ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

জুমার প্রথম খুতবা: সাবাহাদের কাছে নবিজির ভালোবাসা

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০:৫৮ এএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০২২

আজ শুক্রবার। জুমার দিন। ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ইংরেজি, ০৮ পৌষ ১৪২৯ বাংলা, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৪ হিজরি। আজ জমাদিউল আউয়াল মাসের শেষ জুমা। আজকের জুমার আলোচ্য বিষয়- সাবাহাদের মুখে নবিজিকে (সা.) ভালোবাসার দৃষ্টান্ত। এ বিষয়টিও কোরআন সুন্নাহর বর্ণনায় বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

আলহামদুলিল্লাহ! সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি একক, তার কোনো অংশীদার নেই। যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক। যার পরে আর কোনো নবি নেই। মহান রাব্বুল আলামিন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উম্মতের জন্য অনুগ্রহ করে পাঠিয়েছেন। মহান আল্লাহ তাআলা বিষয়টি ঘোষণা দেন এভাবে-

لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ بَعَثَ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ.

‘আল্লাহ মুমিনদের প্রতি বড় অনুগ্রহ করেছেন; তিনি তাদেরই নিজেদের মধ্য থেকে তাদের কাছে রাসুল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের সামনে আল্লাহর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করেন, তাদের পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদের কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেন, যদিও তারা এর আগে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬৪)

প্রিয় মুসল্লিগণ!

গত দুই জুমার আলোচনাও ছিল নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসা। আজকের জুমায় সাহাবারা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কেমন ভালোবাসতেন তার কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো।

হেদায়াত ও সফলতার পথ সম্পর্কে মানুষ অজ্ঞ ছিল। ছিল পথহারা, দিশেহারা। অতপর মহান রাব্বুল আলামিন হেদায়েতের বার্তা দিয়ে প্রেরণ করলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। তিনি এসে মানুষকে সত্য-মিথ্যার পথ চিনিয়েছেন। মানুষের জন্য সত্য দ্বীন নিয়ে এসেছেন। নাজাতের পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পদ্ধতি শিখিয়েছেন। এ ছিল মানুষের প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ। এই অনুগ্রহের বর্ণনা পবিত্র কোরআনে এভাবে এসেছে-

لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ بَعَثَ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ.

আল্লাহ মুমিনদের প্রতি বড় অনুগ্রহ করেছেন; তিনি তাদেরই নিজেদের মধ্য হতে তাদের কাছে রাসুল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের সামনে আল্লাহর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেন, যদিও তারা এর আগে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬৪)

প্রিয় মুসল্লিগণ!

আনুগত্যই ভালবাসার দাবি

ভালবাসার সারকথাই হচ্ছে, আমি যাকে ভালবাসি তাঁর চিন্তা-চেতনা, চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে একাত্ম থাকা। রুওয়াইম ইবনে আহমাদ আল বাগদাদি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ভালোবাসা বুঝাতে গিয়ে বলেছেন-

المحبة الموافقة في جميع الأحوال

অর্থাৎ, ভালোবাসা হল প্রেমাষ্পদের সঙ্গে সর্বাবস্থায় একাত্ম থাকা।

সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি মহব্বতের প্রকাশ হচ্ছে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর সুন্নাহর অনুসরণ করা। যদি তা অগ্রাহ্য করা হয় তাহলে মহব্বতের দাবি করা অযৈাক্তিক।

দরুদ পাঠ ভালবাসার প্রকাশ

স্বীকৃত বাস্তবতা হলো-

من أحب شيئا أكثر ذكره

অর্থাৎ, যে যাকে ভালোবাসে সে তার কথা বেশি বলে। বারবার তার আলোচনা করতে থাকে।

সুতরাং নবিপ্রেমিকের কাজই হবে তাঁর আনুগত্য, আর শ্বাস-প্রশ্বাস হবে তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ। সে যত বেশি তাঁর স্মরণ করবে ততই তার অন্তরে তাঁর প্রতি ভালোবাসার জোয়ার বইতে থাকবে। ইবনুল কায়্যিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি দরুদের সুফল বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন-

أنها سبب لدوام محبته للرسول صلى الله عليه وسلم وزيادتها وتضاعفها

অর্থাৎ, দরুদ পাঠ হলো ইশকে রাসুলের স্থায়িত্ব ও প্রবৃদ্ধির কারণ।

দরুদ পাঠের ফজিলত

তাছাড়া দরুদ পাঠ তো এমনিতেই অনেক সাওয়াব ও ফজিলতের বিষয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে মুমিনদেরকে দরুদ পাঠের আদেশ করে বলেছেন-

إِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ নবির প্রতি বিশেষ রহমত নাজিল করেন এবং তাঁর জন্য রহমতের দোয়া করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি অধিক পরিমাণে নামাজ ও সালাম পেশ কর।’ (সুরা আহযাব : ৫৬)

কোনও এক কবি বলেছেন, ‘এ অশান্তির কালে শান্তি কোথাও নেই। শান্তি তো পয়গম্বর মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্মরণে।’

সাহাবিগণের নবিপ্রেমের কিছু নমুনা

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন। তাঁরা সত্যিকারের নবিপ্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন-

১. হজরত আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহণের আগেই এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন-

ما رأيت من الناس أحدا يحب أحدا كحب أصحاب محمد صلى الله عليه وسلم محمدا

‘আমি কাউকে এতোটা ভালোবাসতে দেখিনি, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর সঙ্গীরা যতটা ভালোবাসে।’ (সীরাতে ইবনে হিশাম ২/১৭২; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/৬৫)

২. হজরত উরওয়া ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহণের আগে হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় মুশরিকদের পক্ষ হয়ে কথা বলতে এসেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর তিনি নিজ কওমের কাছে এই অনুভূতি পেশ করেছিলেন-

وَاللهِ لَقَدْ وَفَدْتُ عَلَى المُلُوكِ، وَوَفَدْتُ عَلَى قَيْصَرَ، وَكِسْرَى، وَالنّجَاشِيِّ، وَاللهِ إِنْ رَأَيْتُ مَلِكًا قَطّ يُعَظِّمُهُ أَصْحَابُهُ مَا يُعَظِّمُ أَصْحَابُ مُحَمّدٍ مُحَمّدًا، وَاللهِ إِنْ تَنَخّمَ نُخَامَةً إِلّا وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ، فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمْ ابْتَدَرُوا أَمْرَهُ، وَإِذَا تَوَضَأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ.

‘আমি অনেক রাজা বাদশাহদের কাছে প্রতিনিধি হয়ে গিয়েছি। কায়সার কিসরা ও নাজ্জাশীর কাছেও গিয়েছি। আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তার সঙ্গীরা যেভাবে ভক্তি করে সেভাবে আমি আর কাউকে দেখিনি তাদের বাদশাহকে ভক্তি করতে। আল্লাহর কসম! তিনি থুথু ফেললেই তাদের কেউ না কেউ তা হাতে নিয়ে নেয় এবং তা চেহারায় ও শরীরে মাখে। তিনি যখন তাদেরকে আদেশ করেন তখন তারা তাঁর আদেশ পালনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর যখন তিনি অজু করেন তখন তাঁর অজুতে ব্যবহৃত পানি পাওয়ার জন্য লড়াই করার উপক্রম হয়।’ (বুখারি ২৫৮১)  

৩. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-

لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَالْحَلّاقُ يَحْلِقُهُ، وَأَطَافَ بِهِ أَصْحَابُهُ، فَمَا يُرِيدُونَ أَنْ تَقَعَ شَعْرَةٌ إِلّا فِي يَدِ رَجُلٍ.

‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি, তাঁর চুল মুবারক মুণ্ডন করা হচ্ছে আর তাঁর সাহাবিরা তাঁকে ঘিরে আছে। তাঁরা চাইছিলেন তাঁর একটি চুলও যেন মাটিতে না পড়ে। বরং কারো না কারো হাতেই পড়ে।’ (মুসলিম ২৩২৫)

৪. হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু মৃত্যুশয্যায় হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলেন-

فِي أَيِّ يَوْمٍ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ؟ قَالَتْ: يَوْمَ الِاثْنَيْنِ، قَالَ: فَأَيّ يَوْمٍ هَذَا؟ قَالَتْ: يَوْمُ الِاثْنَيْنِ، قَالَ: أَرْجُو فِيمَا بَيْنِي وَبَيْنَ اللّيْلِ.

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন্ দিন ইন্তেকাল করেছেন? আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু জানালেন, সোমবার। তিনি বললেন, আজ কী বার? জবাব দিলেন, সোমবার। তখন তিনি বললেন, হায় যদি আমার মৃত্যু রাতের আগেই হতো! (বুখারি ১৩৮৭)

প্রিয় মুসল্লিগণ! দেখুন ভালোবাসার দৃষ্টান্ত। প্রতিটি আশেকে রাসুলের কামনাও এমন হওয়া উচিত। যে দিনে তাদের শ্রেষ্ঠ প্রেমাষ্পদ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যু হয়েছিল।

৫. হজরত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু মৃত্যুশয্যায় বলেছেন-

وَمَا كَانَ أَحَدٌ أَحَبّ إِلَيّ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، وَلَا أَجَلّ فِي عَيْنِي مِنْهُ، وَمَا كُنْتُ أُطِيقُ أَنْ أَمْلَأَ عَيْنَيّ مِنْهُ إِجْلَالًا لَهُ، وَلَوْ سُئِلْتُ أَنْ أَصِفَهُ مَا أَطَقْتُ؛ لِأَنِّي لَمْ أَكُنْ أَمْلَأُ عَيْنَيّ مِنْهُ

‘এই পৃথিবীতে আমার কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেয়ে অধিক প্রিয় ও মহান আর কেউ নেই। আমার হৃদয়ে তাঁর সম্মান ও মর্যাদার এ অবস্থা ছিল যে, আমি তাঁর দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারতাম না। আমাকে যদি তাঁর দেহাবয়বের বর্ণনা দিতে বলা হয়, আমি পারব না। কারণ, আমি দুচোখ ভরে তাঁকে দেখতে পারিনি।’ (মুসলিম ১৯২)

৬. হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ওহুদ যুদ্ধের সময় রাতে আমার আব্বা আমাকে ডেকে বললেন-

مَا أُرَانِي إِلّا مَقْتُولًا فِي أَوّلِ مَنْ يُقْتَلُ مِنْ أَصْحَابِ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، وَإِنِّي لاَ أَتْرُكُ بَعْدِي أَعَزّ عَلَيّ مِنْكَ، غَيْرَ نَفْسِ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ.

‘আমার প্রবল ধারণা, আমি নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গীদের মধ্যে আগেভাগেই শহীদ হবো। আর আমি তোমাকেই সবচেয়ে প্রিয় হিসেবে রেখে যাচ্ছি, তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া (কারণ, তিনিই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়)।’ (বুখারি ১৩৫১)

৭. ওহুদ যুদ্ধেরই ভয়াবহ মুহূর্তে আরেক সাহাবি হজরত আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজে ঢাল হয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর আক্রমণ প্রতিহত করছিলেন। একপর্যায়ে যখন নবিজি উঁকি দিয়ে দেখতে উদ্যত হলেন তখন আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলে উঠলেন-

يَا نَبِيّ اللهِ، بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي، لاَ تُشْرِفْ يُصِيبُكَ سَهْمٌ مِنْ سِهَامِ القَوْمِ، نَحْرِي دُونَ نَحْرِكَ.

ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমার মা-বাবা আপনার জন্য কোরবান হোক! আপনি উঁকি দেবেন না; পাছে আপনার গায়ে কোনো তীর এসে লাগে। আমার বুক আপনার জন্য উৎসর্গিত।’ (বুখারি ৩৮১১)

৮. আরেক নারী সাহাবির ঘটনা তো আরও বিস্ময়কর। ওহুদ যুদ্ধেরই ঘটনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনূ দীনারের এক নারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যার স্বামী ও ভাই ওহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। লোকেরা যখন তাকে সমবেদনা জানাতে গেল তখন তিনি জানতে চাইলেন, নবিজি কেমন আছেন? তারা বলল, ভালো আছেন আলহামদু লিল্লাহ। (তাতেও তাঁর মন শান্ত হল না। বললেন)-

أَرُونِيهِ حَتّى أَنْظُرَ إِلَيْهِ.

তবুও আমি নিজে দেখতে চাই; আমাকে দেখাও। অতপর যখন তাকে দেখানো হল তিনি বললেন-

كُلّ مُصِيبَةٍ بَعْدَكَ جَلَلٌ.

(আল্লাহর রাসুল, আপনি নিরাপদ আছেন!) আপনার (নিরাপত্তার) পরে সমস্ত বিপদ তুচ্ছ।’ (দালায়িলুন নুবুওয়াহ, বায়হাকী ৩/৩০২; সীরাতে ইবনে হিশাম ২/৯৯)

এ হলো সাহাবিদের নবিপ্রেমের দৃষ্টান্ত। নবিজির জন্য সব সাহাবা ও তাঁর উম্মতকূল আত্মহারা পাগলপারা। যে কারণে নবিজির সামান্যতম অপমানে কোনো মুসলমান সহ্য করতে পারে না। তিনি উম্মতের ভালোবাসার প্রতীক।

সাহাবায়ে কিরাম রিযওয়ানুল্লাহি তাআলা আলাইহিম আজমাঈন এ রকম আরও বহু দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তীরাও নবীপ্রেমের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছতে পারে। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সবার হৃদয় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালবাসা দিয়ে পূর্ণ করে দেন। তাঁর সুন্নাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস

আরও পড়ুন