জিকিরের মজলিসে বসার মর্যাদা ও উপকারিতা
জিকির হলো আল্লাহর স্মরণ। দুনিয়াতে জিকিরের মজলিসের গুরুত্ব ও মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি। কোনো ব্যক্তি যদি জিকিরের উদ্দেশ্য ছাড়াও ওই মজলিসে বসে তবে আল্লাহ তাআলা তাকেও ক্ষমা করে দেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলার স্মরণে বসা জিকিরের মজলিসে আসমান থেকে নাজিল হতে থাকে অবিরত রহমত।
জিকিরের মজলিস খুঁজে বের করে তাদের প্রতি রহমতের ছায়াদানে নিযুক্ত আছে একদল ফেরেশতা। যারা সারা দুনিয়ায় জিকিরের মজলিস অনুসন্ধান করতে ঘুরে বেড়ায়। যখন আল্লাহকে স্মরণকারী কোনো মজলিস তারা পেয়ে যান আসমান জমিন পরিধি নিয়ে সে মজলিসকে তারা ঘিরে রাখেন।
জিকিরের মজলিস সম্পর্কিত দীর্ঘ এক হাদিসে ওঠে এসেছে এসব বর্ণনা। যা মুমিন মুসলমানের হৃদয়কে জিকির তথা আল্লাহর স্মরণে বেশি আগ্রহী করে তুলবে। হাদিসের চমৎকার বর্ণনাটি তুলে ধরা হলো-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর একদল ফেরেশতা রয়েছেন, যাঁরা আল্লাহর স্মরণে মগ্ন লোকেদের খুঁজে বের করতে (সারা দুনিয়া) পরিভ্রমণ করে বেড়ান। যখন তাঁরা কোথাও আল্লাহর জিকিরে মগ্ন লোকেদের দেখতে পান, তখন ফেরেশতারা পরস্পরকে ডেকে বলেন-
‘তোমরা আপন আপন কাজ করার জন্য এগিয়ে এসো। তখন তারা তাদের ডানাগুলো দিয়ে নিকটবর্তী আকাশ পর্যন্ত সেই লোকদের ঢেকে দেন।’
তখন তাঁদের প্রতিপালক তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন যদিও ফেরেশতাদের চেয়ে তিনিই অধিক জানেন-
مَا يَقُوْلُ عِبَادِيْ؟
‘আমার বান্দারা কি বলছে?’
তখন তাঁরা (ফেরেশতারা) বলেন- তারা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, আপনার শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিচ্ছে। আপনার গুণগান করছে এবং আপনার মহত্ত্ব প্রকাশ করছে।
তখন তিনি (আল্লাহ) জিজ্ঞাসা করেন-
هَلْ رَأَوْنِي؟
‘তারা কি আমাকে দেখেছে?
তখন তাঁরা (ফেরেশতারা) বলেন- ‘হে আমাদের রব! আপনার শপথ! তারা আপনাকে দেখেনি।
তিনি বলেন-
وَكَيْفَ لَوْ رَأَوْنِي؟
‘আচ্ছা, যদি তারা আমাকে দেখতো তাহলে কী করতো?
তাঁরা (ফেরেশতারা) বলেন-
‘যদি তারা আপনাকে দেখতো, তবে তারা আরও অধিক পরিমাণে আপনার ইবাদত করতো, আরো অধিক আপনার মাহাত্ম্য ঘোষণা করতো, আরো অধিক পরিমাণে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করতো।’
বর্ণনাকারী বলেন, ‘আল্লাহ বলেন-
فَمَا يَسْأَلُونِيْ؟
‘তারা আমার কাছে কী চায়?
ফেরেশতারা বলেন-
তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়।
তিনি জিজ্ঞাসা করবেন-
وَهَلْ رَأَوْهَا
‘তারা কি জান্নাত দেখেছে?’
ফেরেশতারা বলেন-
‘না’, আপনার সত্তার কসম! হে আমাদের রব! তারা তা দেখেনি।’
তিনি (আল্লাহ) জিজ্ঞাসা করেন-
فَكَيْفَ لَوْ أَنَّهُمْ رَأَوْهَا
‘যদি তারা দেখতো তবে তারা কী করতো?’
তাঁরা (ফেরেশতা) বলেন-
‘যদি তারা তা (জান্নাত) দেখতো তাহলে জান্নাতের জন্য আরো অধিক লোভ করত, আরো বেশি কামনা করতো এবং জান্নাতের প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট হতো।’
তখন আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞাসা করেন-
فَمِمَّ يَتَعَوَّذُونَ
‘তারা কী থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায়?’
ফেরেশতারা বলেন-
‘জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চায়।’
আল্লাহ জিজ্ঞাসা করেন-
وَهَلْ رَأَوْهَا
‘তারা কি জাহান্নাম দেখেছে?’
তাঁরা জবাব দেন-
‘আল্লাহর কসম! হে আমাদের প্রতিপালক! তারা জাহান্নাম দেখেনি।
তিনি জিজ্ঞাসা করেন-
فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْهَا
‘যদি তারা তা দেখতো তখন তাদের কী অবস্থা হতো?
তাঁরা বলেন-
যদি তারা তা (জাহান্নাম) দেখতো তাহলে তারা তা থেকে দ্রুত পালিয়ে যেতো এবং একে সবচেয়ে বেশি ভয় করতো।
তখন আল্লাহ বলেন-
فَأُشْهِدُكُمْ أَنِّيْ قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ
‘আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম।’
তখন ফেরেশতাদের একজন বলেন, তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি আছে, যে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সে কোনো প্রয়োজনে এসেছে। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা এমন উপবেশনকারী; যাদের মজলিসে (কোনো) উপবেশনকারীই বিমুখ হয় না।’ (বুখারি ৬৪০৮)
উল্লেখিত হাদিসটিতে জিকিরকারী ও জিকেরর মজলিসের ফজিলত ও মর্যাদা তুলে ধরা হয়েছে। হাদিসে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যারা জিকেরের উদ্দেশ্য ছাড়া কোনো প্রয়োজনে এসে ওই জিকিরের মজলিসে উপস্থিত হয়, তাদের জন্য ক্ষমা অবধারিত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জিকির তথা তার স্মরণে মগ্ন থাকার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ শান-মান-গুণ ও মহত্ব বর্ণনার মজলিসের আয়োজন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর বিধানগুলো মানুষকে জানিয়ে দেওয়ার মজলিসের আয়োজন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম