ভক্ষণ করে এবং ঐ বস্তুও ভক্ষণ করে, যা তাদের হাত তৈরি করেছে। হাতের কর্ম বলতে জমি চাষ করে তাতে বীজ বপন করা, সেচন ও দেখাশোনা করা, অনুরূপ ফল খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি; যেমন তার রস বের করে পান করা, বিভিন্ন ফল-ফ্রুটকে একত্রিত করে আচার, জেলি, মোরব্বা ইত্যাদি বানিয়ে খাওয়া ইত্যাদি।
وَ اٰیَۃٌ لَّهُمُ الَّیۡلُ ۚۖ نَسۡلَخُ مِنۡهُ النَّهَارَ فَاِذَا هُمۡ مُّظۡلِمُوۡنَ وَ الشَّمۡسُ تَجۡرِیۡ لِمُسۡتَقَرٍّ لَّهَا ؕ ذٰلِکَ تَقۡدِیۡرُ الۡعَزِیۡزِ الۡعَلِیۡمِ وَ الۡقَمَرَ قَدَّرۡنٰهُ مَنَازِلَ حَتّٰی عَادَ کَالۡعُرۡجُوۡنِ الۡقَدِیۡمِ لَا الشَّمۡسُ یَنۡۢبَغِیۡ لَهَاۤ اَنۡ تُدۡرِکَ الۡقَمَرَ وَ لَا الَّیۡلُ سَابِقُ النَّهَارِ ؕ وَ کُلٌّ فِیۡ فَلَکٍ یَّسۡبَحُوۡنَ
‘তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়। সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ। চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়। সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।' (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ৩৭-৪০)
আল্লাহর অসীম শক্তির একটি প্রমাণ এও যে, তিনি দিনকে রাত থেকে আলাদা করে দেন। যার ফলে সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। অনুরূপ আল্লাহ তাআলা দিনকে রাত থেকে আলাদা করে দেন।
> জান্নাতিদের জন্য আনন্দের ঘোষণা রয়েছে এ সুরায়। আল্লাহ বলেন-
اِنَّ اَصۡحٰبَ الۡجَنَّۃِ الۡیَوۡمَ فِیۡ شُغُلٍ فٰکِهُوۡنَ هُمۡ وَ اَزۡوَاجُهُمۡ فِیۡ ظِلٰلٍ عَلَی الۡاَرَآئِکِ مُتَّکِـُٔوۡنَ لَهُمۡ فِیۡهَا فَاکِهَۃٌ وَّ لَهُمۡ مَّا یَدَّعُوۡنَ سَلٰمٌ ۟ قَوۡلًا مِّنۡ رَّبٍّ رَّحِیۡمٍ
'এদিন জান্নাতিরা আনন্দে মশগুল থাকবে। তারা এবং তাদের স্ত্রীরা উপবিষ্ট থাকবে ছায়াময় পরিবেশে আসনে হেলান দিয়ে। সেখানে তাদের জন্যে থাকবে ফল-মূল এবং যা চাইবে। করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম।' (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ৫৫-৫৮)
আল্লাহর এই সালাম ফেরেশতাগণ জান্নাতিগণের কাছে পৌঁছে দেবেন। অনেকে বলেন যে, আল্লাহ তাআলা নিজে সরাসরি তাদেরকে সালাম দিয়ে সম্মানিত করবেন।
> বিচার দিবসে অপরাধীদের পৃথক হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ বলেন-

'হে অপরাধীরা! আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও। হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? এবং আমার এবাদত কর। এটাই সরল পথ। শয়তান তোমাদের অনেক দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা বুঝনি? এই সে জাহান্নাম, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হতো। তোমাদের কুফরের কারণে আজ এতে প্রবেশ কর। আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।' (সুরা ইয়াসিন ৫৯-৬৫)

> আবার আল্লাহ তাআলা চাইলে মানুষকে আকার বিকৃতি কিংবা অন্ধ করে দিতে পারতেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন-
وَ لَوۡ نَشَآءُ لَطَمَسۡنَا عَلٰۤی اَعۡیُنِهِمۡ فَاسۡتَبَقُوا الصِّرَاطَ فَاَنّٰی یُبۡصِرُوۡنَ وَ لَوۡ نَشَآءُ لَمَسَخۡنٰهُمۡ عَلٰی مَکَانَتِهِمۡ فَمَا اسۡتَطَاعُوۡا مُضِیًّا وَّ لَا یَرۡجِعُوۡنَ وَ مَنۡ نُّعَمِّرۡهُ نُنَکِّسۡهُ فِی الۡخَلۡقِ ؕ اَفَلَا یَعۡقِلُوۡنَ
'আমি ইচ্ছা করলে তাদের দৃষ্টি শক্তি বিলুপ্ত করে দিতে পারতাম, তখন তারা পথের দিকে দৌড়াতে চাইলে কেমন করে দেখতে পেত! আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে স্ব স্ব স্থানে আকার বিকৃত করতে পারতাম, ফলে তারা আগেও চলতে পারত না এবং পেছনেও ফিরে যেতে পারত না। আমি যাকে দীর্ঘ জীবন দান করি, তাকে সৃষ্টিগত পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেই। তবুও কি তারা বুঝে না?' (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ৬৬-৬৮)
জান্নাতের দিকে যেতে হলে যে পথ পাড়ি দিতে হবে, যদি তাদের অন্ধ করে দেওয়া হয় তবে সে পুলসিরাত তারা কিভাবে পার হতে পারবে? (সাদি) অথবা আমরা যদি তাদেরকে সৎপথ থেকে অন্ধ করে দেই, তারা কীভাবে সৎপথ পাবে? (আত-তাফসীরুস সহীহ)
দৃষ্টিশক্তি থেকে বঞ্চিত করার পর তারা কিভাবে পথ দেখত? কিন্তু এটা তো আমার সহনশীলতা ও দয়া যে, আমি তা করিনি।
> এ সুরায় মহাগ্রন্থ আল-কোরআন সম্পর্কে মহান প্রভু ঘোষণা করেন, এটা কোনো কবিতার বই নয়, বরং এটা হলো সেরা উপদেশ গ্রন্থ। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ مَا عَلَّمۡنٰهُ الشِّعۡرَ وَ مَا یَنۡۢبَغِیۡ لَهٗ ؕ اِنۡ هُوَ اِلَّا ذِکۡرٌ وَّ قُرۡاٰنٌ مُّبِیۡنٌ
'আমি রাসুলকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং তা তার জন্যে শোভনীয়ও নয়। এটা তো এক উপদেশ ও প্রকাশ্য কোরআন।' (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ৬৯)

> মানুষের কল্যাণ উপকারিতা ও নেয়ামতের জন্য আল্লাহ তাআলা পশু-প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
وَ ذَلَّلۡنٰهَا لَهُمۡ فَمِنۡهَا رَکُوۡبُهُمۡ وَ مِنۡهَا یَاۡکُلُوۡنَ وَ لَهُمۡ فِیۡهَا مَنَافِعُ وَ مَشَارِبُ ؕ اَفَلَا یَشۡکُرُوۡنَ وَ اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اٰلِهَۃً لَّعَلَّهُمۡ یُنۡصَرُوۡنَ
'আমি এগুলোকে তাদের হাতে অসহায় করে দিয়েছি। ফলে এদের কতক তাদের বাহন এবং কতক তারা ভক্ষণ করে। তাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তুর মধ্যে অনেক উপকারিতা ও পানীয় রয়েছে। তবুও কেন তারা শুকরিয়া আদায় করে না? তারা আল্লাহর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে যাতে তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হতে পারে।' (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ৭২-৭৪)

সর্বোপরি এ সুরার শেষ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার পবিত্রতা ও রাজত্বের কথা তুলে ধরে তার দিকে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি সতর্কতাস্বরূপ তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَسُبۡحٰنَ الَّذِیۡ بِیَدِهٖ مَلَکُوۡتُ کُلِّ شَیۡءٍ وَّ اِلَیۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ
'অতএব পবিত্র তিনি, যাঁর হাতে সবকিছুর রাজত্ব এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।' (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ৮৩)
এমন হবে না যে, মাটির সঙ্গে মিশে তোমাদের অস্তিত্ব একেবারে নিঃশেষ ও বিলীন হয়ে যাবে। কক্ষনো না; বরং পুনরায় তোমাদেরকে অস্তিত্ব দান করা হবে। আর এটাও সম্ভব হবে না যে, তোমরা পলায়ন করে অন্য কারোর নিকট আশ্রয় নেবে। সুতরাং তোমাদেরকে আল্লাহর নিকটেই উপস্থিত হতে হবে, অতঃপর তিনি তোমাদের কর্ম অনুযায়ী ভাল ও মন্দ প্রতিদান দেবেন।
সুরা সাফফাত : ১৮২
ছোট ছোট আয়াতে বর্ণিত চমৎকার অলংকৃত সুরা 'সুরা সাফফাত'। হিজরতে আগে নাজিল হওয়া এ সুরাটিতে রয়েছে ১২৮ আয়াত। এ সুরার সুন্দর অলংকৃত বর্ণনা যে কাউকে মোহিত করে। এ সুরায় সুরে সুরে আগের নবি রাসুলদের ঘটনাসমূহের ব্যাপক উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্বনবিকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশ্বনবি ও তাঁর সাহাবাদের ওপর যখন প্রচন্ড রকমের নির্যাতন চলছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে অর্থাৎ মক্কী জীবনের শেষ দিকে এ সুরা নাজিল হয়। এ সুরার শুরুতে ফেরেশতাদের কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে এভাবে-
وَ الصّٰٓفّٰتِ صَفًّا فَالزّٰجِرٰتِ زَجۡرًا فَالتّٰلِیٰتِ ذِکۡرًا ۙ
কসম সারিবদ্ধ ফেরেশতাদের, অতঃপর (মেঘমালা) সুচারুরূপে পরিচালনাকারীদের, আর উপদেশ গ্রন্থ (আসমানী কিতাব) তিলাওয়াতকারীদের।’ (সুরা সফফাত: আয়াত ১-৩)
হজরত কাতাদাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টির শপথ করেছেন, তারপর আরেক সৃষ্টির শপথ করেছেন, তারপর অপর সৃষ্টির শপথ করেছেন। এখানে কাতারবন্দী দ্বারা ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে। যারা আকাশে কাতারবন্দী হয়ে আছেন। (তাবারি)
হজরত মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এখানেও কঠোর পরিচালক বলে ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে। (তাবারি) পক্ষান্তরে হজরত কাতাদাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এর দ্বারা কোরআনে যে সমস্ত জিনিসের ব্যাপারে আল্লাহ সতর্ক করেছেন তাই বুঝানো হয়েছে। (তাবারি)
হজরত মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ আরও বলেন, এখানে তেলাওয়াতে রত বলে ফেরেশতাদেরকে বোঝানো হয়েছে। আর কাতাদাহ বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য, কোরআন থেকে মানুষের ঘটনাবলী ও পূর্ববর্তী উম্মতদের কাহিনী যা তোমাদের উপর তেলাওয়াত করে শোনানো হয়। (তাবারি)
আল্লামা শানকিতি বলেন, এখানে কাতারবন্দী, কঠোর পরিচালক ও তেলাওয়াতকারী বলে ফেরেশতাদের কয়েকটি দলকে বুঝানো হয়েছে। কারণ, এ সুরারই অন্যত্র কাতারবন্দী থাকা ফেরেশতাদের গুণ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আর আমরা তো সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান এবং আমরা অবশ্যই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণাকারী।
এ সুরার মৌলিক বিষয়বস্তুগুলো ঈমান বাড়াতে সহায়ক। আর তাহলো-
> এতে তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাতের বিশ্বাসসমূহ বিভিন্ন পন্থায় উপস্থাপিত হয়েছে।
> মুশকিরদের ভ্রান্ত আক্বিদাসমূহের খণ্ডন করা হয়েছে।
> জান্নাত জাহান্নামের অবস্থাসমূহের চিত্রায়ন করা হয়েছে।
> পয়গাম্বরগণের দাওয়াতের বিষয়সমূহ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

> কাফেরদের সন্দেহ ও আপত্তির নিরসন করা হয়েছে।
> হজরত নুহ, হজরত ইবরাহিম ও তাদের পুত্রগণ, হজরত মুসা, হজরত হারুন, হজরত ইলিয়াস, হজরত লুত ও হজরত ইউনুস আলাইহিস সালামের ঘটনাবলী কোথাও সংক্ষেপে আবার কোথাও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

> মক্কার অবিশ্বাসীরা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা বলে অভিহিত করতো, এ সুরার উপসংহারে বিশদভাবে এ ধারণার খণ্ডন করা হয়েছে।

> সবেচেয়ে শিক্ষণীয় বিষয় হলো- হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মহান জীবনেতিহাস সবিস্তার আলোচিত হয়েছে এ সুরায়। যা বিশ্বনবি ও সাহাবায়ে কেরামের জন্য বিপদের মুহূর্তে উজ্জীবিত হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছে।

সুরা সোয়াদ : ৮৮
গুনাহ মাফের এ সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এ সুরার পটভূমি হলো- বিশ্বনবির পিতৃব্য আবু তালিব ইসলাম গ্রহণ না করা সত্ত্বেও তাঁর দেখা-শোনা, হেফাজত ও যথাযথ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। এ সুরার আলোচিত দিকগুলো হলো-

> পবিত্র কোরআনের শ্রেষ্ঠত্ব, মাহাত্ম ও শান ও মানের দ্বারা প্রিয় নবির রিসালাত ও নবুয়তের দলিল প্রমান উপস্থাপন করা হয়েছে। > এ সুরায় হজরত দাউদ, হজরত সোলায়মান এবং হজরত আইউব আলাইহিস সালামের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে।

> মক্কার কুরাইশরা আফসোস করে বলতো- যদি আমাদের নিকট কোনো উপদেশ গ্রন্থ নাজিল হতো। তবে আমরা পূর্ববর্তী লোকদের ন্যায় আল্লাহ তাআলার খাঁটি বান্দা হতে পারতাম। তাদের আকঙ্ক্ষার প্রেক্ষিতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। যা এ সুরায় আলোচিত হয়েছে।

সুরা যুমার : আয়াত ১-৩১

এ সুরাটিও মক্কায় অবতীর্ণ। সুরাতুল গোরাফ নামেও এ সুরাটি পরিচিত। এ সুরার অধিকাংশ বক্তব্য তাওগিদ সম্পর্কিত। যারা তাওহিদে বিশ্বাস করে, তাদের পুরস্কার; যারা অবিশ্বাস করে তাদের শাস্তির কথাও এ সুরায় ঘোষিত হয়েছে। মানবতার কলংক শিরক তথা অংশীবাদের বাতুলতা ঘোষণা করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

আরও পড়ুন