ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

দরুদের ফজিলত পাওয়ার দিন জুমা

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:৪২ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমার দিন আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়ো, কেননা তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়। আর দরুদ পড়লে মহান আল্লাহ বান্দার প্রতি ১০টি রহমত নাজিল করেন। এ দিন বিকেল বেলা দরুদ পড়লে ৮০ বছরের গুনাহও ক্ষমা হয়। জুমার দিনের দরুদ পড়ায় রয়েছে বিশেষ ফজিলত। এ দিনের দরুদ পড়ার বিশেষ ফজিলতগুলো কী?

 দোয়া কবুলের দিন জুমা

জুমা দিনের ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো এ দিনে এমন একটি সময় রয়েছে যখন দোয়া করলে তা কবুলের আশা করা যায়। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-

হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিনের যে মুহুর্তে (দোয়া কুবুল হওয়ার) আশা করা যায় তা আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে তালাশ করো।’ (তিরমিজি, মুসলিম, মিশকাত, তালিকুর রাগিব)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে, অবশ্যই আল্লাহ তাঁকে তা দান করবেন। (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সে মহামূল্যবান সময় কখন?

জুমার দিনের দোয়া কবুল হওয়ার সময় এ সম্পর্কে ৪৫টা মতামত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। এ সময়টিতেদোয়া করলে তা কবুল হয়। যা হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। আর সে সময়টি হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা, তিরমিজি)

দরুদের ফজিলত পাওয়ার দিন জুমা

১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‌জুমার দিন আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠাও। এ দিন দরুদ পাঠের সময় ফেরেশতা উপস্থিত হন এবং এ দরুদ আমার সমীপে পেশ করা হয়।' (ইবনে মাজাহ)

. হজরত আওস ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের সব দিন অপেক্ষা জুমার দিনটিই হলো শ্রেষ্ঠ। এদিন হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এবং এ দিনেই বিশ্ব ধ্বংসের জন্য শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে এবং এ দিনেই পুনর্জীবিত করার জন্য দ্বিতীয়বার ফুঁক দেওয়া হবে। এ দিন তোমরা আমার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ কর। তোমাদের দরুদ নিশ্চয়ই আমার কাছে উপস্থিত করা হবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দরুদ আপনার কাছে কেমন করে উপস্থিত করা হবে অথচ আপনি তখন মাটি হয়ে যাবেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, ‌আল্লাহ তাআলা নবিদের শরীর জমিনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, বাইহাকি)

৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিন (শুক্রবার) এবং জুমার রাতে (বৃহস্পতিবার রাতে) তাঁর জন্য প্রচুর পরিমাণে দরুদ পাঠ কর। যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার প্রতি ১০টি রহমত নাজিল করন।’ (সহিহ জামে) সুতরাং জুমার দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দরুদ পড়ুন-

اَللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّد

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রহমত ও শান্তি দান করুন।’

. হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার ওপর জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ আমার উম্মতের দরুদ জুমার দিন আমার কাছে পৌঁছানো হয়। যে ব্যক্তি আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠাবে সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটতম হবে।’ (তারগিব)

৫. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ জিবরিল আলাইহিস সালাম এইমাত্র আল্লাহ তাআলার বাণী নিয়ে হাজির হলেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

পৃথিবীতে যখন কোনো মুসলমান আপনার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে আমি তার ওপর দশবার রহমত নাজিল করি এবং আমার সব ফেরেশতা তার জন্য দশবার ইস্তেগফার করে।’ (তারগিব)

৬. অন্য রেওয়াতে নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর নিজ স্থান থেকে ওঠার আগে ৮০ বার এই দরুদ শরিফ পাঠ করে-

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ وَعَلَى آلِهِ وَسَلِّم تَسْلِيْمَا

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আ’লা আলিহি ওয়া সাল্লিমু তাসলিমা।’

তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হবে এবং ৮০ বছর ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে। সুবহানাল্লাহ! (আফজালুস সালাওয়াত)

. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার ওপর দরুদ পাঠ করা পুলসিরাত পার হওয়ার সময় আলো হবে। যে ব্যক্তি জুমার দিন ৮০ বার দরুদ পড়ে তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’

৮. হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর জুমার দিন ১০০ বার দরুদ পাঠ করে, সে কেয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায় নূরের জ্যোতি দেখে লোকেরা বলাবলি করতে থাকবে এই ব্যক্তি কী আমল করেছিল!’ (কানজুল উম্মাল)

সুরা কাহফ তেলাওয়াতের আমল

১. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে তার জন্য এক জুমআ থেকে অপর (পরবর্তী) জুমআ পর্যন্ত নূর হবে।

. হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সর্বপ্রকার ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয় তবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও মুক্ত থাকবে।

৩. অন্য রেওয়ায়েতে আছে এক জুমআ থেকে অপর জুমআ পর্যন্ত তার সব গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। তবে উল্লিখিত গোনাহ মাফ হওয়ার দ্বারা সগিরা গুনাহ উদ্দেশ্য। কারণ ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্য হচ্ছে যে, কবিরা গোনাহ তাওবা করা ছাড়া ক্ষমা হয় না।

তবে যদি কেউ পুরো সুরা তেলাওয়াত করতে না পারে তবে ন্যূনতম সুরাটির প্রথম ও শেষ ১০ আয়াত তেলাওয়াত করায়ও রয়েছে এ সব বিশেষ ফজিলত।

এমএমএস/এএসএম

আরও পড়ুন