রমজানের ফজিলত
ইবাদতের মহৎ মৌসুম মহিমান্বিত রমজান মাস সমাগত। যে বরকতময় মাসে মহান আল্লাহ তাআলা নেক আমলের সওয়াব সীমাহীনভাবে বাড়িয়ে দেন এবং অফুরন্ত কল্যাণ দান করেন। নেক আমলে উৎসাহী ব্যক্তিদের জন্য কল্যাণের সকল দরজা উন্মুক্ত করে দেন। এটি মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিলের মাস। কল্যাণ ও বরকতের মাস। পুরস্কার ও দানের মাস। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ
‘রমজান মাস, যাতে নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন; যা বিশ্ব মানবের জন্য হেদায়েত, সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৫)
রমজান রহমত, মাগফেরাত এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। যার প্রথমে রহমত, মাঝে মাগফেরাত এবং শেষে রয়েছে জাহান্নাম হতে মুক্তি। এ মহিমান্বিত মাসের ফজিলতের সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনা এসেছে-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
وَمَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
‘... আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা পালন করবে, তারও অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি ১৯০১)
রমজানে অধিকহারে নেক আমল করার জন্য এবং আমলকারীদের উৎসাহ প্রদানের জন্য জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। আর ঈমানদারদের গুনাহ কম হওয়ার কারণে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।রমজানের এ মোবারক মাসে মানুষকে যেন পথ ভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যেতে না পারে সে জন্য শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। হাদিসে পাকে এসেছে-
২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، وَصُفِّدَتِ الشَّيَاطِين
‘যখন রমজান মাস আগমন করে, তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়।’ (বুখারি ১৮৯৯; মুসলিম ১০৭৯)
রমজানের মূল্যবান পাঁচটি বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে দান করেছেন। যা অন্য কোনো উম্মতকে দান করা হয়নি। আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদির প্রতি নেয়ামাত পূর্ণ করে বিশেষ ইহসান করেছেন। এভাবে আল্লাহর কতই না নেয়ামত ও অনুগ্রহ এ উম্মতের উপর ছায়া হয়ে আছে; কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَتُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِۗ
‘তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত। মানুষের কল্যাণের জন্যই তোমাদের বের করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে। আর আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান রাখবে।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১১০)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
أُعْطِيَتْ أُمَّتِي خَمْسَ خِصَالٍ فِي رَمَضَانَ، لَمْ تُعْطَهَا أُمَّةٌ قَبْلَهُمْ: خُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ، وَتَسْتَغْفِرُ لَهُمُ الْمَلَائِكَةُ حَتَّى يُفْطِرُوا، وَيُزَيِّنُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ كُلَّ يَوْمٍ جَنَّتَهُ، ثُمَّ يَقُولُ: يُوشِكُ عِبَادِي الصَّالِحُونَ أَنْ يُلْقُوا عَنْهُمُ الْمَئُونَةَ وَالْأَذَى وَيَصِيرُوا إِلَيْكِ، وَيُصَفَّدُ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ، فَلَا يَخْلُصُوا فِيهِ إِلَى مَا كَانُوا يَخْلُصُونَ إِلَيْهِ فِي غَيْرِهِ، وَيُغْفَرُ لَهُمْ فِي آخِرِ لَيْلَةٍ " قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَهِيَ لَيْلَةُ الْقَدْرِ؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنَّ الْعَامِلَ إِنَّمَا يُوَفَّى أَجْرَهُ إِذَا قَضَى عَمَلَهُ
‘আমার উম্মতকে রমজানে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়েছে, যা আগের কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি-
১. রোজা পালনকারীর মুখের না খাওয়াজনিত গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের সুঘ্রাণ থেকেও উত্তম।
২. ইফতারের আগ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ রোজা পালনকারীর জন্য মাগফেরাতের দোয়া করতে থাকে।
৩. আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন তাঁর জান্নাতকে সুসজ্জিত করে বলেন, আমার নেককার বান্দাগণ কষ্ট স্বীকার করে অতিশীঘ্রই তোমাদের কাছে আসছে।
৪. দুষ্ট প্রকৃতির শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, ফলে তারা অন্য মাসের ন্যায় এ মাসে মানুষকে গোমরাহীর পথে নিতে সক্ষম হয় না।
৫. রমজানের শেষ রাতে রোজা পালনকারীদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়। বলা হলো- হে আল্লাহর রাসুল! এ ক্ষমা কি কদরের রাতে করা হয়? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘না’, বরং কোনো শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক তখনই দেওয়া হয়, যখন সে কাজ শেষ করে।’ (মুসনাদে আহমাদ)
এমএমএস/এমএস