তারাবিহের আলোচনা
ভালো কাজের সওয়াব দশ থেকে হাজারগুণ বেশি
১৪৪৪ হিজরির রমজান মাসের পঞ্চম তারাবিহ আজ। আজকের তারাবিহতে সুরা মায়িদার ৮৩নং আয়াত থেকে শেষ পর্যন্ত, সুরা আনআমসহ সুরা আ’রাফের ১১নং আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। মুমিন মুসলমানের ভালো কাজের দশগুণ সাওয়াব লাভের বর্ণনা পড়া হবে আজ। মুমিন মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুটি দোয়া রয়েছে আজকের তারাবিহতে। দোয়া দুইটি কী?
বাদশাহ নাজ্জাসির দরবারে মুসলিমদের উপস্থিতি
আল্লাহর একাধিক হুকুম অমান্য করার কাফফারাস্বরূপ রোজা রাখার গুরুত্বপূর্ণ বিধানসহ যে আয়াতে শুরু হবে আজকের তারাবিহ। প্রথম আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
وَ اِذَا سَمِعُوۡا مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَی الرَّسُوۡلِ تَرٰۤی اَعۡیُنَهُمۡ تَفِیۡضُ مِنَ الدَّمۡعِ مِمَّا عَرَفُوۡا مِنَ الۡحَقِّ ۚ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاکۡتُبۡنَا مَعَ الشّٰهِدِیۡنَ
'আর তারা রাসুলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, যখন তা শুনে, তখন আপনি তাদের চোখ অশ্রু সজল দেখতে পাবেন; এ কারণে যে, তারা সত্যকে চিনে নিয়েছে। তারা বলে- 'হে আমাদের প্রতি পালক! আমরা মুসলমান হয়ে গেলাম। অতএব, আমাদেরও মান্যকারীদের তালিকাভুক্ত করে নিন।' (সুরা মায়েদা : আয়াত ৮৩)
আলোচ্য আয়াতে মুসলিমদের সঙ্গে শক্রতা ও বন্ধুত্বের মাপকাঠিতে ওইসব আহলে কিতাবের কথা আলোচনা করা হয়েছে, যারা সত্যানুরাগ ও আল্লাহভীতির কারণে মুসলিমদের প্রতি হিংসা ও শক্রতা পোষণ করত না। কিন্তু ইহুদিদের মধ্যে এ জাতীয় লোকের সংখ্যা ছিল একান্তই নগণ্য। উদাহরণত- আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম প্রমূখ।
নাসারাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে এরূপ লোকের সংখ্যা ছিল বেশি। বিশেষতঃ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমলে আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাসি এবং উচ্চ পদস্থ কর্মচারী ও জনগণের মধ্যে এরূপ লোকের সংখ্যা ছিল প্রচুর।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জানতে পারলেন যে, আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাসি একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি, তখন তিনি জাফর ইবন আবু তালেব, ইবন মাসউদ, উসমান ইবন মাযউনসহ একদল সাহাবাকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করার অনুমতি দেন।
তারা সেখানে সুখে-শান্তিতেই বসবাস করছিল। মক্কার মুশরিকরা এ খবর পেয়ে আমর ইবন আসকে একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়ে নাজ্জাসির কাছে পাঠায়। তারা নাজ্জাসিকে অনুরোধ জানায় যে, এরা আহম্মক ধরণের কিছু লোক। এরা বাপ-দাদার দ্বীন ছেড়ে আমাদেরই একজন লোক- যে নিজেকে নবি বলে দাবি করেছে, তার অনুসরণ করছে। আমরা তাদের ফেরৎ নিতে এসেছি।
নাজ্জাসি জাফর ইবন আবু তালেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, ঈসা এবং তার মা সম্পর্কে তোমাদের অভিমত কি? জবাবে তিনি বললেন, ঈসা আল্লাহর বান্দা এবং তার এমন কালেমা যা তিনি তার পক্ষ থেকে মারইয়ামের কাছে অর্পণ করেছেন এবং তার পক্ষ থেকে একটি রূহ। একথা শুনে নাজ্জাসি একটি কাঠি উঠিয়ে বললেনম, তোমরা যা বলেছ, তার থেকে ঈসা এ কাঠি পরিমাণও বেশি নন।
তারপর নাজ্জাসি তাদের বললেন, তোমাদের উপর যা নাজিল করা হয়েছে, তা থেকে কি আমাকে কিছু শুনাতে পার? তারা বলল, ‘হ্যাঁ’। নাজ্জাসি বললেন, পড়।
তখন জাফর ইবন আবু তালেব কোরআনের আয়াত পড়ে শুনালে নাজ্জাসিসহ তার দরবারে সে সমস্ত নাসারা আলেমগণ ছিলেন তারা সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। (তাবারি, বাগভি)
ভালো কাজের সওয়াব দশগুণ বেশি
আজকের তারাবিহতে পঠিত আয়াতগুলোতে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধানসহ তাওহিদ রেসালাত এবং পরকালের বিশ্বাস, বিশ্বনবি ও মুমিন মুসলমানের জন্য রয়েছে সান্ত্বনা এবং সুসংবাদ। মুমিনদের জন্য সেরা সুসংবাদ ওঠেছে এসেছে সুর আনআমে। আল্লাহ বলেন-
مَنۡ جَآءَ بِالۡحَسَنَۃِ فَلَهٗ عَشۡرُ اَمۡثَالِهَا ۚ وَ مَنۡ جَآءَ بِالسَّیِّئَۃِ فَلَا یُجۡزٰۤی اِلَّا مِثۡلَهَا وَ هُمۡ لَا یُظۡلَمُوۡنَ
'যে একটি সৎকর্ম করবে, সে তার দশগুণ (প্রতিদান) পাবে এবং যে একটি মন্দ কাজ করবে, সে তার সমান শাস্তিই পাবে। বস্তুত তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।' (সুরা আনআম : আয়াত ১৬০)
এ আয়াতে পরকালের প্রতিদান ও শাস্তির একটি সহৃদয় বিধি বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি একটি সৎকাজ করবে, তাকে দশগুণ প্রতিদান দেওয়া হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি একটি গুনাহ করবে, তাকে শুধু একটি গুনাহের সমান বদলা দেওয়া হবে। হাদিসে পাকে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের প্রতিপালক অত্যন্ত দয়ালু। যে ব্যক্তি কোনো সৎকাজের শুধু ইচ্ছা করে, তার জন্য একটি নেতি লেখা হয়; চাই ইচ্ছাকে কাজে পরিণত করুক বা না করুক। এরপর যখন সে সৎকাজটি সম্পাদন করে, তখন তার আমলনামায় দশটি নেকি লেখা হয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোনো পাপ কাজের ইচ্ছা করে, এরপর তা কাজে পরিণত না করে, তার আমলনামায়ও একটি নেকি লেখা হয়। এরপর যদি সে ইচ্ছাকে কাজে পরিণত করে, তবে একটি গুনাহ লেখা হয়। কিংবা একেও মিটিয়ে দেওয়া হয়। এহেন দয়া ও অনুকম্পা সত্বেও আল্লাহর দরবারে ওই ব্যক্তিই ধ্বংস হতে পারে, যে ধ্বংস হতেই দৃঢসংকল্প।’ (বুখারি ৬৪৯১; মুসলিম ১৩১)
হাদিসের অপর এক বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি একটি সৎকাজ করে, সে দশটি সৎকাজের সওয়াব পায় বরং আরও বেশি পায়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি একটি গুনাহ করে সে তার শাস্তি এক গুনাগের সমপরিমাণ পায় কিংবা তাও আমি মাফ করে দেব। যে ব্যক্তি পৃথিবী ভর্তি গুনাহ করার পর আমার কাছে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আমি তার সঙ্গে ততটুকুই ক্ষমার ব্যবহার করবো। যে ব্যক্তি আমার দিকে অর্ধহাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই এবং যে ব্যক্তি আমার দিকে একহাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে বা (অর্থাৎ দুই বাহু প্রসারিত) পরিমাণ অগ্রসর হই। যে ব্যক্তি আমার দিকে লাফিয়ে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।’ (মুসনাদে আহমাদ ৫/১৫৩)
এসব হাদিস থেকে জানা যায়, আয়াতে যে সৎকাজের প্রতিদান দশগুণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তা সর্বনিম পরিমাণ। আল্লাহ তাআলা স্বীয় কৃপায় তা আরও বেশি দিতে পারেন এবং দেবেন। অন্যান্য হাদিস দ্বারা সত্তর গুণ বা সাতশ গুণ পর্যন্ত প্রমাণিত রয়েছে। (তাফসিরে জাকারিয়া)
এটা হল আল্লাহ তাআলার সেই দয়া ও অনুগ্রহের বর্ণনা, যা ঈমানদারদের উপর তিনি করবেন। আর তা হল, একটি নেকির বিনিময় তিনি দশটি নেকি দ্বারা দেবেন। আর এটা হল কমসে কম প্রতিদান। তাছাড়া কোরআন ও হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, কোনো কোনো নেকির প্রতিদান কয়েক শ’ এমন কি কয়েক হাজার গুণ পর্যন্ত দেওয়া হবে। (তাফসিরে আহসানুল বয়ান)
সুরা মায়িদা
সুরা মায়িদা ১২০ আয়াত এবং ১৬ রুকুতে পরিপূর্ণ সুরা। হুদায়বিয়ার সন্ধির পর ৬ হিজরির শেষের দিকে অথবা ৭ হিজরির প্রথম দিকে এ সুরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। সুরাটির ৮৩ থেকে শেষ আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। আজকের তারাবিহের প্রথম আয়াতেই রয়েছে মুমিন মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। আর তাহলো-
رَبَّنَا آمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ
'হে আমাদের প্রতি পালক, আমরা মুসলমান হয়ে গেলাম। অতএব, আমাদেরকেও মান্যকারীদের তালিকাভুক্ত করে নিন।'
সুরাটির আলোচ্য সংক্ষিপ্ত আলোচ্য সূচি-
আয়াত ৮৩ থেকে ১২০
কোরআনের সাত নম্বর পারার শুরুতেই আল্লাহ তাআলা আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা সত্যের অনুসারি তাদের প্রশংসা করেছেন। এরপর মুমিন বান্দার পুরস্কার এবং অবধ্যতাকারীদের পরিণাম আলোচনার পর শপথের কাফফার বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে ওঠে এসেছে সুরা মায়িদার ৮৯নং আয়াতে। আবার অযথা কসম করার কারণে কাফফারা স্বরূপ রোজা রাখা কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
لَا یُؤَاخِذُکُمُ اللّٰهُ بِاللَّغۡوِ فِیۡۤ اَیۡمَانِکُمۡ وَ لٰکِنۡ یُّؤَاخِذُکُمۡ بِمَا عَقَّدۡتُّمُ الۡاَیۡمَانَ ۚ فَکَفَّارَتُهٗۤ اِطۡعَامُ عَشَرَۃِ مَسٰکِیۡنَ مِنۡ اَوۡسَطِ مَا تُطۡعِمُوۡنَ اَهۡلِیۡکُمۡ اَوۡ کِسۡوَتُهُمۡ اَوۡ تَحۡرِیۡرُ رَقَبَۃٍ ؕ فَمَنۡ لَّمۡ یَجِدۡ فَصِیَامُ ثَلٰثَۃِ اَیَّامٍ ؕ ذٰلِکَ کَفَّارَۃُ اَیۡمَانِکُمۡ اِذَا حَلَفۡتُمۡ ؕ وَ احۡفَظُوۡۤا اَیۡمَانَکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَکُمۡ اٰیٰتِهٖ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ
'আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দেবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোজা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।‘ ( সুরা মায়েদা : আয়াত ৮৯)
এর সারমর্ম এই যে, ইয়ামিনে লাগভের জন্য আল্লাহ তাআলা তোমাদের পাকড়াও করেন না অর্থাৎ কাফফারা ওয়াজিব করেন না। অন্য শপথের জন্য কাফফারা দিতে হবে। আর তাহলো- তিনটি কাজের মধ্য থেকে স্বেচ্ছায় যে কোন একটি কাজ করতে হবে।
১. দশ জন দরিদ্রকে মধ্যশ্রেণীর খাদ্য সকাল-বিকাল দুবেলা খাওয়াতে হবে কিংবা ২. দশ জন দরিদ্রকে সতর ঢাকা পরিমাণ পোশাক-পরিচ্ছদ দিতে হবে। উদাহরণত- একটি পাজামা অথবা একটি লুঙ্গি অথবা একটি লম্বা কোর্তা কিংবা ৩. কোনো গোলামকে মুক্ত করে দেওয়া। (ইবনে কাসির, কুরতুবি)
এরপর বলা হয়েছে, ‘কোনো শপথ ভঙ্গকারী ব্যক্তি যদি এ আর্থিক কাফফারা দিতে সমর্থ না হয়, তবে তার জন্য কাফফারা এই যে সে তিন দিন রোজা রাখবে।’ কোনো কোনো বর্ণনায় এখানে ধারাবাহিকভাবে তিনটি রোজা রাখার নির্দেশ রয়েছে। তাই ইমামে আজম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ ও অন্যান্য কয়েকজন ইমামের মতে শপথের কাফফারা হিসেবে যে রোজা পালন করতে হবে তা ধারাবাহিকভাবে হওয়া জরুরি। (ইবন কাসির, কুরতুবি)
আজকের তারাবির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিধান ঘোষিত হবে মদ-জুয়া ও মূর্তিপুজারীদের বিষয়ে। এ সুরার ৯০ ও ৯১ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡهُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ اِنَّمَا یُرِیۡدُ الشَّیۡطٰنُ اَنۡ یُّوۡقِعَ بَیۡنَکُمُ الۡعَدَاوَۃَ وَ الۡبَغۡضَآءَ فِی الۡخَمۡرِ وَ الۡمَیۡسِرِ وَ یَصُدَّکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ عَنِ الصَّلٰوۃِ ۚ فَهَلۡ اَنۡتُمۡ مُّنۡتَهُوۡنَ
‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, ভাষ্কর্য, প্রতিকৃতি ও ভাগ্য নির্ণয়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর। তাহলে তোমরা সফল হতে পারবে। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিবাদ সৃষ্টি করতে চায়, জিকির ও নামাজ থেকে তোমাদের দূরে রাখতে চায়। তবে কি তোমরা বিরত হবে না?’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৯০-৯১)
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যা-ই বিবেকশূণ্য করে তা-ই মদ। আর সমস্ত মাদকতাই হারাম। যে ব্যক্তি কোনো মাদক সেবন করল, চল্লিশ প্রভাত পর্যন্ত তার নামাজ অসম্পূর্ণ থাকবে। তারপর যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন, এভাবে চতুর্থবার পর্যন্ত। যদি চতুর্থবার পূণরায় তা করে, তখন আল্লাহর উপর হক হয়ে দাঁড়ায় তাকে ‘ত্বিনাতুল খাবাল’ থেকে পান করানো। বলা হল, হে আল্লাহর রাসুল! ‘ত্বিনাতুল খাবাল’ কী? তিনি বললেন, জাহান্নামাবাসীদের পূজ। যে কেউ কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ককে মদ খাওয়াবে, যে হারাম হালাল সম্পর্কে জানে না, আল্লাহর উপর হক হয়ে যাবে যে তাকে ‘ত্বিনাতুল খাবাল’ পান করানো।’ (মুসলিম ২০০২, আবু দাউদ ৩৬৮০)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মদ খেতে অভ্যস্ত হয়ে গেল এবং তওবা না করে মারা গেল, সে আখেরাতে তা পান করতে পারবে না। (মুসলিম ২০০৩)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অনুগ্রহের খোটাদানকারী, পিতামাতার অবাধ্য এবং মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (নাসাঈ ৫৬৭২)
এ হল মদ ও জুয়ার অতিরিক্ত সামাজিক ও ধর্মীয় অপকারিতা; যা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। এই জন্য মদকে বহু মন্দের চাবিকাঠি বা প্রধান পাপকর্ম বলা হয়। আর জুয়াও এমন নিকৃষ্ট খেলা যে, মানুষকে নিমেষে কপর্দকশূন্য করে ফেলে এবং আমীরজাদা ও বনেদী বড়লোককেও নিঃস্ব গরিব বানিয়ে ছাড়ে। আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমিন।
আজকের তেলাওয়াতকৃত অংশে মুসলমানদের উপদেশ প্রদান, ন্যায় ও ইনসাফ ও ভারসাম্যের রীতিনীতি অবলম্বনের বিষয় আলোকপাত করা হয়েছে। পাশাপাশি আল্লাহর হুকুম আনুগত্য মেনে চলার প্রতি গুরুত্বরোপ করা হয়েছে। এ সুরার ৯৫নং আয়াতে ইহরাম অবস্থায় শিকার করার বিধানও দেয়া হয়েছে। যার কাফফারা স্বরূপও দেয়া হয়েছে রোজার বিধান। আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَقۡتُلُوا الصَّیۡدَ وَ اَنۡتُمۡ حُرُمٌ ؕ وَ مَنۡ قَتَلَهٗ مِنۡکُمۡ مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآءٌ مِّثۡلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ یَحۡکُمُ بِهٖ ذَوَا عَدۡلٍ مِّنۡکُمۡ هَدۡیًۢا بٰلِغَ الۡکَعۡبَۃِ اَوۡ کَفَّارَۃٌ طَعَامُ مَسٰکِیۡنَ اَوۡ عَدۡلُ ذٰلِکَ صِیَامًا لِّیَذُوۡقَ وَبَالَ اَمۡرِهٖ ؕ عَفَا اللّٰهُ عَمَّا سَلَفَ ؕ وَ مَنۡ عَادَ فَیَنۡتَقِمُ اللّٰهُ مِنۡهُ ؕ وَ اللّٰهُ عَزِیۡزٌ ذُو انۡتِقَامٍ
'হে মুমিনগণ, তোমরা ইহরাম অবস্থায় শিকার বধ করো না। তোমাদের মধ্যে যে জেনে শুনে শিকার বধ করবে, তার উপর বিনিময় ওয়াজেব হবে, যা সমান হবে ঐ জন্তুর, যাকে সে বধ করেছে। দু'জন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি এর ফয়সালা দেবে। বিনিময়ের জন্তুটি উৎসর্গ হিসেবে কাবায় পৌঁছাতে হবে। অথবা তার উপর কাফফারা ওয়াজেব হবে- কয়েকজন দরিদ্রকে খাওয়ানো অথবা তার সমপরিমাণ রোজা রাখতে হবে। যাতে সে স্বীয় কৃতকর্মের প্রতিফল আস্বাদন করে। যা হয়ে গেছে, তা আল্লাহ মাফ করেছেন। যে পুনরায় এ কাজ করবে, আল্লাহ তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেবেন। আল্লাহ পরাক্রান্ত, প্রতিশোধ গ্রহণে সক্ষম।' (সুরা মায়েদা : আয়াত ৯৫)
সুরাটির শেষ দিকে ইহুদি-খ্রিস্টানদের উপদেশ প্রদান করা হয়েছে। ইহুদির শক্তি খর্ব করে মুসলিম সম্প্রদায়ের শক্তি বৃদ্ধি এবং ইসলামের সঠিক নীতি অবলম্বন করে পূববর্তী কিতাবের নীতি পরিহারের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ সুরার শেষাংশে রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। যে দোয়ায় রয়েছে রিজিক ও রুটি-রুজির বরকতের আবেদন। যা মুমিন মুসলমানের জন্য খুবই উপযোগী। আল্লাহ তাআলা দোয়াটি এভাবে তুলে ধরেছেন-
اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَاء تَكُونُ لَنَا عِيداً لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
'হে আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা আমাদের প্রতি আকাশ থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা অবতরণ করুন। তা আমাদের জন্যে অর্থাৎ, আমাদের প্রথম ও পরবর্তী সবার জন্যে আনন্দোৎসব হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হবে। আপনি আমাদের রুজি দিন। আপনিই শ্রেষ্ট রুজিদাতা।' (সুরা মায়েদা : আয়াত ১১৪)
সর্ব শেষ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার বিধান পালনকারীদের প্রতি সন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন। মুমিনরাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকবেন। যাকে ইসলামে সবচেয়ে বড় সাফল্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুরা আনআম
'সুরা আনআম' মক্কায় নাজিল হওয়া ২০ রুকু ও ১৬৫ আয়াত সমৃদ্ধ কোরআনের ৬নং সুরা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার কাজ শুরুর পর ১২ বছর অতিবাহিত হয়। এ বছরগুলোতে কুরাইশদের প্রতিবন্ধকতা জুলুম অত্যাচার চরম পর্যায়ে পৌছেছিল।
ইসলাম গ্রহণকারীদের একটি দল কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দেশত্যাগ তথা হিজরতে বাধ্য হয়েছিল। বিশ্বনবিকে সহযোগিতার জন্য তখন হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা ও আবু তালেব কেউ তখন জীবিত ছিলেন না। চরম প্রতিকূলতাপূর্ণ মুহূর্তে আল্লাহ তাআলা মক্কায় এ সুরা নাজিল করেন। এ সুরার আলোচ্য বিষয়গুলো হলো-
১ থেকে ৪১ পর্যন্ত
কাফেরদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব প্রদানের পর তাদের হঠকারী আচরণের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, তোমরা একটু চোখ মেলে দেখ ও ভাব। তোমরা যা বলছ ও করছ তা কতটুকু সঠিক?
৪২ থেকে ৯০ পর্যন্ত
আগের ধারাবাহিকতায় আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস ও ঈমানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এখানেও কাফেরদের মনে জাগা ও মুখে তোলা অনেক প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে। মাঝে মাঝে পার্থিব জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব ও আখেরাতের স্থায়িত্বের কথা উল্লেখ করে মোমিন সম্প্রদায়কে নসিহত করা হয়েছে। এক পর্যায়ে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ঘটনার বর্ণনা এসেছে। কীভাবে তিনি নিজ সম্প্রদায়কে দাওয়াত দিয়েছিলেন, তার বিস্তারিত বর্ণনা।
৯১ থেকে ৯৪ পর্যন্ত
বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব নাজিলের প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতা এবং অন্যদিকে কোরআনের সাথে কাফের সম্প্রদায়ের আচরণ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
৯৫ থেকে ১১০ পর্যন্ত
আল্লাহ তাআলা নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি কীভাবে বিশ্বরাজ্য পরিচালনা করছেন, এর কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে তাঁর প্রতি ঈমান আনার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। অতপর তিনি ঈমানদারদের জন্য কিছু নিদর্শন তুলে ধরেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ هُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۚ فَاَخۡرَجۡنَا بِهٖ نَبَاتَ کُلِّ شَیۡءٍ فَاَخۡرَجۡنَا مِنۡهُ خَضِرًا نُّخۡرِجُ مِنۡهُ حَبًّا مُّتَرَاکِبًا ۚ وَ مِنَ النَّخۡلِ مِنۡ طَلۡعِهَا قِنۡوَانٌ دَانِیَۃٌ وَّ جَنّٰتٍ مِّنۡ اَعۡنَابٍ وَّ الزَّیۡتُوۡنَ وَ الرُّمَّانَ مُشۡتَبِهًا وَّ غَیۡرَ مُتَشَابِهٍ ؕ اُنۡظُرُوۡۤا اِلٰی ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثۡمَرَ وَ یَنۡعِهٖ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکُمۡ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ
'তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন অতপর আমি এর দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি, অতঃর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, যয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য কর যখন সেুগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চয় এ গুলোতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে।' (সুরা আনআম : আয়াত ৯৯)
১১১ থেকে ১২৯ পর্যন্ত
চোখের সামনে এতসব নিদর্শন দেখেও অনেকেই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে না। তারা উল্টো হঠকারী আচরণ করবে। এদের পরকালীন জীবন কত কষ্টকর ও যন্ত্রণাদায়ক হবে, তা বলা হয়েছে। মানুষকে কিছু বিশেষ নসিহত করা হয়েছে, যাতে মানুষ আল্লাহ তাআলা, কিতাব, নবি ও আখেরাতের প্রতি ঈমান আনতে পারে।
১৩০ থেকে ১৫৪ পর্যন্ত
উম্মতে মুহাম্মদির জন্য আল্লাহ তায়ালা কী খাদ্য হারাম করেছেন, আর ইহুদিদের জন্য কী হারাম করেছিলেন, তার একটা তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়েছে। এরপর আল্লাহ তায়ালা বিকৃত ইহুদি ধর্মের সঠিক রূপ বলে দিয়েছেন। ওই ধর্মে বাস্তবে কী কী নিষিদ্ধ ছিল, তা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। এরপর এ সুরার বাকি অংশে কোরআনের স্বার্থকতা ও উপকারিতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। শেষ দিকে মানুষের জীবন সবকিছু মহান রবের জন্য এ কথার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ
'(হে রাসুল!)আপনি বলুন- আমার নামাজ, আমার কুরবানি এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতি পালক আল্লাহরই জন্যে।' (সুরা আনআম : আয়াত ১৬২)
সর্বোপরি বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীর্ঘ পরিশ্রম ও অক্লান্ত চেষ্টা সাধনায় যখন ইসলামের প্রচার ও প্রসার ফলপ্রসু হচ্ছিল না তখন প্রিয়নবি ও মুসলমানদের হতাশা ও অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকেই মূলতঃ সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে এ সুরায়।
সুরা আরাফ
মক্কায় নাজিল হওয়া সুরাটির আয়াত সংখ্যা ২০৬। রুকু সংখ্যা ২৪। আজ সুরার ১১টি আয়াত পাঠ কা হবে। এ সুরাটিও সুরা আনআমের সমকালীন সময়ে নাজিল করা হয়েছে। তবে এ সুরায় বিশ্বনবির রিসালাতের প্রতি ঈমানের ব্যাপারে তাগিদ করা হয়েছে। এ সুরায় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আনুগত্য করার জন্য বিশ্ববাসীকে উদ্বুদ্ধ করাই হলো সুরার মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।
এ সুরার ১১নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার নির্দেশ পালনের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। যেখানে বলা হয়েছে আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে ফেরেশতাকুল আদম আলাইহিস সালামকে সেজদা করেছিল। আল্লাহর নির্দেশের আনুগত্য করেছিল কিন্তু শয়তান তা অমান্য করে। আর এটি মুমিন মুসলমানদের জন্য অনে গুরুত্বপূর্ণ নসিহত। মুমিন মুসলমান ফেরেশতাদের মতো বিনা প্রশ্নে আল্লাহর নির্দেশ পালন করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ لَقَدۡ خَلَقۡنٰکُمۡ ثُمَّ صَوَّرۡنٰکُمۡ ثُمَّ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ ٭ۖ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ لَمۡ یَکُنۡ مِّنَ السّٰجِدِیۡنَ
'আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব, তৈরি করেছি। অতপর আমি ফেরেশতাদেরকে বলছি-আদমকে সেজদা কর তখন সবাই সেজদা করেছে, কিন্তু ইবলিস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না।' (সুরা আরাফ : আয়াত ১১)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের উল্লেখিত বিষয়গুলো বুঝে বাস্তব জীবনে আমল করার তাওফিক দান করুন। তাওহিদ রেসালাত ও আখেরাতের বিষয়ে সর্বোচ্চ ধৈর্যধারন ও ত্যাগের গুণাবলী অর্জন করে কোরআনের সমাজ বিনির্মাণের তাওফিক দান করুন। কোরআনের প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন এবং রিজিকের ধনভান্ডার লাভে উল্লেখিত দোয়া দুটি পড়ার তাওফিক দান করুন
এমএমএস/এমএস